Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কায়িক শ্রমে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য বঞ্চিত ৭ গ্রামের মানুষ

সেতু না থাকায় দুর্ভোগ নিত্যসঙ্গী

আতাউর রহমান, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঈশ্বরগঞ্জের রাজিবপুর ইউনিয়নের কাঁচামাটিয়া নদীতে একটি সেতুর জন্যে সাত গ্রামের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চিকিৎসা, শিক্ষা, বিদ্যুৎসহ আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ওই গ্রামের মানুষগুলো। একটি সেতুর অভাবে নিজেদের শ্রমে-ঘামে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় গ্রামের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের। উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম মুখে সবজি ভা-ার হিসেবে খ্যাত দুটি ইউনিয়ন উচাখিলা ও রাজিবপুর। নদীর কোল ঘেঁষে এ দুটি অঞ্চলের অবস্থান। এক কালের খরস্রোতা কাঁচামাটিয়া নদীর পশ্চিম পাশের জেগে ওঠা কুলিয়ারচর, মাছুয়াডাঙা (মমরেজপুর), যাদুয়ারচর, বিষ্ণুপুর, ভাটিরচর, কুডেরচর ও উজানচর এই সাতটি গ্রাম। এসব গ্রামের মানুষকে জীবিকা নির্বাহ ও খাদ্যের চাহিদা মেটাতে নির্ভর করতে হয় কৃষির ওপর। একমাত্র কৃষিই এ এলাকার মানুষের প্রধান পেশা। আর কৃষির সাথে জড়িয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করতে গিয়ে বার বার তারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন একটি সেতুর কাছে। সেতুর জন্য তারা সব সুবিধা ও সঠিক মূল্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ওই এলাকা থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনে উপজেলা সদর ঈশ্বরগঞ্জ বাজারে যাওয়া-আসা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, কৃষিজাত সবজি বিক্রয়ের জন্য সদরসহ আশপাশের উচাখিলা, চরপাড়া, রাজিবপুর, মধুপুর বাজারে যাওয়া- আসা করতে কাঁচামাটিয়া নদীর পশ্চিম পাড়ের সাতটি গ্রামের কৃষক ও সাধারণ মানুষের ওই বাঁশের সাঁকোটিই একমাত্র ভরসা। বাশের সাঁকোতে চলাচলে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ। বইপত্র নিয়ে প্রায়ই সেতুর নিচে পড়ে যায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। কাঁধে সাইকেল নিয়ে পারাপার করার সময় সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে প্রায়ই লোকজন আহত হন। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ওই বাঁশের সাকোর স্থলে একটি সেতু তৈরি করে দেয়া। সুবিধাবঞ্চিত উজানচর গ্রামের সোলেমান মিয়া জানান, যাতায়াতের দুর্ভোগের কারণে উপজেলা সদর থেকে ওই এলাকার মানুষ অনেকটা বিচ্ছিন্ন। অসুস্থ লোকজনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। ফলে হাসপাতালে নেয়ার পথে অনেক রোগী বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও শিশুর জীবন অনেক সময় বিপন্ন হয়ে পড়ে। বিষ্ণুপুর গ্রামের কৃষক মো. নুরুল আমিন জানান, কৃষিজাত সবজি যেমন আলু, শিম, মরিচ, শসা, কুমড়া, বেগুন, পটল, গাজর, টমেটো, করলাসহ নানা সবজির চাষাবাদ করেন এ অঞ্চলের অশিক্ষিত ও সুবিধাবঞ্চিত কৃষকরা। প্রচুর সবজি উৎপাদন করেও পরিবহন ও বাজারজাতকরণের জন্য তারা সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কম মূল্যে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে পাইকারদের কাছে। আর এতে কৃষকের পরিশ্রমের মুনাফা লুটে নিচ্ছে পাইকাররা। কৃষকরাই তাদের উৎপাদিত সবজি বাজারজাত করতে পারত যদি বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে একটি পাকা সেতু তৈরি করা হতো। যাদুয়ারচর গ্রামের মো. কদ্দুস মিয়া জানান, একটি সেতুর অভাবে বিদ্যুতের ছোঁয়া লাগেনি গ্রামগুলোতে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গ্রামগুলোতে গড়ে না ওঠায় শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওই এলাকার ছেলেমেয়েরা। আর যারা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করছে তাদেরও সমস্যার কোনো শেষ নেই। চলাচল করতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিন ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। রাজিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোদাব্বিরুল ইসলাম বলেন, একটি সেতুর অভাবে সাত গ্রামের মানুষকে দুর্ভোগ নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা প্রায়ই বইপত্র নিয়ে পানিতে পড়ে যায়। গ্রামের কৃষক তাদের উৎপাদিত সবজি বাজারে আনতে পারে না সেতুর অভাবে। মমরেজপুর এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ করা হলে সাত গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে। তাই দ্রুত এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ