Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিয়ানীবাজার পৌরসভায় জন্ম-মৃত্যু সংশোধনে হয়রানী ঃ অভিযোগের তীর ডিডিএলজির বিরুদ্ধে

বিয়ানীবাজার (সিলেট) থেকে স্টাফ রিপোটার | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০২২, ৫:২৪ পিএম

সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার নাগরিকগণ জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে মারাত্মক হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। স্থানীয় সরকার শাখায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এই পৌরসভার কয়েকশ আবেদন। আর এতে করে নাগরিকদের সাথে পৌরসভার কর্মচারীদের প্রতিনিয়ত ঘটছে দেন দরবার। তবে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে, জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন/সংশোধনের আবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রনায়লয়ের উপ পরিচালক, সিলেট বসেই দেখভাল করেন। ওই সিনিয়র কর্মকর্তার মর্জির উপরই নির্ভর করে আবেদনকারীগণের ভাগ্য। সবকিছু ঠিঁকঠাঁক থাকার পরও ওই কর্মকর্তা একটি আবেদন অনুমোদন দিতে অনেক দিন লাগিয়ে দিচ্ছেন। আর এ জন্য জনপ্রতিনিধিদের উপর ক্ষোভ বাড়ছে ভূক্তভোগীদের। পৌরসভা সূত্র জানিয়েছে, ১৩ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫শ আবেদন। যার সব কটি’ই যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে করা হয়েছে বলে তারা জানান।

এদিকে ইউনিয়নের নাগরিকগণ এ ক্ষেত্রে ভাগ্যবান বলে জানিয়েছেন পৌরসভার কর্মকর্তাগণ। কেননা ইউনিয়নের জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন/সংশোধনের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। স্থানীয় কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মানুষকে হয়রাণী করতে চান না তাই আবেদন করার সাথে সাথেই তিনি যথাযথ পরিক্ষার মাধ্যমে অনুমোদন কিংবা বাতিল করে দেন।
এদিকে বিয়ানীবাজার পৌরসভায় জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন সংশোধন/অনুমোদনের বিষয় নিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে হয়রানীর শিকার হয়ে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের অধিনে এই বিভাগটি হওয়ায় এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ডিডিএলজিকে। আর তিনি এই দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে মানুষকে হয়রানী মধ্যেই রেখেছেন। সাবেক মেয়র আব্দুস শুকুর জানিয়েছেন, ডিডিএলজি উনার ইচ্ছা মতো কাজ করার কারণে আমার পৌরসভার নাগরিকগণ প্রতিনিয়ত হয়রানীর শিকার হয়েছেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
পৌরসভার সচিব নিকুঞ্জ ব্যানার্জি জানিয়েছেন, জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন/সংশোধনের আবেদন বিয়ানীবাজার পৌরসভা থেকে ডিডিএলজি বরাবরে অনলাইনে প্রেরণ করা হয়। আর সেখান থেকে যাচাই বাচাই করে অনলাইনে তিনি অনুমোদন দিলে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তা প্রিন্ট করে সরকারের নির্ধারিত ফি আদায় সাপেক্ষ তা যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে আবেদনকারীকে প্রদান করি। তিনি জানান, প্রতিদিনই মানুষজন এসে পৌরসভায় বিরক্তি ভাব প্রকাশ করে কর্মচারীদের প্রতি কটু কথা বলেন। কিন্তুু আমরা আবেদনকারীদের বুঝাতে চেষ্ঠা করলেও তারা তা অনেক ক্ষেত্রে বুঝতে চাচ্ছেন না। তারা এ নিয়ে দেন দরবারেও জড়াচ্ছেন।
পৌরসভার নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে ওই শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, একটি আবেদন করলে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সাথে সাথে তা অনুমোদন দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে ১ মাস অতিবাহিত হলেও তা অনুমোদন হয়ে আসেনি। এর জন্য নাগরিকগণ হয়রাণীর শিকার হচ্ছেন। সামান্য কারণে তাদের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে অনেক ভূক্তভোগী জানিয়েছেন, তারা পৌরসভা থেকে আবেদন করার পর ডিডিএলজি অফিসে গিয়ে কর্মকর্তার সাথে দেখা করে বিষয়টি জরুরী বলে তা অনুমোদনের অনুরোধ করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এক ব্যক্তি জানান, একটি আবেদন অনুমোদনের জন্য সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়ক দিয়ে বন্যার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিডিএলজি অফিসে যাই। সেখানে গিয়ে আমার বিষয়টি উনাকে অবহিত করি। কিন্তু তিনি করে দিবেন বলে আশ^াস দিলে চলে আসি। কিন্তুু কাজের কাজ কিছু হয় নি। এ রকম ৩দিন আমি তাঁর অফিসে যাই। শেষের দিন বন্যার পানিতে ট্রাক্টর উল্টে আমি মারাত্মক আহত হই।
বিয়ানীবাজার পৌরসভার নিদন পুর গ্রামের ইকবাল আহমদ জানান, তার পুত্র যুক্তরাজ্য প্রবাসী। সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকার তাকে বৈধভাবে থাকার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তুু তার পাসপোর্ট আবেদনের জন্য ইংরেজী জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন হওয়ায় পৌরসভায় গিয়ে দেখেন তাঁর পুত্রের বাংলা জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে থাকলেও ইংরেজি নাই। তাই সাথে সাথে আবেদন করেন। কিন্তু দিনের পর দিন অতিবাহিত হলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তা অনুমোদন হয়নি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালাতে নিজের পরিচয় দিয়ে এ প্রতিবেদক একটি আবেদনের বাংলা থেকে ইংরেজি জন্ম নিবন্ধন অনুমোদন করার জন্য ডিডিএলজির সরকারী নাম্বারে গত ৬ জুলাই ফোন করেন। ফোনে বিষয়টির বিস্তারিত জানিয়ে তা ওই সরকারী কর্মকর্তার হোয়াটসআপে প্রেরণ করেন। এরপর বারবার ওই কর্মকর্তাকে ফোন করে কথা বলার পরও বৃহস্পতিবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আবেদন অনুমোদন কিংবা বাতিল করেন নি।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে সিলেটের জেলা প্রশাসকের মোবাইল নাম্বারে ফোন করলে তিনি তা রিসিভ করেন নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ