বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সিলেট জালালাবাদ এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি ও মহানগর শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহমানের উপর তোলপাড় চলছে সিলেটের জালালাবাদ গ্যাস কার্যালয়ে। নগরীর মেন্দিবাগস্থ কার্যালয়ে এ হামলার ঘটনায় সিবিএ সভাপতি আবদুর রহমান তিন দিন চিকিৎসারত ছিলেন আইসিইউতে। তার শারীরিক অবস্থা এখনো আশংকাজনক। উন্নত চিকিৎসা নিতে শনিবার রাতে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে তাকে। এদিকে, হামলার ঘটনা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ।
ঘটনা গত ঘটেছে বুধবার সকালে। অসুস্থ সিবিএ সভাপতি আব্দুর রহমান হামলার পর জানিয়েছিলেন, গত বুধবার সকালে জালালাবাদ গ্যাসের প্রধান কার্যালয়ের নিচতলায় তার ওপর হামলা করেছেন ডিজিএম আমিরুল ইসলাম। তার দিকে তেড়ে আসেন এবং ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। এছাড়া বলেছিলেন, আমিরুল ইসলামের অনিয়ম দূর্নীতিতে বেপরোয়া। উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার মদদেই ছড়ি ঘুরাচ্ছেন জালালাবাদ গ্যাসে। এদিকে হামলার ব্যাপারে সিবিএ সভাপতি বলেন, গ্যাস অফিসের নিচতলার বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারিংস্থলে এসে দাঁড়িয়েছিলেন কয়েকজন জিএম। তারা ফিঙ্গারিং দিয়ে অফিসে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় সেখানে যান তিনিও। গিয়ে উপস্থিত থাকা জিএমদের (ব্যবস্থাপক) কাছে জানতে চান- কোম্পানির মার্জিন কেন কমানো হলো। আপনারা কেন শুনানিতে অংশ নেননি। এনিয়ে কয়েকজন জিএম’র সঙ্গে দাঁড়িয়েই কথা বলছিলেন তিনি। এমন সময় সেখানে আসেন ডিজিএম (বর্তমান অফিসার এসোসিয়েশনের সভাপতি) আমিরুল ইসলাম। এসব কথা শুনে রেগে ওঠেন তিনি। শুরু করেন গায়ে পড়ে তর্কাতর্কি। এক পর্যায়ে উত্তেজিত তাকে (আব্দুর রহমান) ধাক্কা দেন আমিরুল । এতে মাটিতে পড়েন এবং অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। এরপর তাকে সিলেটের ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পওে উন্নত চিকিৎসার কথা বলে ওই হাসপাতাল থেকে রিলিজ লেটার নিয়ে ঢাকার এ্যাপোলেতে গেছেন তিনি।
এদিকে, ডিজিএম আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘নিচতলার বায়োমেট্রিক চালু হয়েছে, সেখানে সবার নাম এন্ট্রি হয়েছে কিনা পর্যবেক্ষণ করতে সেখানে যান তিনি। গিয়ে দেখেন সিবিএ আব্দুর রহমান সকলকে নাম এন্ট্রি করতে বাধা প্রদান করছেন। জিএম স্যাররা উপরোক্ত বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে উত্তেজিত হয়ে আরও অনেক কর্মচারীকে ডেকে এনে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন চালু রাখতে বাধা দেন তিনি। একপর্যায়ে আমরা সেখান থেকে চলে আসি। ঘণ্টাখানেক পর জানতে পারি আব্দুর রহমান অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আব্দুর রহমানের সঙ্গে কোনো হাতাহাতির ঘটনা ঘটেনি বলে তার উপর আরোপিত অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।’
ঘটনার দিন বিকালে জালালাবাদ গ্যাসের এমডির কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে সিবিএ নেতারা। তারা আব্দুর রহমানের উপর হামলা ঘটনার দৃষ্টান্তমুলক বিচার দাবি করেন। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তারা গ্যাস কোম্পানির স্বার্থ বিবেচনায় কোনো আন্দোলন কর্মসূচিতে যাননি বলে জানান সিবিএ’র কর্মকর্তারা।
তবে- ঘটনার প্রেক্ষিতে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে সিসিটিভি ফুটেজ। অভিযুক্ত ডিজিএম আমিরুল ইসলাম গতকাল দুপুরে জানিয়েছেন- ঘটনার ফুটেজ নেই সিসিটিভিতে। ঘটনার আগে সিবিএ নেতারা সিসিটিভি ক্যামেরার মুখ ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে রাখেন। এ কারণে পুরো ঘটনাটি ক্যামেরায় ধরা পড়েনি।
জালালাবাদ গ্যাসের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালামের দাবি হচ্ছে- সিসিটিভি নিয়ন্ত্রণ করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তদারকিও করেন তারা। এখন তারাই বলছে; সিসিটিভির ফুটেজ নেই। পুরো ঘটনাটিকে আড়াল করতে এখন সিসিটিভির ফুটেজ গায়েবের নাটক সাজানো হচ্ছে। যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে সেটি হবে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন আব্দুস সালাম। এমনকি বিষয়টি ধামাচাপার ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে- ঘটনার পরপরই জালালাবাদ গ্যাসের এমডি শুয়েব আহমদ মতিন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন- ‘আমাদের অফিসের পুরোটাই সিসিটিভি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে ওই কমিটির সদস্যদের বলে দেয়া হয়েছে তারা যেন সিসিটিভির ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে। একইসঙ্গে কী ঘটেছিলো সেটি যেন তারা খুঁজে বের করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করেন। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সিবিএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি বিলাল আহমদ জানিয়েছেন- ‘পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের ওপর ভরসা রাখছি আমরা। ডিজিএম আমিরুল ইসলামসহ কয়েকজন জিএম ও ডিজিএম নানা ভাবে আব্দুর রহমানের মুখোমুখি রয়েছেন। উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন- জালালাবাদ গ্যাস অফিস সংলগ্ন অবৈধভাবে থাকা জমি উদ্ধার, মসজিদ স্থাপন, আনসার শেড স্থাপনসহ নানা দাবিতে সোচ্চার রয়েছে বর্তমান সিবিএ সভাপতি ও সিলেটের সিনিয়র শ্রমিকলীগ নেতা আব্দুর রহমান। তিনি গ্যাস অফিসের অবৈধ দখলে ভূমি উদ্ধারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে কোম্পানির স্বার্থে দাবি আদায়ে সোচ্চার রয়েছেন।এ কারণে তার ওপর চক্ষুশূল অনেক দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। তারা অনেকেই আব্দুর রহমানকে সহ্য করতে পারছেন না। গ্যাস অফিসের গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধেও সোচ্চার তিনি। এজন্য তাকে টার্গেট করে হামলা করা হয়েছে।’ তিনি জানান- ‘অফিসে হাজিরা দেয়ার বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারিং তো সরকারি আদেশ। সেটি ২৫শে জুন স্থাপন করা হয়েছে। আমরা অফিসের কর্মচারী হিসেবে সেটি মানতে বাধ্য। স্থানে যেহেতু বাধা দেয়নি, সেহেতু অফিস আদেশ পালনে বাধা দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এখন মার্জিন কমানোর বিষয়ে দায় এড়াতে এখন কর্মচারীদের ওপর বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারিংয়ের দায় চাপানো হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক।’ তিনি বলেন- ‘আগে পয়েন্ট ২৫ ছিল লভ্যাংশের মার্জিন। এখন সেটি পয়েন্ট ১১তে নামিয়ে আনা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ রিভিউ করলেও পেট্রোবাংলার শুনানিতে কোম্পানির কর্মকর্তারা অংশ না নেয়ার কারণ জিজ্ঞাস করায় হামলা হয়েছে সিবিএ সভাপতির উপর।
সিবিএ-এর সহসাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী চক্রবর্তী জানান, গত বুধবার সকাল ১১টায় জালালাবাদ গ্যাস অফিসের জিএম ও কর্মচারীদের শ্রমিক অংশীদারিত্ব তহবিলের লভ্যাংশের মার্জিন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনাকালে এক পর্যায়ে ডিজিএম আমিরুল ইসলাম উত্তেজিত হয়ে অকথ্য গালিগালাজ করেন শ্রমিকদের। এ সময় সিবিএ’র সভাপতি আব্দুর রহমান প্রতিবাদ জানালে মারধর করা হয় তাকে। হামলায় আহত মো. আব্দুর রহমানকে শ্রমিকরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এঘটনায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে জালালাবাদ গ্যাস শ্রমিকদের মধ্যে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।