Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রয়োজন খাল পুকুর ডোবা সংস্কারে কার্যকরী উদ্যোগ

আমিনুল হক, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম


একদিকে দিন দিন কমে যাচ্ছে কৃষি জমি ও জলাশয়। আবাদি জমি ও মৎস ক্ষেত্র জলাশয় কমে যাওয়ায় পরিবেশ হচ্ছে বিপন্ন। অথচ বিপুল পরিমাণ বিকল্প সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সেইসব সম্ভাবনা আমরা কাজে লাগাচ্ছি না। কৃষি প্রধান মীরসরাই উপজেলায় কৃষি ও মৎস সে বিশাল সম্ভাবনা পুকুর-ডোবা-জলাশয় শুধু পরিত্যক্তই রয়েছে। প্রয়োজন শুধু কার্যকর উদ্যোগ। এমনিতেই আমাদের দেশের খাল-পুকুর-ডোবাগুলো আজ দুর্দশাগ্রস্ত। খনন না হওয়া এবং দখলদারের কারণে এগুলো মরতে বসেছে। কৃষি কর্মকা-ের জন্য যা হুমকি বটে। যে খালগুলো পানিতে টইটম্বুর থাকত সেগুলো পানিশূন্য থাকে। পানির অভাবে শামুক, ঝিনুকসহ অনেক প্রাণীর আজ দেখা মেলে না। আগে বর্ষাকালে প্রচুর পানি হত, এখন পানি নেই বলে নৌকায় বেড়াতে যাওয়া, হাটবাজার-স্কুল-কলেজে যাওয়া, শাপলা-শালুক তোলা সবই আজ স্মৃতি। এখন বর্ষা শেষে খালে পানি থাকে না বলে প্রাকৃতিক মাছ আমাদের মধ্য থেকে বিদায় নিচ্ছে। বৃক্ষ আর জল কমছে বলেই আজ আবহাওয়া উষ্ণ, মানুষ গরমে অস্থির। পানি ছাড়া আমাদের বৃক্ষ-তরুলতা সতেজতা হারাবে, নিঃশেষ হবে। এক সময় জলাশয়ে শাপলা-শালুক ভরপুর থাকত। শামুক-ঝিনুক থাকত। প্রতিটি পরিবার প্রচুর হাঁস-মুরগি পালত, তাদের খাদ্যের অভাব ছিল না। দেশের গ্রামগঞ্জে শত শত খাল জালের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। আমরা যথাযথভাবে রক্ষা করতে পারিনি বলে ইতোমধ্যে অনেক খাল হারিয়ে গেছে। আরো অনেক খাল হারিয়ে যাওয়ার পথে। নদী-খালের পানিকে আটকে রেখে এই পানি দিয়ে ইরিগেশন করার জন্য অনেক স্থানে স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়েছিল। খালের গভীরতা না বাড়ানোর কারণে বর্তমানে খালে পানি থাকে না। মীরসরাই উপজেলার অনেক সেচ প্রকল্প বর্ষার পরই পানির অভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম, পানি আটকানোর স্লুইসগেটগুলো নষ্ট। মানুষ খালগুলোর গভীরতা বৃদ্ধি চায়। খালের পানি দিয়ে ইরিগেশন করতে চায়। কারণ গভীর নলকূপের পানিতে থাকে আয়রন, স্যালাইন এবং আর্সেনিক, যা জমি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। চৈত্র-বৈশাখ মাসে পানির অভাবে জমি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। খাল-ডোবায় পানি থাকে না। পানির স্তর নিচে নেমে যাওযায় অনেক স্থানে চাপকল অকেজো হয়ে যায়। গ্রামে খাল-বিল ছাড়াও প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে পুকুর-ডোবা। এগুলোও আছে সংস্কারহীন অবস্থায়। যখন পানি থাকে ছেলেমেয়েরা মনের আনন্দে এগুলোতে সাঁতরে বেড়ায়। এই পুকুর-ডোবাগুলোর গভীরতা বৃদ্ধি করতে মালিকদের উৎসাহ দিতে হবে। গ্রামের অনেক পুকুর-ডোবায় এখন আর পাড় নেই। পাড় ভেঙে নিঃশেষ হয়েছে। তাই পুকুর পাড়ে ঘন বন, বিরাট বৃক্ষ আজ দেখা মেলে না। ফলে অনেক প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশের উপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। যে পুকুরগুলো আছে তাতে অতি সহজে ছেলেমেয়েরা সাঁতার শিখে নেয়। পুকুর-ডোবার সাথে তাদের বেশ সখ্য। শহরের ছেলেমেয়েদেরও সাঁতার শেখানো আমাদের দায়িত্ব। গ্রামের সাথে তাদের সখ্য গড়তে পারলে তারা গ্রামকে নিজের বলে ভাববে। গ্রামের মনোরম পরিবেশে তারা মুগ্ধ হবে। দেশের সবুজ প্রান্তর এখনো অপূর্ব, বৃক্ষতরুলতায় ঘেরা। প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে খাল-বিল-পুকুর-ডোবার প্রয়োজন অনেক। এগুলো প্রকৃতির প্রাণ। কবি জীবনানন্দ দাশ “আবার আসিব ফিরে” কবিতায় বলেছেন- ‘আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়।’ প্রকৃতিপ্রেমী এই মানুষটি বাংলার রূপে মুগ্ধ হয়ে রূপের বর্ণনা দিয়েছেন বিভিন্নভাবে। মৃত্যুর পরে তিনি এই বাংলায় আবার ফিরে আসতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পানি না থাকলে প্রকৃতির উপর পড়বে বিরূপ প্রভাব। সবুজ শ্যামল ছায়াঘেরা প্রকৃতিক পরিবেশ হারিয়ে যাবে। গ্রামবাংলার মানুষ সহজ-সরল প্রকৃতির। বাড়িতে মেহমান এলে পুকুর থেকে অল্প সময়ে জাল দিয়ে মাছ ধরে আনত। আন্তা, কৈয়াজাল, পল ও বিভিন্ন জাল দিয়ে মাছ ধরত। তাছাড়া ভেল জালে মাছ লাফানোর দৃশ্যগুলো আজো স্মৃতিতে ভেসে বেড়ায়। এমন চিত্র আর দেখা মিলবে কিনা সন্দেহ। আর গোচারণ ভূমিসহ মাঠভর্তি থাকত প্রচুর ঘাস এ দিয়ে গরু-ছাগলের খাওয়ার ব্যবস্থা হত। তাইতো প্রতিটি পরিবারে গোয়ালভরা গরু থাকত। প্রতিটি পরিবার ২-৩ জোড়া হালের বলদ ও গাভী থাকত। ৩ মাস বা ৬ মাসের জন্য নয়, থাকত বছরের পর বছর। মীরসরাই উপজেলার প্রতিটি অঞ্চলে একসময় ব্যাপকসংখ্যক গরু ছিল। শুধু গরুই নয়, প্রায় প্রতি বাড়িতে ছাগলও থাকত। তখন গবাদিপশুবিহীন পরিবার পাওয়া দুষ্কর ছিল। তাই স্বল্প মূল্যে মাংস ও গরু-ছাগলের দুধ পাওয়া সম্ভব হত। একসময় মানুষ বাড়ির নিকটের জমিতে পেঁয়াজ-রসুন-আদা এবং টমেটো চাষ করত। খাল ও ডোবার পানিতে সেচের ব্যবস্থা হত। এখন পানির অভাবও উৎপাদন খরচ বেশি হয় বলে মানুষ পেঁয়াজ-রসুন-আদা-হলুদ-মটর-ডালসহ আরো অনেক ফসল ফলানো বন্ধ করেছে, কেউ করলেও পরিমাণে অনেক কম। মীরসরাই উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার নুরুল আলম জানান, মীরসরাই উপজেলা এক সময় প্রায় ১ হাজার হেক্টর পুকুর ডোবা খাডি গড় ছিল। এখন তা ৫৫০ হেক্টরে এসেছে। কমে আনা অবশিষ্ট পুকুর ডোবা ও যদি সংরক্ষণ করে কৃষি ও মৎস উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয় তাহলে অন্তত কয়েক শত হেক্টর জমি কৃষি আওতায় আসতে পারে। মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ জানান পরিত্যক্ত পুকুর জলাশয় সংস্কারের উদ্যোগ নিয়ে এখানকার শত শত পরিবার স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে তাই আমরা ও কৃষি সহায়ক পুকুর ডোবা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উদ্যোগ নিব শীঘ্রই। কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন আমাদের সকলেই খাল-পুকুর-ডোবা সংস্কার করে পানি ধারণ করতে হবে। সেই পানিতে থাকবে মাছ, ঘটবে শামুক-ঝিনুকের বংশ বৃদ্ধি আর এই পানি দিয়ে হবে ইরিগেশন। বাড়বে ফসল উৎপাদন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ