Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তালায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা বেহাল সুপেয় পানির তীব্র সংকট

এমএম হায়দার আলী, তালা (সাতক্ষীরা) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম


পানির অপর নাম জীবন। আর সেই জীবন চলার জন্য নিজেকে সুস্থ রাখতে সুপেয় পানি এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থার ভূমিকা অপরিসীম। অথচ আধুনিক প্রযুক্তির এ যুগেও বন্যাকবলিত তালা উপজেলায় সেই নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা আজো সেই প্রাচীনকালের গহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত। যদিও এ বিষয়ে মাঝে-মধ্যে সরকারিবেসরকারিভাবে জনসচেতনতামূলক সভা, সেমিনার ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দৃশ্য চোখে পড়লেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ফলে সময়ের সাথে সাথে প্রকট আকার ধারণ করা জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ এ দুই সমস্যার কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা। সূত্রমতে, সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় শতভাগ স্যানিটেশন ব্যবস্থা অর্জিত হলেও বর্তমানে তা ভেঙে পড়েছে। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। ফলে অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ও পানিবাহিত রোগে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ ছোট-বড় ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। সুপেয় পানির ব্যবস্থা অপ্রতুল থাকায় সাধারণ টিউবওয়েলের পানি পান করে ৪ শত ৩৮ জন মরণব্যাধি আর্সেনিকে আক্রান্ত হলেও এখন তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা নাজুক ও সুপেয় পানির সংকটের কথা সত্যতা স্বীকার করেছেন তালা উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম। জানা যায়, গত ১ যুগ থেকে কপোতাক্ষ অববাহিকায় তালা উপজেলার মানুষ বন্যার শিকার হয়ে জলাবদ্ধতার সাথে একরকম যুদ্ধ করে বেঁচে থাকেন। ২০০০ সালের পর থেকে বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা এ উপজেলার স্যানিটেশন ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়ে। ২০০১ সাল থেকে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন তৈরিতে জরিপ অনুযায়ী জনসচেতনতা ও বাস্তবায়নে ২০০৩ সালে শতভাগ অর্জন করায় এক যুগান্তকারী সাফল্য। বর্তমান ১৫ বছরের ব্যবধানে সঠিক তদারকি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রচার-প্রচারণা ও লোকবল সঙ্কটে তালার স্যানিটেশন ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ২২৯টি গ্রামে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮২০ জন জনসংখ্যা ছিল। বর্তমান বেসরকারি জরিপ অনুযায়ী এর সংখ্যা ৩ লাখ ২৯ হাজার। প্রকৃতপক্ষে শুমারি হলে লোকসংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। জলাবদ্ধতার কবলে তালা উপজেলার বেশিরভাগ মানুষ বসবাস করছেন স্যাঁতস্যাতে ও নোংরা পরিবেশে। একই সাথে অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা না থাকায় কঠিন ও জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। এ উপজেলায় সরকারিভাবে ৪ হাজার ৯৬২টি নলকূপ (ডঅঝঐ) থাকলেও এর মধ্যে ২ হাজার ৭৫০টি নিরাপদ পানি ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে ঐ সমস্ত নিরাপদ পানির উৎস অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে উপজেলার প্রত্যেকটি বাসা বাড়িতে টিউবওয়েল থাকলেও ২০০৫ সালে নিরাপদ ও অনিরাপদ জরিপে লাল ও সবুজ রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। বর্তমান ঐ চিহ্নিত ব্যবস্থা না থাকায় উপজেলার ৮০ ভাগ মানুষ এখনো আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছেন। এ বিষয়ে তালা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আমিনুুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি তালা, কলারোয়া, পাইকগাছাসহ ৪টি উপজেলার দায়িত্বে থাকায় সঠিক তদারকি হয় না বলে জানান। তবে আগামী ২ মাসের মধ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী বিভাগে লোকবল নিয়োগ হলে তালার স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও সুপেয় পানির সঙ্কট লাঘবে কাজ করবেন। এ বিষয়ে তালা উপজেলা সদর হাসপাতালের ডাক্তার প্রতাপ কাশ্যপী জানিয়েছেন, অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ও সুপেয় পানির সংকট হওয়ায় আর্সেনিক, ডায়েরিয়া, কলেরা, টায়ফয়েড, চুলকানি, খোসপাচড়া, এমনকি মরণব্যাধি ক্যান্সারও হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ