দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর : আমার মা আয়েশার বিবাহ কালীন বয়স নিয়ে ইতিহাসবেত্তা ও হাদিস বিশারদদের মধ্যে মতভেদ আছে। একদল ইতিহাসবিদের অভিমত হলো, বিয়ের সময় আয়েশা (রা.)-এর বয়স ছিল ১৪ বছর। আর যখন তাঁর সঙ্গে রাসূল (সা.)-এর দৈহিক সম্পর্ক হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল ১৭/১৮ বছর। সহীহ বুখারির বর্ণনা মতে বিবাহের সময় তার বয়স ছিলো ৬/৭ বছর আর রাসূল (স.) এর সাথে দৈহিক সম্পর্ক হয় ৯/১০ বছর বয়সে। ৯ বছর বয়সের পূর্বে মা আয়েশার সাথে রাসূল (সা.) এর দৈহিক সম্পর্ক হয়েছে এমন কোনো বর্ণনা কেউ দেখাতে পারবে না। মা আয়েশাকে নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীদের বক্তব্য হলো ৯ বছরের বয়সের স্ত্রী রমণীর সাথে রাসূল (সা.) দৈহিক সম্পর্ক করেছেন বিধায় তা কি অপ্রাপ্ত বয়স্কা নারী সঙ্গম হবে না ? আসলে জ্ঞানহীন গন্ডমূর্খ বৈ কেউ এমন প্রশ্ন তুলতে পারে না। কেননা বর্তমান সময়ের আইন হলো একজন রমণী ১৮ বছর এবং একজন পুরুষ ২১ বছর বয়সে বিবাহ উপযুক্ত হয়। মনে করুন, আগামী ২০০ বছর পর আইন হলো একজন নারী ২৮ বছর এবং একজন পুরুষ ৩১ বছর বয়সে বিবাহ উপযুক্ত হয়। তখন যদি ২২২২ সালের মানুষ গুলো বর্তমান সময়ের মানুষদেরকে ’অপ্রাপ্ত বয়স্ক সঙ্গম কারী’ বলে গালি দেয় তখন কি নুপুর শর্মারা মেনে নিবেন ? কখনোই মানবেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলে অল্প বয়সেই বিয়ে হতো। সে সময় আরবের মানুষদের আয়ু ছিল কম। মানুষ ৪০-৬০ বছর বয়সেই সাধারণত মারা যেত। তাই ৯ বা ১০ বছরের মেয়েকে বিয়ে করাই ছিল সে সময়ের স্বাভাবিক ঘটনা। যদি তা না হতো, তবে আবু জাহেলরা নবী (সা.) এর সাথে মা আয়েশার বিয়ে নিয়ে কতই না কু-গল্প রটাতেন; কিন্তু আবু জাহেলরাতো কখনো রাসূল (সা.) ও মা আয়েশার বিয়ে নিয়ে কথা তোলেন নি। বর্তমান সময়ে আবু জাহেলের উত্তরসূরীরা মৌলিক জ্ঞানটুকু রাখেনা বিধায় এসব বিষয় নিয়ে কথা বলে বেড়ায়। আমরা যদি বিভিন্ন ধর্মের নিয়মানুসারে বিবাহের বয়সের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো প্রায় সব ধর্মই অল্প বয়সে বিবাহের তাগিদ দিয়েছেন। তাওরাত বা ওল্ড টেস্টামেন্টের বর্ণনা অনুসারে ইসহাক (আ.) ৪০ বছর বয়সে মাত্র তিন বছরের কন্যা শিশুকে বিয়ে করেছেন। (তাওরাত, সৃষ্টি অধ্যায়, ২৫ : ২০) ইহুদিদের ধর্মীয় বিধানশাস্ত্র বিষয়ের গ্রন্থ বর্ণনা মোতাবেক ইহুদিদের জন্য তিন বছরের মেয়েকে বিয়ে করা বৈধ। (তালমুদ উপদেশ-৫৫) নুপুর শর্মাদের হিন্দু শাস্ত্রের আলোকে বিবাহযোগ্য সময়ে (ঋতুদর্শনের আগে) পিতা যদি কন্যাকে পাত্রস্থ না করেন, তাহলে তিনি মানুষের কাছে নিন্দনীয় হন। স্বামী যদি ঋতুকালে পত্নীর সঙ্গে সঙ্গম না করেন, তবে তিনি লোকসমাজে নিন্দার ভাজন হন। (মনুসংহিতা : ৯/৪) নুপুর শর্মার নিশ্চয়ই ঋতু দর্শনের আগে বিয়ে হয়নি। যদি হতো তাহলে সে মা আয়েশাকে নিয়ে কথা তুলতো না। সুতরাং মনু শাস্ত্রের আলোকে নুপুর শর্মা নিন্দনীয় তথা নষ্টা মহিলা বলে প্রমাণিত নয় কি?
বাল্মিকী রামায়ণের তৃতীয় খণ্ডের ৪৭শ অধ্যায়ে সীতার বিবৃতি থেকে আমরা জানতে পারি যে, রাম ও সীতার বয়স কালে সীতার বয়স ছিলো ৫/৬ বছর। উপমহাদেশে ১৮৬০ সালে ‘এজ অব কন্সেন্ট’ আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স স্থির করা হয় ১০। ১৮৯২ সালে এই বয়স বেড়ে দাঁড়ায় ১২। ১৯২৯ সালে এটা আবার বেড়ে দাঁড়ায় ১৪। ১৯৫৫ সালে এটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ বছর। সে আইন এখনো বলবৎ আছে। তার মানে যুগে যুগে নারীদের গড় আয়ু ও পরিবেশ পরিস্থিতিতে বিয়ের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে তারতম্য দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে পরের আইনের আলোকে আগের আইনসিদ্ধ বিষয়কে বিচার করা অজ্ঞতা, মূর্খতা ও জ্ঞানপাপিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
উত্তর দিচ্ছেন : মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত ত্বোহা, কলাম লেখক ও প্রাবন্ধিক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।