পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন হঠাৎ কমে যাওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন জেলায় লোডশেডিংয়ে অসহনীয় হয়ে উঠেছে জনজীবন। অনেক জেলায় দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টাই থাকছে না বিদ্যুৎ। অঞ্চলগুলোর পাশাপাশি ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে রংপুরসহ বিভাগের ৮ জেলা। লোডশেডিংয়ের কারণে প্রচণ্ড গরমে জনজীবন এক প্রকার অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। রোদ ও ভ্যাপসা গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে রংপুর বিভাগের শত শত কারখানা, বিশেষ করে চালকলগুলোর উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। এ দিকে আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে বৈঠক সকাল ১১টার সময় অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বিদ্যুতের লোডশোডিংয়ের প্র্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা দিবেন বলে জানা গেছে।
দেশের উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে নর্দান ইলেকট্র্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার মানুষকে বিদ্যুৎসেবা দেওয়ার দায়িত্ব তাদের। উত্তরের জেলাগুলোয় গত কয়েক দিনে বিদ্যুতের লোডশেডিং তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাজশাহীর শহরের কিছু এলাকায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। পাশাপাশি ঈদের আগে জেলা শহরগুলোর বড় বড় বিপণিবিতানগুলো দিনভর খোলা থাকলেও কাক্সিক্ষত ক্রেতার দেখা মিলছে না লোডশেডিংয়ের কারণে। এ ছাড়া একই কারণে বিপাকে পড়েছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ভ্যান চালকরা। দিনের একটি বড় সময় বিদ্যুৎ না থাকায় ঠিকঠাক যানবাহনের ব্যাটারি চার্জ করতেই গলদঘর্ম হতে হচ্ছে তাদের। বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, কয়েক দিন ধরে দিনে কয়েকবার লোডশেডিং হচ্ছে জেলাগুলোতে। কোথাও কোথাও ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায় দেশজুড়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দিনে ও রাতে দফায় দফায় লোডশেডিং হচ্ছে। কবে দূর হবে লোডশেডিং সে বিষয়ে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদার বিপরীতে কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে, তাই বাধ্য হয়ে ঘন ঘন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা গতকাল বুধবার ইনকিলাবকে বলেন, আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বিদ্যুতের লোডশোডিংয়ের প্র্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা দিবেন বলে জানা গেছে। বৈঠকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন ইনকিলাবকে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে জ্বালানির বাজারে। যে এলএনজি আগে পাঁচ ডলারে পাওয়া যেত, এখন সেটির দাম ৩৫ থেকে ৪০ ডলার। জার্মানি, ইতালির মতো উন্নত রাষ্ট্রও এখন লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) আব্দুর রউফ খান ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের আজকে বিদ্যুতের চাহিদা ১৭০০ মেগাওয়াট, চাহিদা আবার ঘণ্টায় ঘণ্টায় ওঠা-নামা করে। গত তিন দিন ধরে লোডশেডিং হচ্ছে, এর আগে আমাদের চাহিদার পুরোটাই বিদ্যুৎ আমরা পেয়েছি। এই লোডশেডিংকালে আমরা কখনো ১৩০০ মেগাওয়াট, কখনো ১৪০০ বা ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপরে এটা নির্ভর করে এবং বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন হয়।
বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্যাস না পাওয়ায় দেশের বেশ কিছু গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। ফলে সারা দেশে বেড়ে গেছে লোডশেডিং।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গড়ে সরবরাহ করা হতো ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কয়েক দিন থেকে গ্যাসের সরবরাহ ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট কমেছে। এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিংয়ের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এ পরিস্থিতি খুব বেশিদিন থাকবে না আশা করি। এবছরের মধ্যেই পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ভারত থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট আমদানিকৃত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। বর্তমান সংকট আমরা সবাই মিলেই পার করব। সবার কাছে একটাই অনুরোধ, আসুন আমরা সবাই গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হই। ক্রমাগত লোডশেডিংয়ে জনজীবনে নাভিশ্বাস দেশের অন্য অঞ্চলগুলোর পাশাপাশি ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে রংপুরসহ বিভাগের ৮ জেলা। পাশাপাশি ঈদের আগে জেলা শহরগুলোর বড় বড় বিপণিবিতানগুলো দিনভর খোলা থাকলেও কাক্সিক্ষত ক্রেতার দেখা মিলছে না লোডশেডিংয়ের কারণে। একই কারণে বিপাকে পড়েছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ভ্যানচালকরা। দিনের একটি বড় সময় বিদ্যুৎ না থাকায় ঠিকঠাক যানবাহনের ব্যাটারি চার্জ করতেই গলদঘর্ম হতে হচ্ছে তাদের। বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, কয়েকদিন ধরে দিনে কয়েকবার লোডশেডিং হচ্ছে জেলাগুলোতে। কোথাও কোথাও ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে।
রংপুর বিদ্যুৎ বিভাগের নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী বলেন, রংপুর বিভাগে পিক আওয়ারে বিকাল ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নেসকো ও পল্লী বিদ্যুৎ মিলিয়ে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা আছে। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট। অন্যদিকে অফপিক আওয়ারে প্রায় ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট। নেসকোর কর্মকর্তার বলেন, ফলে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করে রেশনিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, রংপুর জেলাসহ পুরো বিভাগে গত কয়েক দিন ধরে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে রংপুর নগরেও লোডশেডিং পরিস্থিতি ভয়াবহ। শহরের চকবাজার মার্কেটের ব্যবসায়ী আশরাফ আলী বলেন, একদিকে প্রচণ্ড গরম। অন্যদিকে দফায় দফায় লোডশেডিং। সামনে ঈদ। অথচ সারাদিনে মার্কেটে তেমন কাস্টমার পাওয়া যাচ্ছে না। একই কথা বলেন, জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী হাসেন আলী বলেন, লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি প্রচণ্ড গরমের কারণে মার্কেটে বেচাকেনা নেই।
এদিকে দিনাজপুরের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দিনাজপুর জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ২০৯ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ৯৮ থেকে ১০০ মেগাওয়াটের। অথচ গত কয়েকদিন ধরেই এ অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, মৃদু তাপপ্রবাহের কারণে এ অঞ্চলে গরমের তীব্রতা বেড়েছে। এই তাপপ্রবাহ মধ্য জুলাই পর্যন্ত বিরাজ করতে পারে।
দিনাজপুর শহরের পাহাড়পুর এলাকার বাসিন্দা জেসমীন বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে দিনে কয়েকবার করে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। রাতে অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে অনেককে রাস্তায় নেমে আসতে দেখা যাচ্ছে। সার্বিক বিষয়ে জানতে নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন বলেন, দিনের বেলায় রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ৬০০ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০০ মেগাওয়াটের। সন্ধ্যার পর থেকে চাহিদা ৭০০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট। আশা করি ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। রাজশাহী শহরের বিসিক এলাকার এজি প্লাস্টিক কারখানার স্বত্বাধিকারী আব্দুল গণি জানান, গত রোববার থেকে টানা ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না তারা । এতে তার কারখানায় উৎপাদন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, তার কারখানায় প্রতিদিন এক লাখ প্লাস্টিক বোতল তৈরি হয়। লোডশেডিংয়ের কারণে ৩৬ হাজারের বেশি বোতল উৎপাদন করা যায়নি।
রাজশাহীর মতো একই পরিস্থিতি এখন প্রায় দেশজুড়েই। দেশে গত সোমবার দিনে ১২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১০ হাজার ৮৩১ মেগাওয়াট। সোমবার সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ চাহিদার সময় (৬টা থেকে ১১টা) সর্বোচ্চ ১৪ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদিত হয়েছে ১২ হাজার ২৩৬ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট। এ কারণে হচ্ছে লোডশেডিং। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে পিডিবির হিসাবের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) হিসাবের বড় তফাৎ রয়েছে। আরইবির কারিগরি প্রতিবেদন বলা হয়, ২ হাজার ১৬৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি হয়েছে তাদের। সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৩৬৪ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে তারা সরবরাহ পেয়েছে ৬ হাজার ১৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। গত বছরের ৪ জুলাই আরইবির বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল মাত্র ২৫ মেগাওয়াট। দেশে বিদ্যুতের প্রায় ৫৫ শতাংশ সরবরাহ করে আরইবি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।