Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেয়ারটেকার প্রশ্নে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বাইরে এক সুতাও ছাড় হবে না : আইনমন্ত্রী

বিএনপি ছাড়া নির্বাচন কোনো গ্রহণ যোগ্যতা পাবে না : বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০২২, ১২:১১ এএম

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কীভাবে হবে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। কেয়াটেকার বা তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবি সরকারবিরোধী দলগুলোর। অন্যদিকে সরকার বলছে, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। এ বিষয়ে তারা কোনো ছাড় দেবে না। গতকাল সংসদের কেয়ারটেকার সরকার নিয়ে বিএনপি এবং সরকার দলের এমপিরা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছে।
বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্যরা বলেছেন, তাদের দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তারা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকারের দাবি জানিয়েছেন। জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কেয়ারটেকার প্রশ্নে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বাইরে এক সুতাও ছাড় হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে গতকাল তারা এ সব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রস্তাবিত বরাদ্দের ওপর আনিত ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা আলোচনা করেন। তারা নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে দাবি করেন। একইসঙ্গে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকারের দাবি জানান।
বিরোধী দলীয় সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিএনপি কি পাকিস্তানে থাকে, তাদের নির্বাচনের জন্য হাত ধরে ডেকে আনতে হবে। তাদের দাবি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আইন হয়েছে। এখন কেয়ারটেকার সরকারের দাবি করছেন। কিন্তু এ প্রশ্নে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বাইরে এক সুতাও ছাড় দেওয়া হবে না। দেশের সর্বোচ্চ আদালত কেয়ারটেকার সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ নিয়েছেন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সিইসি ও চারজন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, বিএনপি দলীয় দুইজন সংসদ সদস্য বিগত নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ তারাই ওই নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে এই সংসদে এসেছেন। তারা এই সংসদে নিয়মিত কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আমোরিকাসহ বিশ্বের কোথাও বলার সুযোগ নেই শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কিন্তু বাংলাদেশে ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে হ্যাঁ-না ভোট দেখেছি। প্রেসিডেন্ট পদে ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু কাউকে ভোট কেন্দ্রে যেতে হয়নি। বিএনপি আমলে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারির নির্বাচনের কথা সকলেই জানেন। মাগুরার উপ-নির্বাচনেও কি হয়ে তা সকলের জানা আছে। তাদের সময়ে জাস্টিস আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন আমরা দেখেছি। এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে বলে তিনি দাবি করেন।

এরআগে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই। নির্বাচনী ইনস্টিটিউশনগুলো যদি শক্তিশালী না হয়, নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি যদি জনগণের আস্থা বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়, সেই দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বিগত ১০ বছরে নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এখন নির্বাচন করে না। নির্বাচন করে স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসন ও জনপ্রশাসনের ব্যক্তিরা। সার্চ কমিটির মাধ্যমে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা তো এই গ্রহণেরই মানুষ, অন্য গ্রহ থেকে তো নিয়ে আসেননি। তাই সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।

বিএনপির এমপি হারুন বলেন, বর্তমান ইসি বলছে ইভিএম’র ভোট কক্ষে যে ডাকাত থাকে, সেটি ধরাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের যদি সদিচ্ছা না থাকে কোনোভাবেই নির্বাচন সঠিক করতে পারবেন না। আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল ইভিএম চাচ্ছে না। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ চাচ্ছে ইভিএম। প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে যখন আন্দোলন করেছেন, তখন তিনি বলেছেন আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আজকে বিএনপিকে ছাড়া কি নির্বাচন গ্রহণ যোগ্য হবে? হবে না। আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে কীভাবে নির্বাচনে আনবেন, সেটিই বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আসতে হবে।

বিএনপি দলীয় আরেক সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, দেশে যদি নির্বাচনেই না থাকে, মানুষ যদি তার ভোটই প্রয়োগ না করতে পারে, মানুষ যদি তার পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে না পারে, আগে থেকে যদি ব্যালটে বাক্স ভরা থাকে, দিনের ভোট যদি রাতে হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন দিয়ে হবে কি? তিনি বলেন, নির্বাচন যে এখন একটা মল্লযুদ্ধ, তার একটা বড় প্রমাণ এই নির্বাচন কমিশন শপথ নেওয়ার পরপরই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন জেলনস্কির মতো বিএনপিকে মাঠে থাকতে হবে। ভোট কি একটা যুদ্ধ যে জেলনস্কির মতো বিএনপিকে মাঠে থাকতে হবে? আর এক কমিশনার বলেছেন মেশিনে কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে গোপন কক্ষে যে ডাকাত ঢুকে থাকে। এই ডাকাত যে শুধু দলীয় ক্যাডার তা নয়, এরমধ্যে আছে পুলিশ ও প্রশাসন। এই ডাকতদের যেভাবে পুরস্কৃত করা হয়, সেই পুরস্কার দেখে বোঝা যায় ভবিষৎতে আরো ডাকাত বাড়বে।

রুমিন ফারহানা বলেন, একজন ডাকতের উদাহরণ হলো হেলালুদ্দিন সাহেব। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় যিনি নির্বাচন কমিশনে সচিব ছিলেন। তাকে পরবর্তীতে প্রাইজ পোস্টিং হিসেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়। তিনি অবসরের ২৪ ঘণ্টা আগে ইউরোপ সফর করে আসেন। রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে যে ইউরোপ সফরে গিয়েছিলেন সেটা সম্ভবত তিনি অবসরের পর কাজে লাগাবেন। এভাবে যদি ডাকতদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়, তাহলে এই দেশে নির্বাচন কোনো দিন সুষ্ঠু হবে না। বিনাভোটে সংসদ গঠন চলতেই থাকবে। তিনি আরো বলেন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মাত্র একজন এমপির হুমকি ধামকি এই নির্বাচন কমিশন সহ্য করতে পারেনি। বারবার তাকে অনুরোধ করা হয়েছে, চিঠি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে; কিন্তু তাকে এলাকা থেকে সরানো যায়নি। নতজানু ও মেরুদÐ ভাঙা অবস্থা দেখে বোঝা যায়, এই ইসির অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়।

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, নির্বাচন করে কারা? নির্বাচন করে রাজনৈতিক দল। স্টেকহোল্ডার হচ্ছি আমরা যারা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করি। আমরা যদি সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না করি, তাহলে ঘরে বসে নির্বাচন কমিশন কোনো দিন, কোনো কিছু করতে পারবে না। সব কিছু স্বাধীন। প্রকান্তরে কোনো নির্বাচন কমিশন কোনো দিন স্বাধীন না। সমস্ত কমিশনই সরকার দ্বারা গঠিত হয়, সরকারের অধিনে কাজ করে। এটা আইয়ুব খানের আমলে হয়েছে, জিয়াউর রহমানের আমলে হয়েছে, আমাদের আমলে হয়েছে, এখন এ সরকারের আমলেও হচ্ছে। এটা চলতেই থাকবে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে যদি সক্ষমতা নিয়ে না দাঁড়াতে পারে, প্রতিদ্ব›দ্বীরা যদি সমকক্ষ না হয়, তাহলে জয়ী হবে কীভাবে? তিনি বলেন, নির্বাচনে কেউ হারতে চায় না। নির্বাচন হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্র। স্থানীয় প্রশাসন যেদিকে শক্তি দেখে, যার লোক দেখে সেন্টারে, তার দিকে চলে যায়। কিচ্ছু করার থাকে না। যারা ক্ষমতায় আছে, জনগণ তাকে সমর্থন করে। দুর্বল নেতৃত্বে কেউ কিছু করতে পারে না। সমকক্ষ লোক নির্বাচনে আসলে ভোট সঠিক হবে। ইভিএম বলেন, আর ব্যালট বলেন, লোক যার বেশি সেই বিজয়ী হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আইনমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ