রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
সখিপুরের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আবার সচল হয়ে উঠছে সেই অবৈধ করাতকলগুলো। অভিযানের দিন করাতকল বন্ধ থাকে পরের দিন পুনরায় করাতকল চালু করা হয়। টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স গত বছর মার্চে এ বছর সেপ্টেম্বর এ তিন দফায় অভিযান চালিয়ে বনাঞ্চলে অবৈধভাবে স্থাপিত ১৯টি করাত কল উচ্ছেদ করেন ও দুইজনকে আটক করে। খবর পেয়ে বাকি করাতকল মালিকরা নিজেরাই তাদের করাত কলগুলো সরিয়ে নেয়। সম্প্রতি অবৈধ সেই পুরনো কলগুলো ছাড়াও আরো কয়েকটি নতুন করাতকল স্থাপন করে দিনরাত বনাঞ্চলের কাঠ অবাধে চেরাই করা হচ্ছে। এ সব অবৈধ করাতকলের ব্যাপারে কয়েকদিন পরপরই জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার পর প্রতিবেদনের তদন্তের নামে চলে মোটা অংকের ঘুষ আদায় ও প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ মাসোহারা নির্ধারণ করে আদায় করা হচ্ছে। বন আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপনের কোনো বিধান না থাকলেও বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় স্থানীয় ক্ষমতাসীন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা এসব করাতকলগুলো চালাচ্ছেন বলে স্থানীয়ভাবে অভিযোগ রয়েছে। টাঙ্গাইল বন বিভাগের চারটি রেঞ্জের উপজেলার ১৪টি বিটে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে স্থাপিত অবৈধ ৫৫টি করাতকল উচ্ছেদে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গত বছর ১ ও ১৫ মার্চ অভিযান চালানো হয়। ওই সময় বাঁশতৈল রেঞ্জে চারটি, হাতিয়া রেঞ্জে পাঁচটি ও বহেড়াতৈল রেঞ্জে নয়টিসহ ১৮টি অবৈধ করাত কল উচ্ছেদ করে অবৈধ মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় এবং এ বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ও ১ সেপ্টেম্বর টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়ে হাতিয়া বিটের গিয়াস চেয়ারম্যানের, ওয়াজেদ মার্কেটের নঈম উদ্দিনের, জিনিয়ার মজনুর, বংশিনগর বিটে মুচির পুকুর পাড় আলাউদ্দিনের, আকন্দপাড়া বাজারে কাদেরের একটি করাতকলসহ ৭টি করাতকল উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ অভিযানের সময় বনাঞ্চল থেকে সরিয়ে নেয়া ৫৫টি করাতকল ইতিমধ্যে চালু করা হয়েছে। অবৈধ করাতকল মালিকরা হাইকোর্টে রিট করেছে প্রচার করে বনাঞ্চলের ভিতরে অবাধে অবৈধ করাতকল চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে বনাঞ্চলের ভিতরে অবৈধ করাতকলে বনবিভাগের চোরাই গাছ চেড়াই করায়-একদিকে বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে অপরদিকে জলবায়ূর পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। চালু হওয়া একাধিক করাতকল মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা ও বনবিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেই কলগুলো চালু করা হয়েছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণকে পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব বুঝানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সখিপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভিতর অবৈধ করাতকলের মাধ্যমে মূল্যবান বৃক্ষ উজাড় হচ্ছে-সেই সাথে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে-সে দিকে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউই ভ্রুক্ষেপ করছে না। হতেয়া গ্রামে স্থাপিত অবৈধ করাতকল মালিক চান মিয়া জানান, ‘উচ্ছেদের আগে বন কর্মকর্তাদের প্রতি মাসে টাকা দিয়ে চালাতাম। এখন সবাই চালু করেছে বলে আমারটাও চালু করেছি।’ সখিপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভিতর অবৈধ করাতকলগুলো সখিপুর উত্তর ও দক্ষিণ অবৈধ করাতকল ২টি পৃথক মালিক সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। অবৈধ করাতকল মালিক সমিতি সখিপুর উত্তর এর সম্পাদক কামরুল বলেন, বনবিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ম্যানেজ করেই আমরা করাতকল চালিয়ে যাচ্ছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিট কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ করাতকল মালিকরা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় করাতকল চালাচ্ছে। বিভিন্ন খরচ যোগান দেয়ার জন্য প্রতি মাসে একটি বিটে হাজার হাজার টাকা খরচ হয়। তাই করাতকল মালিকরা মাসে যা দেয় তাই রেখে দেই। টাঙ্গাইল বনবিভাগের হতেয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমেন খান যোগসাজশের কথা অস্বীকার করে বলেন, অবৈধ করাতকল মালিকদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। উপজেলা আ.লীগের সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদ আ.লীগের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার জানামতে এ কাজের সঙ্গে আমাদের দলের কোনো নেতা-কর্মীই জড়িত নয়। কেউ থেকে থাকলে তার দায় আ.লীগ নিবে না। সখিপুর ইউএনও ও উপজেলা বনায়ন কমিটির সভাপতি এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এসব অবৈধ করাতকলগুলো উচ্ছেদে শিগগিরই আবার অভিযান চালানো হবে।’বিভাগীয় বন কর্মকর্তা টাঙ্গাইল (ডিএফও) মো. মাসুদ রানা বলেন, টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে-যেকোন মুহূর্তে অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।