Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গোদাগাড়ীর চাষিদের চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক

পরীক্ষামূলক সবরি কলার চাষ

মোঃ হায়দার আলী, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত গোদাগাড়ী উপজেলা মাঠে পরীক্ষামূলকভাবে সবরি কলার চাষ শুরু হয়েছে। উপজেলার পাকড়ী ইউনিয়নের মাঠসহ অন্যান্য মাঠেও স্বল্প আকারে কলার চাষ করছেন চাষিরা। ধান চাষে সেচ, শ্রমিক, পরিবহন, উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ধানের বিকল্প হিসেবে এবং অধিক লাভের আশায় কৃষকরা কলা চাষ করছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার আয়তন ১৮৪ দশমিক ৮৭ বর্গমাইল। আবাদি জমির পরিমাণ ৩৫ লাখ ৭শ হেক্টর, ব্লকের সংখ্যা ২৭টি, মৌজার সংখ্যা ৩৯৪টি, গ্রাম ৪৩০টি, লোকসংখ্যা ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫ জন (প্রায়), পুরুষ ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬ জন এবং মহিলা ১ লাখ ৭২ হাজার ৯৮৯ জন। শিক্ষার হার ৫২ দশমিক ২৭ ভাগ। কৃষক পরিবারের সংখ্যা ৭২ হাজার ২৮০ জন। এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে ১৫ হেক্টর জমিতে সবরি কলা চাষ করা হয়েছে এবং আগামীতে এ কলা চাষ অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে কৃষকরা জানিয়েছে। এক সময়ে বরেন্দ্র অঞ্চলে এক ফসলের বেশি হতো না। কারণ সেচের অভাবে কৃষকরা একবার বর্ষা মৌসুমে শুধুমাত্র ধান চাষ করতেন। যদি বৃষ্টি ভালো হতো তাহলে ফসল হতো আর যদি বৃষ্টি না হতো তাহলে সকল ফসল নষ্ট হয়ে যেত। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ডিপটিউবলের, শ্যালো টিউবলের সেচ সুবিধার কারণে এখন অনেক জমিতে তিনটি ফসল হয়। জানা গেছে, ১৯৮৫-৮৬ সালে বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ কাজের জন্য গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ শুরু হয়। সেই থেকে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে। সময়ের বিবর্তনে বর্তমানে এখানে সব ধরনের ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। কৃষকরা একের পর এক নতুন নতুন ফসলের চাষ করে বেশ সাফল্য পাচ্ছে। কলাচাষি করিম আলী বলেন, ধান চাষ করতে যে পরিমাণ পানি, সার ও কীটনাশক অনেক কম প্রয়োজন পড়ে কলা চাষে। তিনি বলেন, কলা গাছ রোপণ থেকে শুরু করে কলা হওয়া পর্যন্ত ১৫ মাস সময় লাগে। তিনি আরও বলেন, সকল খরচ মিলিয়ে বিঘাপ্রতি জমিভেদে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর একেকটি কলার কাইন বিক্রি হয় চারশত টাকারও বেশি, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে, কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতি না হলে বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হবে ইনশা আল্লাহ এবং অন্যান্য কৃষকরা গাছের অবস্থা দেখে এবং গাছে কলা ধরা দেখে আগামীতে আরও ব্যাপকভাবে এই ফসলের চাষ করার আশা ব্যক্ত করেন। সরেজমিন মাঠ পরিদর্শনে দেখা যায় কলাগাছগুলো অত্যন্ত সুন্দর ও রোগহীন। অনেক গাছে কলা ধরা শুরু হয়েছে। গোদাগাড়ীর পাকড়ী ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার জালাল উদ্দিন দেওয়ান বলেন, কলা চাষ অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে অনেক রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকা যায়। তিনি বলেন, কলাতে দুই ধরনের রোগ বেশি হয়। এর মধ্যে সিগাটোগা রোগ, যার লক্ষণ হচ্ছে কলা গাছের পাতার কিনারা পুড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গাছ মরে যায়। এই রোগ হতে গাছকে বাঁচাতে হলে প্রতিকনাজন গ্রুপের ছত্রাক নাশক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে বলে তিনি জানান। এ ছাড়াও কলার ভাইরাস জাতীয় পানামা রোগের কোনো ওষুধ নেই। ভাইরাস নির্মূল করার জন্য পূর্ব থেকে জমিতে কৃমিনাশক ভ্যাকসিন স্প্রে-করতে হবে। পানামার লক্ষণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাছের মাঝপাতা হলুদ হয়ে যায়, গাছের মাথা সরু হয়ে যায় এবং গাছ এক সময়ে মরে যায়। তিনি একই জমিতে তিনবারের বেশি কলার চাষ না করার জন্য কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানান। গোদাগাড়ীতে চলতি মৌসুমে পনের হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সবরি কলার চাষ হচ্ছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ