Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মা মণি ধান বীজে কোটালীপাড়ার ২ হাজার কৃষকের সর্বনাশ

গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় মেসার্স মা মনি বীজ ভান্ডার কোম্পানির ধান বীজ গজায়নি। ওই কোম্পানির বোরো ধান বীজ কিনে কোটালীপাড়া উপজেলার অন্তত ২ হাজার কৃষক প্রতারিত হয়েছেন। তারা অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গোপালগঞ্জ জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসকে ম্যানেজ করে মেসার্স মা মনি বীজ ভান্ডার ওই বীজ বাজারজাত করেছে বলে খোদ কৃষি বিভাগ অভিযোগ করেছে। কোটালীপাড়া উপজেলার পীড়ারবাড়ি বাজারের ধান বীজ ব্যবসায়ী বিপুল বিশ্বাস স্থানীয়ভাবে ধান ক্রয় করে সেই ধান মেসার্স মা মনি বীজ ভান্ডার নাম দিয়ে প্যাকেট করে উপজেলার বিভিন্ন বীজ ব্যবসায়ীর কাছে সরবরাহ করেছে। উপজেলার বিভিন্ন বাজার থেকে এই বীজ কিনে বোরো ধান চাষিরা বীজ তলায় ফেলেন। বীজ তলায় এ ধান গজায়নি। এ ধান বীজ কিনে তারা  অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারিত হয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পীড়ারবাড়ি বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, বিপুল পীড়ারবাড়ি বাজার থেকে ধান ক্রয় করেন। ওই ধান নিজের দোকানে ও বাড়িতে বসে প্রকাশ্যে প্যাকেট করে। পরবর্তীতে ওই প্যাকেটকৃত ধান বাজারজাত করে। এইভাবে ধান বীজ বাজারজাত করার অপরাধে সে কয়েকবার জেল খেটেছে। জেল থেকে বেড়িয়ে পুনরায় ব্যবসা শুরু করে। সে দুই ধরনের ধান বাজারে ছেড়েছে। একটি ১০ কেজির প্যাকেট আর একটি ২ কেজির প্যাকেট। ১০ কেজির প্যাকেট ৫শ’ টাকা ও ২ কেজির প্যাকেট ৩শ’ টাকা দরে বিক্রি করছেন। কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রামের হালিম শেখ বলেন, আমি ঘাঘর বাজারের বীজ ব্যবসায়ী চক্রধর মনডলের কাছ থেকে মেসার্স মা মনি বীজ ভান্ডারের ১০ কেজির এক প্যাকেট বোরো ধান বীজ ক্রয় করে বীজতলা  করেছিলাম। কিন্তু আমার সেই ধান গজায়নি। এখন আবার বীজতলা দিতে হবে। ফলে ধান আবাদ পিছিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আমি কৃষি বিভাগের কাছে দাবি জানাচ্ছি। কোটালীপাড়া উপজেলার ঘাঘর বাজারের বীজ ব্যবসায়ী চক্রধর মন্ডল বলেন, মেসার্স মা মনি বীজ ভান্ডারের ২০ বস্তা বীজ আমি বিক্রি করেছি। এ বীজ গজায়নি বলে কৃষকরা জানিয়েছে। তাদের ক্ষতিপুরণ দিতে হচ্ছে। এতে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। ধরনের বীজ বাজারজাত করা উচিৎ নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঠ পর্যায়ের এক কৃষি অফিসার অভিযোগ করেন, গোপালগঞ্জ জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসকে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে মেসার্স মা মনি বীজ ভান্ডার ওই বীজ বাজারজাত করেছে। এ ব্যাপারে বিপুল বিশ্বাসের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বীজ উৎপাদন ও বাজারজাত করনের জন্য আমার কোম্পানির কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন রয়েছে। আমি ইতিমধ্যে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি পেয়েছি। জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসের তত্ত¡াবধানে সবধরনের প্রক্রিয়া প্রতিপালন করে আমার প্লটে ব্রিধান ২৯ জাতের ভিত্তিবীজ ও প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদন করেছি। এ বীজের মান বরিশাল বীজ প্রত্যয়ন পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করানো হয়েছে। তারপরই প্যাকেটজাত করে মার্কেটিং করেছি। কিছু বীজ গজায়নি এমন অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। আমরা এ ব্যাপারে কৃষককে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেব। তবে গোপালগঞ্জ জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসকে ম্যানেজ করে বাজার থেকে ধান কিনে প্যাকেট করে বীজ হিসেবে বাজারজাত করণের কথা তিনি অস্বীকার করেন। গোপালগঞ্জ জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ব্রক্ষ জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসকে ম্যানেজ করে এ বীজ বাজারজাত করণের কথা অস্বীকার করে বলেন, বিপুল বিশ্বাস সবধরনের প্রক্রিয়া প্রতিপালন করেই বীজ উৎপাদন করেছে। এ বীজ বাজারজাত করণের তার অনুমোদন রয়েছে। পরীক্ষাগারের পরীক্ষায়ও তার বীজ উত্তীর্ণ হয়েছে। এখন কি বীজ প্যাকেট করে তিনি মার্কেটিং  করছেন তা আমার জানা নেই। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, মা মনি বীজ ভাÐার কোম্পানির বোরো ধান বীজ পরীক্ষা করা হবে। বীজে ভেজোল প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ