Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চরম অবহেলায় আমডাঙ্গা খাল

অর্ধশত কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও শুরু হয়নি কাজ

নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর (যশোর) থেকে : | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২২, ১২:০০ এএম

যশোরের দুঃখ খ্যাত ভবদহ নিম্নাঞ্চলের মানুষদের ভয়াবহ পানিবদ্ধতা থেকে রক্ষার জন্য খনন করা অভয়নগরের আমডাঙ্গা খালটি চরম অবহেলায় এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। পাউবোর উদাসীনতায় খালটি যথাসময়ে সংস্কার না হওয়ায় খেসারত দিতে হচ্ছে লাখ লাখ মানুষকে। অর্ধশত কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও খাল সংস্কারের কাজ শুরু না হওয়ায় চলতি বর্ষা মৌসুমে ভবদহ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে ফের ভয়াবহ পানিবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হবে এমনটিই আশঙ্কা ভবদহবাসীর। সেই সাথে চরম ঝুঁকির মুখে পড়তে হচ্ছে খাল পাড়ের ২৬টি পরিবারকে। খালের দুই পাড়ে ভাঙন দেখা দেয়ায় ব্লকগুলো বিলীন হয়ে খাল পাড়ের বাসিন্দাদের ভিটেবাড়িও বিলীন হতে চলেছে। গত বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের মুখে পড়ে কেউ কেউ ভিটেবাড়ি হারিয়ে রাস্তার পাশে অবস্থান নিলেও তা নিয়ে কারও মাথা ব্যাথা নেই। গুমরে কাঁদছে আরো ২৬টি পরিবার। তাদের আশঙ্কা যেকোন সময় খাল গ্রাস করতে পারে তাদের মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়। অনেকের ঘরের দেয়াল পর্যন্ত ছুয়েছে ভাঙন। এদিকে জনবল না থাকায় আমডাঙ্গা ব্রিজের ৬ ভেন্ট সøুইস গেট অচল অবস্থায় রয়েছে। দেখভাল করার কেউ নেই। তাছাড়া কপাট ও তালায় মরচে ধরে অকেজো হওয়ার পথে। যা ভবদহ অঞ্চলের মানুষের জন্য অশনি সংকেত।

জানা গেছে, অভয়নগর উপজেলার ঝিকরার বিলের রাজাপুর খাল হতে আমডাঙ্গা খালের উৎপত্তি। সেখান থেকে একেবেকে যশোর-খুলনা মহাসড়কের মহাকাল আমডাঙ্গা নামক এলাকার মধ্য দিয়ে ভৈরব নদে গিয়ে মিশেছে। সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে ভবদহের নিম্নাঞ্চলে ব্যাপক পানিবদ্ধতা দেখা দেয়। সে সময় ২০০৭ সালে মৃত প্রায় খালটিকে স্বেচ্ছায় পুণঃখনন করে পানিবদ্ধ এলাকার হাজার হাজার মানুষ। এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর-খুলনা মহাসড়কের উপর খালটিতে ৬ ভেন্ট স্লুইস গেট নির্মাণ করে এবং যশোর-খুলনা মহাসড়ক থেকে নদী পর্যন্ত খালের দুইপাড় ব্লক দিয়ে আটকে দেয়। ফলে স্বস্তি ফেরে ভাঙন কবলিত মানুষদের।

স্থানীয়রা জানায়, গতবছর জলাবদ্ধ এলাকার মানুষ খালের ভিতর স্কেভেটর দিয়ে পুনরায় খাল খনন করে। এসময় তারা অপরিকল্পিতভাবে খালের দুই পাড়ের ব্লকগুলো উঠিয়ে ফেলে। তারপর থেকে শুরু হয় ভাঙন। ওই এলাকার অনেকের বসতঘর-গোয়ালঘর, শৌচাগার ভেঙে খালের মধ্যে চলে যায় এবং খাল পাড়ে থাকা এলাকাবাসীর যাতায়াতের রাস্তাটি সম্পূর্ণ খালের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকে ঋণ করে বালির বস্তা এনে খাল পাড়ে দিয়ে নিজেদের শেষ সম্বল ঠেকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। সবকিছুই ভেঙে পড়ছে খালের মধ্যে। তারা আরও জানায়, গত বর্ষা মৌসুমে আব্দুস সালাম মোড়ল নামের এক ব্যক্তির পাকা ঘর খালে ভেঙ্গে পড়েছে। বর্তমানে সালাম মোড়ল বাড়িঘর ছেড়ে যশোর-খুলনা মহাসড়ের পাশে সওজ এর জায়গায় খুপড়ি ঘর বেঁধে তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে সালাম মোড়লের মত অনেককে ভিটে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার উপক্রম হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

সালাম মোড়ল জানান, খাল পাড়ে তার মাত্র চার শতক জমি। তিন শতকের মতো জায়গায় ছিলো তার পাকাঘর। ঘরের দুই তৃৃতীয়াংশ ভেঙ্গে পড়েছে খালে। তার শোয়ার ঘরটিও বিলীন হয়েছে। বর্তমানে উপয়ান্তর না পেয়ে মহাসড়কের পাশে কুঁড়েঘর বেঁধে কোনরকম জীবন পার করছেন। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ বা পুণর্বাসনের জোর দাবি জানিয়েছেন।

সরেজমিনে বুধবার আমডাঙ্গা খালের গেটে গিয়ে দেখা যায় ৬টি গেটই অচল অবস্থায় রয়েছে। গেট অপারেটর রাজু আহমেদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, গত ৬ মাস পাউবো আমাকে বেতন দেয় না। চাকরি স্থায়ী করার কথা বলেও পাউবো তা করেনি। তাই আমি আর দেখভাল করছিনা। কয়েকদিন আগে সুন্দলী ইউপি চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন এসে খোলার চেষ্টা করেও মরচে ধারার কারণে ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ ভাটির সময় গেট খুলে রাখা এবং জোয়ারের সময় বন্ধ রাখার কথা।

এ ব্যাপারে সুন্দলী ইউপি চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল বলেন, এলাকার বিলগুলোতে এখনো পানিতে ভরে আছে। ঘেরের পাড় না জাগায় মাছ ধরতে পারছেন না মৎস্যচাষিরা। বোরো আবাদ হয়নি প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। খালের ব্যাপারে পাউবো যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। পাউবোর উদাসীনতার কারনে আমরা বছরের পর বছর ভুগছি।

পাউবো একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রায় আট মাস আগে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের জন্য ৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তুঅজ্ঞাত কারনে খাল সংস্কারের কাজ শুরু হয়নি। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এনামুল হক বাবুল বলেন, আমরা বর্ষা মৌসুমের আগে বরাদ্দকৃত টাকায় খাল সংস্কারের জন্য একাধিকবার পাউবো কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দিলেও তারা আমাদের কথার কর্ণপাত করেন নি। বরাদ্দকৃত ৫১ কোটি টাকা কি অবস্থায় আছে, কেন কাজ শুরু হয়নি তারও স্পষ্ট কোন ব্যাখা তারা জানায়নি। পাউবোর উদাসীনতার কারনে আশির্বাদের খালটি অভিশাপে পরিণত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে পাউবো যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলামকে টানা তিনদিন অসংখ্যবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ