Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমন আবাদ ও বৃক্ষ রোপণ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় দক্ষিণ জনপদের মানুষ

আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষা মৌসুমেও দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টির অভাবের সাথে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ওপরে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২২, ১:৫৪ পিএম

আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণের ভরা বর্ষা মৌসুমেও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতহীন দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে শরতের আকাশে গ্রীষ্মের তাপদহে জনজীবন বিপর্যস্ত। আবহাওয়ার এ বিরূপ আচরনে জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাবের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের আবাদ ও উৎপাদন নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় লক্ষ লক্ষ কৃষক। ভরা বর্ষায়ও দক্ষিণাঞ্চলের নিল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে। জুলাই মাসে বরিশালে সর্বোচ্চ স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩০.৮ ডিগ্রীর স্থলে পারদ ৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছে-পীঠে ঘোরা ফেরা করছে । গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ৩৬.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠে যাবার পরে মেÑজুন মাসেরও বিভিন্ন সময়ে তা ৩৬ ডিগ্রী ছুই ছুই করছিল। আর ভরা বর্ষা মৌসুম যুড়ে স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা না মিললেও তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ওপরে থাকায় সুস্থ জনজীবন ক্রমশ ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। ডায়রিয়া সহ বিভিন্ন রোগ ব্যাধি নিয়ন্ত্রনে আসছে না।

গত কয়েকটি মাসের মত ভড়া বর্ষার আষাঢ়Ñশ্রাবনেও স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা না মেলায় দক্ষিণাঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের চিত্র স্পষ্ট। ফসল আবাদ এবং ডায়রিয়ার বিস্তার নিয়ন্ত্রনে না আসায় জনস্বাস্থ্যেও বিরূপ প্রভাবের আশংকা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আষাঢ়Ñশ্রাবনে বৃষ্টিপাতের সংকট আমন বীজতলা সহ রোপা আমনের আবাদকে বাধাগ্রস্থ করছে। আবহাওয়া বিভাগের মতে, সদ্য সমাপ্ত জুন মাসেই বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ৪৪.৪% কম। গত জানুয়ারী থেকে জুন মাস অবধি বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমান স্বাভাবিকের নিচেই ছিল। ভরা বর্ষায় বৃষ্টির অভাবে শুধু ফসল আবাদই নয়, এবার দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে বৃক্ষ রোপনও মারাত্মক বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। অথচ গাছই উপক’ল সহ দক্ষিণাঞ্চলে ‘প্রকৃতিক ঢাল’ হিসেবে কাজ করে আসছে।
চলতি খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭ লাখ হেক্টরে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল, আমন আবাদের চুড়ান্ত প্রস্তুতির মধ্যে গত মাসে কয়েকদিন প্রবল বর্ষনের সাথে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ারে আমন বীজতলা প্লাবিত হয়। কিন্তু এরপরেই স্বাভাবিক বৃষ্টির অভাবে চরম দুঃশ্চিন্তায় কৃষকগন। আষাঢ়ের শেষ পূর্ণিমায় ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ারে গত কয়েকদিন আবার দক্ষিণাঞ্চলের সব নদÑনদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় আমন বীজতলা আরো একবার প্লাবিত হয়েছে। অথচ স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের অভাবে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল সহ এবারের বৃক্ষ রোপন নিয়ে ঝুকি ক্রমশ বাড়ছে। এবার দক্ষিনাঞ্চলে আমন উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টন চাল। আর উপক’লভাগ সহ দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিবছর কমপক্ষে ২৫ লাখ বৃক্ষ রোপন করা হয়ে থাকে। কিন্তু এবার ভরা বর্ষায় বৃষ্টির অভাব বৃক্ষ রোপনকে মারাত্মক ঝুকিতে ফেলছে। উপক’লীয় বনায়নও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
গত এপ্রিলে বরিশালে স্বাভাবিক ১৩২ মিলিমিটরের স্থলে মাত্র ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৫.৬% কম। মে মাসেও আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশালে স্বাভাবিক ২৬০ মিঃমিঃ’র স্থলে ২৪৫ থেকে ৩১০ মিঃমিঃ পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫.৬% কম । অথচ ঐ মাসেই ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে ভর করে ৭ থেকে ১১ মে পর্যন্ত কয়েকদিনের অতি বর্ষণে তরমুজ সহ বিভিন্ন রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

সদ্য সমাপ্ত জুনে ৪৬০ থেকে ৫১০ মিলি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসের মধ্যে মাসের প্রথম ১৮ দিনে মাত্র ৬০.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পরে শেষ ১২ দিনে ২শ মিঃমিঃ সহ পুরো মাসে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল ২৬৮.৫ মিলিমিটার। যা ছিল স্বাভাবিকের ৪৪.৪% কম। আর চলতি মাসে আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশাল অঞ্চলে ৪৯০ থেকে ৫৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও মাসের প্রথম ১৫ দিনে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৫৪.৪ মিলিমিটার।
আবহাওয়া বিভাগ থেকে মৌসুমী বায়ু উত্তর বঙ্গোপসাগরে অন্যত্র মাঝারী ধরনের সক্রিয় কথা জানিয়ে বরিশাল সহ দক্ষিণ উপক’লের দু এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়া সহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি /বজ্র বৃষ্টির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। শণিবার দুপুরের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় বরিশালে কোন বৃষ্টি না হলেও পটুয়াখালী ও সাগর পাড়ের কলাপাড়াতে ৩ মিলিমিটার করে বৃষ্টি হয়েছে। রোববার সকালের পরকবর্তি ৪৮ ঘন্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবনতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।

এদিকে বর্ষা মাথায় করে গত ৩১ মে স্বাভাবিকভাবেই দক্ষিণÑপশ্চিম মৌসুমী বায়ু দেশের উপক’ভাগে পৌছে দক্ষিনাঞ্চল সহ অন্যত্র বিস্তার লাভ করলেও গত মাসের বিভিন্ন সময়ে তা খুব সক্রিয় ছিলনা। ফলে দক্ষিনাঞ্চল সহ সারা দেশেই স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতে তাপমাত্রার পারদ যথেষ্ঠ ওপরে। জনজীবনে অস্বস্তির সাথে ফসল আবাদেও ঝুকি বাড়ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ