Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টেকসই উন্নয়নের পথে দেশ

তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে দেশ। উন্নয়ন কর্মকা-ের গতি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ২০৩০ সালের আগেই উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ করবে বাংলাদেশ। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ঘরে পৌঁছাবে অর্থনীতি, যদিও পঞ্চবার্ষিকীতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। পাশাপাশি দারিদ্র্য ও ক্ষুধার্তের হার নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হবে দেশ। টেকসই উন্নয়নের জন্য আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ৭ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।
২০৩০ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের ঠিক করে দেয়া ১৭টি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। এই উন্নয়ন অভিযাত্রাকে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য’ (এসডিজি) হিসেবে অভিহিত করছে জাতিসংঘ।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এসডিজি অর্জনে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নেতৃত্বে ৪৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করছে। সব কর্মকা-ের সমন্বয় ও তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে।
এদিকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা মনিটরিংয়ের জন্য বাংলাদেশই প্রথম দেশ হিসেবে নিজ উদ্যোগে অনলাইন টুল তৈরি করেছে। এই টুলের মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়নের প্রতিটি কর্মকা- প্রধানমন্ত্রী সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন। এর মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে উন্নয়ন অগ্রগতি সহজে পরিবীক্ষণ করা যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই এমডিজি’র (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অধিকাংশ লক্ষ্য অর্জন করেছি। এবার এসডিজি অর্জনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি আমরা। এসডিজি’র লক্ষ্যগুলো আমাদের কাছে নতুন নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন চিন্তায় এই লক্ষ্যগুলো আগেই ছিল। তাই এসব লক্ষ্য অর্জনের পথে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। যত বাধাই আসুক, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা দুর্বার গতিতে উন্নয়ন কর্মকা- চালিয়ে যাবো। উন্নয়নের সুফল যেন প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে যায়, এটাই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত চাওয়া। আর এসডিজি’র মূল কথাও এটা।
তিনি বলেন, উন্নয়নের যে গতি আমরা আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি গতিতেই আগাতে পারবো। কারণ, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এটা বুঝতে পেরেছে, সহিংস আন্দোলন সংগ্রাম দেশের উন্নয়নের জন্য প্রতিবন্ধক। উন্নয়ন কর্মকা- অব্যাহত রাখার স্বার্থে তারা এই পথ থেকে সরে এসেছেন।
তিনটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০১৬-২০) আলোকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।
এসডিজি’র লক্ষ্যগুলো হলো: দারিদ্র্য নির্মূল, ক্ষুধামুক্তি, সুস্বাস্থ্য, মানসম্পন্ন শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা, বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, সাশ্রয়ী ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, উপযুক্ত কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্প উদ্ভাবন ও উন্নত অবকাঠামো, বৈষম্য হ্রাস, টেকসই শহর ও জনগণ, পরিমিত ভোগ, জলবায়ুবিষয়ক পদক্ষেপ, পানির নিচে প্রাণ, স্থলভাগের জীবন, শান্তি ও ন্যায়বিচার এবং লক্ষ্য অর্জনে অংশীদারিত্ব।
এসডিজি অর্জনের অগ্রগতি প্রসঙ্গে গবেষণা সংস্থা সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ইতোমধ্যেই ৮টিতে খুবই ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। এগুলো হলো: দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও পুষ্টি, শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা, পানি ও স্যানিটেশন, জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব। আর পিছিয়ে থাকা লক্ষ্যগুলো হলো: স্বাস্থ্য, অসমতা, শহর ও মানববসতি, টেকসই ভোগ ও উৎপাদন, সমুদ্র ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার, বাস্তুসংস্থান ও জীববৈচিত্র্য, সুশাসন, অবকাঠামো, সবার জন্য প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান এবং শিল্পায়ন ও উদ্ভাবন।
তবে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক জায়েদ বখত মনে করেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যে অবকাঠামো, সবার জন্য প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান এবং শিল্পায়ন ও উদ্ভাবনে অনেকটা এগিয়ে যাবে দেশ। কারণ, অবকাঠামো খাতে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের গতিও সন্তোষজনক। পাশাপাশি সারা দেশে একশ’ শিল্প জোন স্থাপনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এগুলো বাস্তবায়িত হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ঘরে পৌঁছাবে। নতুন প্রায় দেড় কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল পৌঁছে যাবে সবার ঘরে।
জানা গেছে, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে সরকার অর্থায়নকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। তাঁর শক্তিশালী কূটনৈতিক সক্ষমতার মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে চীনের ৩৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি আদায় করেছেন। পাশাপাশি জাপানের ৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের বিষয়টিতো আছেই।
এসডিজি বাস্তবায়নে যাতে অর্থের সমস্যা না হয়, সেজন্য অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ে আরও তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি রিজার্ভের অর্থ উন্নয়নে ব্যবহারেরও চিন্তা রয়েছে সরকারের। কিভাবে এই অর্থ উন্নয়নে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছে অর্থমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ নির্ধারিত সময়ের আগেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। তবে এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি সেগুলোর ওপর জোর দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসডিজি অর্জনের প্রত্যয় ব্যক্ত করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই এমডিজি’র লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছে এমন দেশের নজির পৃথিবীতে খুব কমই আছে। কিন্তু আমরা তা পেরেছি। এসডিজিতেও সফল হতে পারব আমরা। চ্যালেঞ্জ থাকলেও এটি সম্ভব হবে।



 

Show all comments
  • Athin Kumar Kundu ২৭ নভেম্বর, ২০১৬, ২:৫৯ এএম says : 0
    Go Ahead Bangladesh...........................
    Total Reply(0) Reply
  • jahir ২৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০৫ পিএম says : 0
    কেন ............ কথা বলা হচ্ছে ?
    Total Reply(0) Reply
  • Amjad ২৭ নভেম্বর, ২০১৬, ৩:৪১ পিএম says : 0
    kotha gulo pore khub valo laglo
    Total Reply(0) Reply
  • মাজহারুল ইসলাম ২৭ নভেম্বর, ২০১৬, ৩:৫৬ পিএম says : 0
    এই সফলতার ধারাবাহিকতা অব্যহত রাখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উন্নয়ন

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২
১৮ ডিসেম্বর, ২০২২
২৮ অক্টোবর, ২০২২
২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ