Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফসল বিন্যাসে গোপালগঞ্জের কৃষকের ভাগ্যবদল

গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম




এক সময় যে জমি আবাদবিহীন পড়ে থাকত, সে জমিতে এখন সবুজ আর হলুদের সমারহ। গোপালগঞ্জের বেশিরভাগ জমিতে বছরে ১ বা ২টি ফসল আবাদ হয়ে থাকে। ফসলের  বিন্যাসে এক ফসলী জমি এখন তিন ফসলী জমিতে পরিণত হয়েছে। এতে কৃষকের জমির গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। জমির মূল্য বেড়েছে। কৃষকের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। তাদের ভাগ্য বদলে গেছে। গোপালগঞ্জ বেসিনে ফসল উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তির পাইলট প্রকল্পের অক্লান্ত পরিশ্রম আর সঠিক ফসল বিন্যাসে এখন সেই সব জমি থেকে কৃষক  বছরে ৩টি ফসল ফলাচ্ছেন। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোহালা গ্রামের কৃষক আসলাম আলী বলেন, এ প্রকল্পের আওতায়  রূপা আমন মৌসুমে আমার রূপা আমন ৫৭, ৩৯ ও ৬২ জাতের ধান আবাদ করে হেক্টরে সাড়ে ৪ টন ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছি। এরপর মসুর আবাদ করব। মসুর ক্ষেত থেকে কর্তনের পর মুগের আবাদ করবো। এ প্রকল্প এসে আমাদের ৩ ফসলের আবাদ শিখিয়ে দিয়ে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কৃষক শের এ আজম খোকন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদীঘলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল বারেক চৌধূরী বলেন, আগে আমরা বোরো ধান ও পাট আবাদ করতাম।  বোরো ধান আবাদে সেচ, সার ও কীটনাশক খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে ধানের দাম কম। এ কারণে বোরো চাষ করে লাভ হচ্ছিল না। এছাড়া পাট আবাদ করার পর জাগ দিতে প্রতি বছরই পানির সমস্যা হচ্ছিল। পাট জাগ দিতেও ব্যয় বেড়ে যায়। পাটের বাজার মন্দা যাচ্ছিল। এ অবস্থায়  আমরা জমি চাষাবাদ নিয়ে লোকসানের দুঃশ্চিন্তায় ভুগছিলাম। আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিতে আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ডাল গবেষণা উপ-কেন্দ্র, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও  গোপালগঞ্জ বেসিনে ফসল উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তির পাইলট প্রকল্প ২ বছর আগে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। তাদের পরামর্শে এখন আমরা একই জমিতে মসুর-মুগডাল-রোপা আমন চাষ করছি। কোন কোন কৃষক  সরিষা-মুগডাল-রোপা আমন, ছোলা-বোনা আমন/ছোলা-পাট-রোপা আমনের আবাদ করছেন। নতুন চাষ পদ্ধতিতে আমরা অধিক ফসল ঘরে তুলে লাভের মুখ দেখছি। শুনেছি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পটি আরো কিছু বছর আমাদের সাথে কাজ করলে এলাকার কৃষি ও কৃষকের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও ফুকরা গ্রামের বাসিন্দা ড. কে.এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ প্রকল্পের বদৌলতে পশ্চাদপদ গোপালগঞ্জের এক ফসলী জমি ৩ ফসলী জমিতে পরিণত হয়েছে। কৃষকের জমির গুরুত্ব বৃদ্ধি  পেয়েছে। জমির ইজারা  বৃদ্ধি পেয়েছে। জমির মূল্য বেড়েছে। কৃষকের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। ১০ হাজার কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। গোপালগঞ্জ বেসিনে ফসল উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তির পাইলট প্রকল্পের সাইড কো অর্ডিনেটর  নিখিল রঞ্জন মন্ডল বলেন, গোপালগঞ্জে জমিতে ফসল বিন্যাস করে এক বা দো-ফসলী জমিকে তিন ফসলী জমিতে রূপান্তর করায় কৃষকের ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন এসেছে। ফসল বিন্যাসের ফলে কমেছে সেচ নির্ভরতা, বৃদ্ধি পেয়েছে ফলন। ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এ আবাদ পদ্ধতির পরিধি। সারা দেশে যেখানে ফসলের নিবিড়তা ২০১%। সেখানে কৃষিতে অধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া না থাকায় এ জেলায় ফসলের নিড়িরতা ছিলো ১৭৬%। গোপালগঞ্জের ৩৫%  থেকে ৪০% জমি উঁচু ও মাঝারি উঁচু। এসব জমিতে মসুর-সরিষা-ছোলা-শাক সবজি-গম আবাদ করা সম্ভব। আর এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী টুঙ্গিপাড়া উপজেলা এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ফলে গত ২ বছরে এ জেলায় ফসলের নিড়িরতা বেড়ে ১৮৫% এ দাঁড়িয়েছে। গোপালগঞ্জ বেসিনে ফসল উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তির পাইলট প্রকল্পের পি.আই ও গাজীপুর ডাল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আশরাফ হোসেন বলেন, জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে চাষাবাদের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বোরো আবাদে প্রচুর সেচের দরকার হয়। দিন দিন পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পানির অবচয় রোধ করে জমির উর্বর শক্তি  ঠিক রেখে পরিবেশে বান্ধব চাষাবাদের জন্য আমরা নতুন ফসল বিন্যাস করেছি। বোরা  মৌসুমে আমরা কৃষকদের দিয়ে সরিষা, মসুর, ছোলার আবাদ করিয়েছি। এরপর তারা এ জমিতে মুগডাল চাষাবাদ করবে। মুগডাল ক্ষেত থেকে ওঠার পর স্বল্প জীবনকাল বিশিষ্ট রোপা আমান ধানের চাষ করবে। এছাড়া তারা সরিষা-মুগডাল-রোপা আমন, ছোলা-বোনা আমন/ছোলা-পাট-রোপা আমনের চাষও করতে পারেন। আমাদের ফসল বিন্যাস পদ্ধতিতে একই জমিতে বছরে ৩টি ফসল ফলাতে সময় লাগছে ২শ’ ৯০ থেকে  ২৯৫ দিন। বছরে ৬৫ দিন জমি বিরাম পাচ্ছে। এ পদ্ধতিতে ৩ ফসল চাষাবাদ করে কৃষক বাড়তি ফসল ঘরে তুলে লাভবান হচ্ছেন। ডাল, তৈলবীজ, ধানসহ সব ধরনের ফসল উৎপাদন করে কৃষক স্বয়ম্ভরতা অর্জন করছেন। এতে তাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ