বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে গত ৪ অক্টোবর থেকে উপাকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারে সব ধরনের মৎস্য আহরণ সহ সারা দেশে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ থাকার পর পরই ১ নভেম্বর থেকে জাটকা ধরায় ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে। জাটকাকে পূর্ণাঙ্গ ইলিশ সম্পদে পরিনত করতে টানা ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞর উঠে যাওয়ায় শুক্রবার ভোর থেকেই জেলেরা দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক’লের সব নদ-নদীতে জাল ফেলতেও শুরু করেছেন। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে প্রতিবছর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত জাটকা আহরনে নিষেধাজ্ঞা বলবত ছিল। তবে ভরা বর্ষা মৌসুমে বিক্ষুব্ধ বঙ্গোপসাগরে গত ২০ মে থেকে শুরু হওয়া ৬৫ দিনের মৎস্য আহরনে নিষেধাজ্ঞা আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত বলবত থাকছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে জাটকা আহরনে নিষেধাজ্ঞার এসময়ে দক্ষিণাঞ্চল সহ সারাদেশে ভ্রাম্যমান আদালত এবং মৎস্য বিভাগ নানা ধরনের অভিযানের পাশাপশি নৌ বহিনী, কোষ্ট গার্ড, পুলিশ ও র্যাব সহ বিভিন্ন আইন-শৃংখলা বাহিনীও নজরদারী চালায়।
মৎস্য অধিদপ্তরের মতে গত ৮ মাসে দক্ষিণাঞ্চল ও উপক’লীয় এলাকা সহ সারা দেশে প্রায় ১২ হাজারের মত অভিযান ছাড়াও ২ হাজার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে। এসময়ে নিষিদ্ধ জাটকা আহরনের দায়ে সাড়ে ৭শ জেলে ও মৎস্যজীবীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ প্রদান করা হয়েছে। প্রায় ৮৫ লাখ টাকা জরিমানা আদায় ছাড়াও প্রায় ৩শ কোটি টাকা মূল্যের ১৮ লাখ মিটার কারেন্ট জাল এবং প্রায় ১৬ হাজার মিটার অন্যান্য নিষিদ্ধ জাল বাজেয়াপ্ত করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। প্রায় সোয় ২শ টন জাটকা সহ আরো প্রায় ৪০ টন অন্যান্য মাছ আটক করে বিভিন্ন লিল্লাহ বোর্ডিং-এ বিতরন করে মৎস্য অধিদপ্তর। অভিযানকালে জাটকা আহরনে ব্যবহৃত নৌকা সহ বিভিন্ন মৎস্য উপকরন নিলামে বিক্রী করে সরকারের আয় হয়েছে আরো প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা। অভয়াশ্রমগুলোতে জাটকা আহরনের অভিযোগে প্রায় ১৮শটি মামলাও দায়ের করেছে মৎস্য অধিদপ্তর।
দেশে আরো দুই দশক আগে কারেন্ট জাল নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হলেও এখনো সেসব জাল সহ বেহুন্দি জাল ও বেড় জালের উৎপাদন, বিপনন ও ব্যাবহার অব্যাহত রয়েছে। এর সাথে সাম্প্রতিককালে ‘চায়না দেউড়ী’ নামে এক ধরনের নিষিদ্ধ মৎস্য আহরন উপকরন দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী থেকে ইলিশ সহ বিভিন্ন মাছ ছেকে তুলছে। অথচ মৎস্য অধিদপ্তরে মতে, জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান এখন ১%-এরও বেশী। আর মৎস্য খাতে অবদান প্রায় ১২%। এমনকি সারা বিশ্বে আহরিত ইলিশের প্রায় ৬০% বাংলাদেশেই উৎপাদন ও আহরিত হচ্ছে।
দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশে ক্ষতিকর মৎস্য আহরন উপকরনের সাহায্যে যে পরিমান জাটকা আহরন হচ্ছে, তার এক-দশমাংশ রক্ষা করা গেলেও বছরে আরো অন্তত ১ লাখ টন ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব বলে মনে করেন মৎস্য বিজ্ঞানীগন। তবে নজরদারী বৃদ্ধির ফলে দেশে জাটকা’র উৎপাদন ২০১৫ সালে ৩৯ হাজার ২৬৮ কোটি থেকে ২০১৭ সালে ৪২,২৭৪ কোটিতে উন্নীত হয়। যা পরবর্তি বছরগুলোতে আনুপাতিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে ইলিশের উৎপাদনও ২০০৮Ñ০৯ সালের ২.৯৮ লাখ টন থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টনে উন্নীত হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ইলিশের সহনীয় আহরন সাড়ে ৫.৬০ লাখ টনে উন্নীত হবার আশার কথা জানিয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। যার ৬৬ ভাগই উৎপাদন হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে অন্তত ৩০% ইলিশ সারা বছরই ডিম বহন করে। তবে প্রতিদিন শ্রোতের বিপরিতে ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলা অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়াণ করে। উপক’লের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে অশি^নের বড় পূর্ণিমায় মূক্ত ভাসমান অবস্থায় ছাড়া ডিম থেকে ফুটে বের হয়ে ইলিশের লার্ভা, স্বাদু পানি ও নোনা পানির নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে বিচরন করে খাবার গ্রহন করে বড় হতে থাকে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে ৭Ñ১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়াবার পরে জাটকা হিসেব সমুদ্রে চলে গিয়ে পরিপক্কতা অর্জন করে। বঙ্গোপসাগরে ১২-১৮ মাস বিচরন করে পরিপক্ক হয়েই নিকট অতীতের জাটকা প্রজননক্ষম পূর্ণাঙ্গ ইলিশে পরিনত হয়ে আবার স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষেত্রে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।
সমুদ্রে যাবার সময় পর্যন্ত যেসব এলাকায় ইলিশ পোনা-জাটকা খাদ্য গ্রহন করে বেড়ে ওঠে, সেগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ নার্সারী ক্ষেত্র’ হিসেবে অভয়াশ্রম ঘোষনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার এলাকা, মদনপুর থেকে ভোলার চর ইলিশা হয়ে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী চর রুস্তম পর্যন্ত তেতুুলিয়া নদীর ১শ কিলোমিটার এবং শরিয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ নিম্ন পদ্মার ১২০ কিলোমিটার এবং বরিশালের হিজলা, মেহদিগঞ্জ ও সদর উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া ও মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার এলাকার ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রম হিসেব চিঞ্হিত করা হয়েছে। এছাড়া চাঁদপুরের ষাটনল থেকে ল²ীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১শ কিলোমিটার, এলাকার অভয়াশ্রমগুলোতে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পর্র্যায়ক্রমে দু মাস করে সব ধরনের মৎস্য আহরন নিষিদ্ধ ছিল।
এবারো দক্ষিনাঞ্চল সহ উপক’লের ৬টি জেলায় জাটকা আহরনে নির্ভরশীল প্রায় ৪ লাখ জেলে পরিবারকে দুই ধাপে ৪০ কেজি করে চাল বিতরন করেছে সরকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।