রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
বিদেশে তৈরি গহনার প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ ও ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির কারণে কুমিল্লায় একদিকে স্বর্ণের ব্যবহার কমছে অন্যদিকে হ্রাস পাচ্ছে স্বর্ণ কারিগরের সংখ্যা। গত দশ বছরে কুমিল্লার প্রায় চার হাজার স্বর্ণ কারিগর পেশা বদল করেছেন। বর্তমানে এ পেশায় পুরনো যারা আছেন এবং নতুন করে যারা যুক্ত হচ্ছেন তারাও খুব একটা ভালো নেই। কুমিল্লার স্বর্ণ শিল্পালয় সমিতির নেতৃবৃন্দ দিন দিন কারিগর হ্রাসের সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন বর্তমান বাজারে বেতন সুযোগ-সবিধা দিয়েও শিক্ষানবিশ কারিগর পাওয়া যাচ্ছে না। কুমিল্লা নগরীর ছাতিপট্টি স্বর্ণালঙ্কার তৈরি ও বেচাকেনার অন্যতম এলাকা। এখানে স্বর্ণ ব্যবসার গোড়াপত্তন ঘটে ১৯৪৪-৪৫ সালের দিকে। এসময় উত্তমচান ক্ষেত্রী ও রামচান ক্ষেত্রী নামে দুই ব্যবসায়ী ছাতিপট্টি এলাকায় স্বর্ণ ব্যবসা শুরু করেন। ’৪৭ সালের দিকে দুই মুসিলিম ব্যবসায়ী সফর আলী ও আজম খান ছাতিপট্টি এলাকায় স্বর্ণের দোকান খুলে ব্যবসা চালু করেন। পরবর্তী সময়ে ষাটের দশকে ছাতিপট্টি এলাকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীদের হাত ধরে স্বর্ণ ব্যবসার ব্যাপক বিস্তার ঘটে। ওই সময় থেকেই কুমিল্লার কারিগরদের নিপণ হাতে তৈরি স্বর্ণালঙ্কার ক্রেতা আকর্ষণের জায়গাটি দখল করে নেয়। বেশ ভালোই চলছিল কুমিল্লার স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও কারিগরদের দিনকাল। বিয়ে-শাদি থেকে শুরু করে পারিবারিক ছোটখাটো অনুষ্ঠানে স্বর্ণের ব্যবহারও ছিল ব্যাপক। অর্ডারের উপর অর্ডার। ব্যস্ত সময় পার করত কারিগররা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে ২০০৬ সালের শেষের দিকে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির খড়গ নামে। টানা দশ বছরে দফায় দফায় বাড়তে থাকে স্বর্ণের দাম। সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লাতেও স্বর্ণ ব্যবসায় নেমে আসে মন্দাভাব। অর্ডার, বিক্রি কমে যাওয়ায় কারিগরদের কাজের চাহিদাও হ্রাস পায়। আর এমনি পরিস্থিতিতে কুমিল্লার স্বর্ণ কারিগরদের জীবন জীবিকার রঙিন দিনগুলো ফিকে হয়ে আসতে থাকে। শুরু হয় হাজারো স্বর্ণ কারিগরের পেশা বদলের হিড়িক। কুমিল্লা জুয়েলারি মালিক সমিতির খসড়া হিসেব মতে, জেলায় পাঁচ শতাধিক স্বর্ণের দোকান রয়েছে। এছাড়াও শিল্পালয় রয়েছে অন্তত দুইশ’। এসব দোকানে বর্তমানে দশ হাজারের বেশি স্বর্ণ কারিগর কাজ করছেন। গত দশ বছরে স্বর্ণের ব্যবহার কমে আসায় পেশা বদল করেছেন প্রায় চার হাজার কারিগর। তাদের কেউ চা-পানের দোকান, মোবাইল ফোনের রিচার্জ ব্যবসা, কেউ মুদি দোকানের কর্মচারীর কাজ করছেন। গ্রাম থেকে আসা কারিগরদের অনেকেই ফিরে গেছেন কৃষিকাজের পেশায়। পেশা বদলের ফলে কারিগর শূন্যতার জায়গাটি যথাযথ পূরণ হয়নি। তার কারণ হিসেবে জানা গেছে, স্বর্ণ কারিগররা সাধারণত পারিবারিক সূত্রে এ পেশায় যুক্ত হতেন। কিন্তু বর্তমানে মেশিনে তৈরি হচ্ছে স্বর্ণালঙ্কার। কারিগরদের নিপুণ হাতের ছোঁয়া পড়ছে না অলঙ্কারে। কাজের চাহিদার উপর রোজগারের বিষয়টিও নির্ভর করে। কিন্তু কাজ কম, রোজগার কম। তাই বংশ পরম্পরায় কেউ কারিগরি পেশায় আসতে চাইছেন না। কুমিল্লা নগরীর ছাতিপট্টি এলাকার রাজলক্ষ¥ী শিল্পালয়ের মালিক শিবু সাহা, স্মৃতি শিল্পালয়ের খগেশ চন্দ্র দেবনাথ ও কালার হাউজের বাদল জানান, ‘বর্তমানে স্বর্ণ কারিগরি পেশায় খুব কম লোকই যুক্ত হচ্ছেন। স্বর্ণ ব্যবসার মন্দার কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। আগে অভিজ্ঞ কারিগরের সঙ্গে বিনা বেতনে শিক্ষানবিশ কারিগর থাকত। এখন বেতন দিয়েও শিক্ষানবিশ কারিগর মিলছে না। বিশেষ করে এ পেশায় আয় কমে যাওয়ায় নতুন কারিগর আসছে না আর পুরনোদের অনেকেই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।’ বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি কুমিল্লা শাখার সভাপতি ও নগরীর আজম খান জুয়েলারির মালিক আলহাজ আলমগীর খান বলেন, ‘দফায় দফায় স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির কারণে লোকজন এখন একেবারে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে স্বর্ণালঙ্কার অর্ডার দিতে বা কিনতে আসেন না। আবার বেশিরভাগ ক্রেতারই বিদেশে তৈরি গহনার আকর্ষণ থাকায় স্থানীয় কারিগরদের তৈরি গহনার কাজ কমে যাচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে কারিগরদের আয়-রোজগারেও শিথিলতা নেমে এসেছে। অথচ আমাদের স্বর্ণ কারিগররা অলঙ্কার তৈরিতে অনেক পারদর্শী। স্থানীয়ভাবে কারিগরদের নিপণ হাতে তৈরি অলঙ্কারের প্রতি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিক্রেতাদের ভূমিকা যেমন প্রয়োজন তেমনি ক্রেতাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনই পারে স্বর্ণশিল্পী বা কারিগরদের এ পেশায় স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে যুক্ত রাখতে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।