Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বেনাপোলে জালিয়াতি চক্রের ২ সদস্য আটক

বেনাপোল অফিস : | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

আন্তর্জাতিক বেনাপোল ইমিগ্রেশন কাস্টমসে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা ভ্রমণ কর ফাঁকি ও জাল করোনা সার্টিফিকেট বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। জাল ভ্রমণ কর জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার আ. রশিদ মিয়াকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভ্রমণ কর জালিয়াতির ঘটনায় ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০/২৫ জনের নামে মামলা করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন বেনাপোল চেকপোস্টে জাল ভ্রমণ কর ও জাল করোনা সার্টিফিকেট তৈরি করতে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।

মামলার পর গত শুক্রবার রাতে এ ঘটনায় বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ গ্রীন লাইন পরিবহনের ম্যানেজার জসীম উদ্দিন ও গতকাল শনিবার সকালে একই পরিবহনের স্টাফ মোহনকে আটক করে যশোর আদালতে প্রেরণ করে। পলাতক রয়েছে মামলার অন্যান্য আসামিরা।

বেনাপোল চেকপোস্টে অবৈধভাবে গজিয়ে ওঠা কম্পিউটারের দোকান, মোবাইলের দোকান ও ফটোকপিসহ বিভিন্ন নামের এন্টারপ্রাইজের দোকানে এসব জাল ভ্রমণ কর ও জাল করোনা সার্টিফিকেট তৈরি করা হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানে জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও বরাবরই তারা ছিল নীরব। জাল ভ্রমণ কর মামলার পলাতক আসামিরা হলো- হানিফ পরিবহনের বেনাপোল শাখা অফিসের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম, দেশ ট্রাভেলস পরিবহনের ম্যানেজিং পার্টনার হাসান আলী, বড় আঁচড়া গ্রামের মিলন খান, সাদিপুর গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে ইমরান হোসেন, মমিনের ছেলে শামীম হোসেন, বেনাপোল ট্রাভেল পয়েন্টের কর্মচারী ইসমাইল হোসেন ও মনিরুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জন।

বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ জানায়, কাস্টমস কমিশনারের নির্দেশে গোপন সংবাদ পেয়ে কাস্টমস এর একটি টিম গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আন্তর্জাতিক কাস্টমস চেকপোস্ট বহির্গমন স্ক্যানিং মেশিনের সামনে ভারতগামী যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্স রিসিট অনলাইনে কিউআর কোড স্ক্যান করে যাচাইকালে বেশ ক’টি রিসিট জাল প্রমাণিত হয়। পরে কর্মকর্তারা গ্রীন লাইন পরিবহনের ১৩ জন, হানিফ পরিবহনের ৮ জন, দেশ ট্রাভেলস পরিবহনের ৭ জন যাত্রীর ট্রাভেল ট্যাক্স রিসিট পরীক্ষা করে জাল প্রমাণ পায়। গ্রীন লাইনের ১৩ যাত্রী জানান, তাদের বহনকৃত জাল ট্রাভেল ট্যাক্স রিসিটিগুলো গ্রীনলাইন পরিবহনের ম্যানেজার জসীম উদ্দিন, অফিস পিয়ন মোহন মিয়া এবং তাদের অফিস স্টাফরা তাদের কাছ থেকে ভ্রমণ করের টাকা নিয়ে প্রদান করেন। হানিফ এন্টারপ্রাইজের ৮ যাত্রী জানান, তাদের বহনকৃত জাল ট্রাভেল ট্যাক্স উক্ত পরিবহনের ম্যানেজার নজরুল, অফিস পিয়ন মিলন খান এবং তাদের স্টাফরা দিয়েছেন।

পুলিশ আটক দুজনকে জিজ্ঞসাবাদ করলে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এফ এম আতিকুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ পরস্পর যোগসাজসে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভ্রমণ কর ৫০০ টাকাসহ মোট ৭০০ টাকা যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছিল এই চক্রটি। সরকারের বিপুল অঙ্কের এই রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করলে আরো কোটি টাকার ভ্রমণ কর ফাঁকির ঘটনা ধরা পড়বে বলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মনে করেন।পুলিশ ও কাস্টমসের যৌথ অভিযানে চেকপোস্টের একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে জাল ট্রেজারি পূরণকৃত চালান ফরম ২ পাতা এবং ১টি হিটাচি ব্র্যান্ডের এ ইউ জি-২০১০ মডেলের হার্ডডিস্ক, ১টি ডব্লিউ ডি ব্লু ডেস্কটপ হার্ড ড্রাইভ, ১টি ডব্লিউ ডি গ্রীন সাটা এসএসডি, ১টি লেজার সলিড স্টেট ড্রাইভ জব্দ করা হয়। বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার আ. রশিদ মিয়া জানান, ভ্রমণ কর জালিয়াতির সাথে যারাই জড়িত তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে। পূর্বে এধরণের জালিয়াতি করে যারা ভ্রমণ কর জাল করেছেন সেসব ফাঁকিবাজদের কাছ থেকে ফাঁকি দেওয়া টাকা আদায় করা হবে। বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন ভূঁইয়া জানান, ভ্রমণ কর জাল করে রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় কাস্টমসের দেয়া মামলায় জালিয়াত চক্রের ৯ আসামিসহ অজ্ঞাত ২০/২৫ আসামিকে আটক করা হবে। ইতোমধ্যে ২ জনকে আটক করা হয়েছে। করোনা জাল সার্টিফিকেট তৈরির জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ