বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আজব এক বন্যার কবলে পড়েছেন সিলেটবাসী ! অতীতের ইতিহাসে এমন বন্যার মুখে যেমন পড়েননি, তেমনি বন্যার পানির এমন বৈশিষ্ট্য দেখেনি সিলেটের মানুষ। বন্যা আসে, বন্যা যায়। তার সাথে এক সখ্যতা, সু:খ দু:খের গল্প গাঁথায় জড়িয়ে ছিল এ অঞ্চলের জন-জীবনে। কিন্তু এবারের বন্যার চরিত্র যেমন সর্বগ্রাসী তেমনি বিচিত্র এক ভয়ংকররূপও বটে। তাই এনিয়ে ভাবিত বহু বিজ্ঞজন। প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ, গবেষকসহ স্থানীয় ব্যক্তিদের মতে- বন্যার পানি ধীরে নামার পেছনে প্রধানত তিন কারণ দায়ী। এগুলো হলো- হাওরে অপরিকল্পিত অবকাঠামো (রাস্তা, সুইসগেট, বাঁধ) নির্মাণ, নদীর নাব্যতা-সংকট ও হাওর ভরাট করা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাওর ব্যবস্থাপনায় সরকারকে নতুন করে চিন্তাভাবনা করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
বন্যার পানি ধীরে নামার জন্য হাওরগুলো ভরাট হয়ে থাকাকে দায়ী বলে মনে করেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, হাওরে যেভাবে আগে পানি নামত, এখন সেভাবে নামছে না। সুনামগঞ্জের হাওরগুলোর যদি পানি ধারণের ক্ষমতা আগের মতো থাকত, তবে সিলেটে পানি জমে থাকার সুযোগ পেত না। ভবিষ্যতে বন্যা এড়াতে সিলেটে নদী খনন করা হবে বলে জানান তিনি। একই মত সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর এবং পরিবেশকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদের। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, সাধারণত সিলেটের পানি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কালনী নদী দিয়ে ভৈরব হয়ে মেঘনায় গিয়ে মেশে। গত কয়েক দশকে কালনী ভরাট হয়ে পানি প্রবাহের পথ অনেকটা গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। ভরাট হয়েছে হাওরও। তাই এখন বৃষ্টিপাত কমে এলেও বন্যার পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা হয়েছে আগেও। তবে এবারের বন্যার সঙ্গে আগেরগুলোর খুব একটা মিল নেই। আগে বন্যা হয়েছে স্বল্প সময়ের জন্য। ক্ষয়ক্ষতিও কম হয়েছে। এবারের বন্যার ভয়াবহ রূপ ও পানির অস্বাভাবিক আচরণ এ অঞ্চলের মানুষ আগে দেখেননি। হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রাণ বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা লেখক-গবেষক পাভেল পার্থ এবারের বন্যার নাম দিয়েছেন ‘জলাবদ্ধ বন্যা’। তাঁর ভাষায়, এত লম্বা সময় ধরে সিলেট অঞ্চলে আগে কখনো বন্যার পানি আটকে থাকেনি। এ পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। অতিবৃষ্টি ও ঢলের পানি ধরে রাখার প্রাকৃতিক জলাধারগুলো ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়া এবং পানি প্রবাহের স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ করা। সুনামগঞ্জ-১ আসনের (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা) সাবেক এমপি নজির হোসেন বলেন, ‘আমরা সুনামগঞ্জের মানুষ এবার চার দিন অন্ধকারে ছিলাম। সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন, সভ্যতার বাইরে। এই অন্ধকার যাতে আর না আসে, সেটি নিশ্চিত করতে হলে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। সুনামগঞ্জ থেকে ভৈরব পর্যন্ত পানিপ্রবাহের পথ করে দিতে হবে পরিষ্কার। এ জন্য নদী খনন দরকার। সরকারের ২০১২ সালের হাওর মহাপরিকল্পনায় এসব আছে। এখন জরুরি বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়নে নামতে হবে।
এবারের মতো বন্যা থেকে বাঁচতে নদী খননের বিকল্প নেই বলে মনে করেন হাওর ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা। তিনি বলেন, ‘নদীর মাটি নদীতে ফেলে খনন নয়। কার্যকর নদী খননের উদ্যোগ নিতে হবে। এবার বন্যার ভয়াবহতা দেখে আমরা বুঝেছি, এমন বিপদ সামনে আরও আছে।’
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন- আশা করা যাচ্ছে, বৃষ্টি আর না হলে পানি আরও কমবে। তবে সুনামগঞ্জে পানি ধীরগতিতে নামায় সিলেট থেকেও সময় লাগছে পানি নামতে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুন থেকে সিলেট দ্বিতীয় ও সুনামগঞ্জ তৃতীয় দফা বন্যার কবলে পড়েছে। ২১ জুন থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও সিলেটে গত মঙ্গলবার ফের শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টিপাত। গত বুধবারও হয় বৃষ্টি। ফলে সুরমা, কুশিয়ারাসহ জেলার নদ-নদীগুলোর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বেড়েছে। অন্যদিকে, গত সোমবার সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে আবারও বৃষ্টি।
উজানে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হচ্ছে। ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এখানে ২৩ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। দিরাইয়ে পুরাতন সুরমা নদীর পানি আছে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপরে। এঅবস্থায় সুনামগঞ্জবাসীর মনে নতুন করে পাহাড়ি ঢল নামায় দেখা দিয়েছে শঙ্কা। তবে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো পূর্বাভাস এখন পর্যন্ত নেই।
আজব এক বন্যার কবলে সিলেটবাসী, পরিত্রানে বিজ্ঞজনদের ভাবনা !
সিলেট ব্যুরো:
আজব এক বন্যার কবলে পড়েছেন সিলেটবাসী ! অতীতের ইতিহাসে এমন বন্যার মুখে যেমন পড়েননি, তেমনি বন্যার পানির এমন বৈশিষ্ট্য দেখেনি সিলেটের মানুষ। বন্যা আসে, বন্যা যায়। তার সাথে এক সখ্যতা, সু:খ দু:খের গল্প গাঁথায় জড়িয়ে ছিল এ অঞ্চলের জন-জীবনে। কিন্তু এবারের বন্যার চরিত্র যেমন সর্বগ্রাসী তেমনি বিচিত্র এক ভয়ংকররূপও বটে। তাই এনিয়ে ভাবিত বহু বিজ্ঞজন। প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ, গবেষকসহ স্থানীয় ব্যক্তিদের মতে- বন্যার পানি ধীরে নামার পেছনে প্রধানত তিন কারণ দায়ী। এগুলো হলো- হাওরে অপরিকল্পিত অবকাঠামো (রাস্তা, সুইসগেট, বাঁধ) নির্মাণ, নদীর নাব্যতা-সংকট ও হাওর ভরাট করা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাওর ব্যবস্থাপনায় সরকারকে নতুন করে চিন্তাভাবনা করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
বন্যার পানি ধীরে নামার জন্য হাওরগুলো ভরাট হয়ে থাকাকে দায়ী বলে মনে করেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, হাওরে যেভাবে আগে পানি নামত, এখন সেভাবে নামছে না। সুনামগঞ্জের হাওরগুলোর যদি পানি ধারণের ক্ষমতা আগের মতো থাকত, তবে সিলেটে পানি জমে থাকার সুযোগ পেত না। ভবিষ্যতে বন্যা এড়াতে সিলেটে নদী খনন করা হবে বলে জানান তিনি। একই মত সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর এবং পরিবেশকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদের। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, সাধারণত সিলেটের পানি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কালনী নদী দিয়ে ভৈরব হয়ে মেঘনায় গিয়ে মেশে। গত কয়েক দশকে কালনী ভরাট হয়ে পানি প্রবাহের পথ অনেকটা গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। ভরাট হয়েছে হাওরও। তাই এখন বৃষ্টিপাত কমে এলেও বন্যার পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা হয়েছে আগেও। তবে এবারের বন্যার সঙ্গে আগেরগুলোর খুব একটা মিল নেই। আগে বন্যা হয়েছে স্বল্প সময়ের জন্য। ক্ষয়ক্ষতিও কম হয়েছে। এবারের বন্যার ভয়াবহ রূপ ও পানির অস্বাভাবিক আচরণ এ অঞ্চলের মানুষ আগে দেখেননি। হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রাণ বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা লেখক-গবেষক পাভেল পার্থ এবারের বন্যার নাম দিয়েছেন ‘জলাবদ্ধ বন্যা’। তাঁর ভাষায়, এত লম্বা সময় ধরে সিলেট অঞ্চলে আগে কখনো বন্যার পানি আটকে থাকেনি। এ পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। অতিবৃষ্টি ও ঢলের পানি ধরে রাখার প্রাকৃতিক জলাধারগুলো ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়া এবং পানি প্রবাহের স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ করা। সুনামগঞ্জ-১ আসনের (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা) সাবেক এমপি নজির হোসেন বলেন, ‘আমরা সুনামগঞ্জের মানুষ এবার চার দিন অন্ধকারে ছিলাম। সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন, সভ্যতার বাইরে। এই অন্ধকার যাতে আর না আসে, সেটি নিশ্চিত করতে হলে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। সুনামগঞ্জ থেকে ভৈরব পর্যন্ত পানিপ্রবাহের পথ করে দিতে হবে পরিষ্কার। এ জন্য নদী খনন দরকার। সরকারের ২০১২ সালের হাওর মহাপরিকল্পনায় এসব আছে। এখন জরুরি বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়নে নামতে হবে।
এবারের মতো বন্যা থেকে বাঁচতে নদী খননের বিকল্প নেই বলে মনে করেন হাওর ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা। তিনি বলেন, ‘নদীর মাটি নদীতে ফেলে খনন নয়। কার্যকর নদী খননের উদ্যোগ নিতে হবে। এবার বন্যার ভয়াবহতা দেখে আমরা বুঝেছি, এমন বিপদ সামনে আরও আছে।’
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন- আশা করা যাচ্ছে, বৃষ্টি আর না হলে পানি আরও কমবে। তবে সুনামগঞ্জে পানি ধীরগতিতে নামায় সিলেট থেকেও সময় লাগছে পানি নামতে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুন থেকে সিলেট দ্বিতীয় ও সুনামগঞ্জ তৃতীয় দফা বন্যার কবলে পড়েছে। ২১ জুন থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও সিলেটে গত মঙ্গলবার ফের শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টিপাত। গত বুধবারও হয় বৃষ্টি। ফলে সুরমা, কুশিয়ারাসহ জেলার নদ-নদীগুলোর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বেড়েছে। অন্যদিকে, গত সোমবার সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে আবারও বৃষ্টি।
উজানে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হচ্ছে। ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এখানে ২৩ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। দিরাইয়ে পুরাতন সুরমা নদীর পানি আছে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপরে। এঅবস্থায় সুনামগঞ্জবাসীর মনে নতুন করে পাহাড়ি ঢল নামায় দেখা দিয়েছে শঙ্কা। তবে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো পূর্বাভাস এখন পর্যন্ত নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।