Inqilab Logo

সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভয়নগরে স্ত্রীসহ দু’কন্যা হত্যার আসামি কারাগারে

অভয়নগর (যশোর) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

যশোরের অভয়নগরে দুই শিশু কন্যাসহ স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় নিহত বিথির বাবা শেখ মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে অভয়নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে আটক জহিরুল ইসলাম ওরফে বাবুকে।

মামলার এজাহারে বাদী শেখ মুজিবুর রহমান উল্লেখ করেছেন, শ্বশুরের কাছে টাকা চেয়ে না পাওয়ায় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করে জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবু। গত শুক্রবার মধ্যরাতে তিনি এ হত্যা মামলা দায়ের করেন। গতকাল শনিবার সকালে নিহত সাবিনা ইয়াসমিন বীথির বাবা শেখ মুজিবর রহমান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

মামলার বাদী শেখ মুজিবুর রহমান জানান, পারিবারিকভাবে ২০১১ সালে আমার মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বীথির সঙ্গে যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের মশিউর বিশ্বাসের ছেলে জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবুর বিয়ে হয়। এরপর তাদের সংসারে দুটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে জহুরুল আমার থেকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে সে আমার মেয়ে ও নাতনিদের উপর শারীরিক নির্যাতন করত। মেয়ে ও দুই নাতির সুখের কথা চিন্তা করে ২০২১ সালের ২২ জুন এক লাখ ৬০ হাজার টাকা প্রদান করি। এরপর আরো টাকা চাইলে সাবিনা তার দুই মেয়ে সুমাইয়া আক্তার ও সাফিয়া আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাড়িতে চলে আসে। পরবর্তীতে গত শুক্রবার সকালে জামাই জহুরুল আমার বাড়িতে আসে এবং বিভিন্ন কথা বলে আমার মেয়ে ও দুই নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে আনুমানিক সাড়ে ১১টার সময় নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করে। পথিমধ্যে অভয়নগরের প্রেমবাগ ইউনিয়নের চাঁপাতলা গ্রামে নূর ইসলামের কলাগাছ বাগানের মধ্যে নিয়ে স্ত্রী ও দুই মেয়ের গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে গত শুক্রবার মধ্যরাতে আমি বাদী হয়ে জামাই জহুরুলের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। আমার মেয়ে ও দুই নাতনির হত্যাকারী জহুরুলের ফাঁসি দাবি করছি।

গতকাল শনিবার দুপুরে মহামান্য আদালতের মাধ্যমে ঘাতক জহিরুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে মহামান্য আদালতে তার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘাতক জহিরুল নিজেই এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে জানান, শ্বশুর ও স্ত্রীর উপর ক্ষুব্ধ হয়েই তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর বরাত দিয়ে এ তথ্য জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই উত্তম কুমার। এদিকে গতকাল শনিবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত দুই শিশুসহ বিথির লাশ তার বাবার বাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সেখানে জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়। ঘাতক জহিরুলের এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ জহিরুল মাদকাসক্ত ছিলো এবং এলাকায় বেপরোয়া চলাফেরা করত।


ইতিপূর্বে সে ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আমিনুর রহমান ও পল্লী চিকিৎসক রফিকুল ইসলামকে মারপিট করে আহত করে। এছাড়া প্রায়ই সে স্ত্রীর উপর নির্যাতন চালাতো। এসকল ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে জহিরুলের পিতা মশিয়ার রহমান তাকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে। বসুন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমান খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এ ব্যাপারে জহিরুলের পিতা মশিয়ার রহমানও একই কথা স্বীকার করে বলেন, গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে জহিরুলের সাথে কোন যোগাযোগ ছিলোনা। শুনেছি বাগেরহাটের রামপালে কাজ করতো আর ছুটি পেলে শ্বশুর বাড়িতে আসতো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ