Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

লক্ষ্মীপুরে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট ও সর্দি-জ্বর আক্রান্ত রোগী

এস. এম. বাবুল (বাবর), লক্ষ্মীপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসাপাতালে হঠাৎ করে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। সদর হাসাপাতালটি ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও বর্তমানে এ হাসপাতাল থেকে শতশত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রতিদিন। বেড সংকটে ডাক্তার ও নার্সরা চরম হিমশিম খাচ্ছে রোগীদের সেবা দিতে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর হাসপাতালের ডা. জয়নাল আবেদীন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও গামের কারণে শিশু ও বৃদ্ধ বয়সী মানুষকে এ রোগগুলো আক্রান্ত করে বেশি।

সরেজমিনে হাসপাতালের ৩য় তলায় ‘গাইনী ও শিশু’ ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, রোগী ও স্বজনদের উপচেপড়া ভিড়। বেড সংকট থাকায় এক বেডে দুই শিশুদের গাদাগাদি অবস্থায় চিকিৎসা দেখা হচ্ছে। পা-রাখার মতো জায়গা নেই বারান্দা ও মেঝেতে।
প্রতিদিন এ হাসপাতালের আউটডোরে ৮শ’ থেকে ৯শ’ রোগী চিকিৎসা নেয়। ইনডোরে ভর্তি থাকে ২৭০ থেকে ৩শ’ রোগী। গতকাল সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়। আউটডোর থেকে ১ হাজার ১০ জন রোগী চিকিৎসা নেন। আর ইনডোরে ভর্তি ছিলেন ৩৩০জন রোগী। সর্বমোট ১ হাজার ৩৪০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেয়া হয়। এতে করে দিনদিন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
চিকিৎসা নিতে আসা কৃষক মো. শাহাবুদ্দিনের (৫৫) জানায়, তার বাড়ি সদর উপজেলার ৭নং হামছাদি ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামে। তিনি সোমবার বেলা ১১ টার দিকে কোমর ব্যথা নিয়ে হাসপাতালের পেয়িং ওয়ার্ডে ভর্তি হন। বৃষ্টিতে ভিজে গবাদিপশুর জন্য খাদ্য সংগ্রহ করতে মাঠে যান। এরপর থেকে তার পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। চিকিৎসক বলেছে ভিটামিন ও ঠান্ডার কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে।
মেডিসিন পুরুষ ওয়ার্ডে শ্বাসকষ্ট নিয়ে গতকাল দুপুরে বিজয়নগর গ্রামের মো. দুলাল হোসেন ভর্তি হন। ৪/৫ ধরে বাড়িতে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তিনি। একই ওয়ার্ডে জ¦র ও পেট ব্যথা নিয়ে দুইদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মো. দুলাল হোসেন তার বাড়ির একই উপজেলার মান্দারি ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর গ্রামে। তাকে কোনো ওষুধ হাসপাতালের বাইর থেকে কিনতে হয়নি। আগের চেয়ে একটু ভালোর দিকে।
চররুহিতা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের নজরুল সরকারের স্ত্রী শারমিন তার দেড় বছরের শিশু ছেলে আল-আমিনকে নিয়ে ৩ দিন পূর্বে হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসক বলছে তার সন্তানের রক্তশূন্যতা। একপর্যায়ে টানা ৩ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা চলার কারণে বর্তমানে অনেকটা সুস্থ আছে।
হাসপাতালের শিশু (কনসালটেন্ট) ইসলাম হাসান জানান, বেশিভাগ শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে, হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দেয়া হয়। হাসপাতাল থেকে বর্তমান সময় বেশিভাগ ওষুধ দেয়া হয়। শিশুদের এ সময় সুরক্ষিত রাখতে স্বজনদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে গোসলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে। জামাকাপড় ঘনঘন পরিবর্তন করা উচিত। তাহলে শিশুরা সুস্থ ও ভালো থাকবে।
সদর হাসপাতালের (মেডিসিন বিশেষজ্ঞ) ডা. মুহাম্মদ আব্দুলাহ্ জাহেদ খান বলেন, দৈনিক প্রায় দুই শতাধিক রোগী দেখতে হয়। আউটডোর ও ইনডোরে। বেশিরভাগ রোগী শ্বাসকষ্ট ও জ্বর-কাশি ভুগছেন। নিসন্দেহে এটি করোনা ঢেউ অথবা লক্ষণ। সবাইকে সচেতন ও মাক্স পড়তে হবে। নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ থাকতে হবে সকলকে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও আমরা বর্তমানে ৫০ শয্যা হাসপাতালের লোকবল দিয়ে হাসপাতাল চালিয়ে যাচ্ছি। চিকিৎসা ও শতকরা ৮০ ভাগ ওষুধ হাসপাতালে সাপ্লাই থাকায় দিনদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আশাকরি নতুন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি চালু হলে। তখন নতুন করে লোকবল নিয়োগ দিবে, তখন আর হিমশিম খেতে হবে না।
জেলা সিভিল সার্জন আহম্মেদ কবির বলেন, জেলার প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র হচ্ছে সদর হাসাপাতাল। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, জেলাবাসীকে সঠিক সেবা দিতে। প্রায় সময় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বহিঃবিভাগ কাউন্টার থেকে ৫ টাকার টিকেট সংগ্রহ করতে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা লাইন। অনেক সময় হাসপাতালের বাহিরেও দেখা যায় লম্বা লাইন। ডাক্তার নার্সরা ছাড়া নিরাপত্তা কর্মী না থাকায় অনেক সময় আমাদের চরম হিমশিম খেতে হয়। এ পর্যন্ত একাধিকবার লোকবল ও ডাক্তার সংকট দেখিয়ে অধিদপ্তরের চিঠি দেওয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ