Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাটে আগ্রহ বাড়ছে কুষ্টিয়ার কৃষকের

এস. এম. আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০২২, ১২:০৩ এএম

গত মৌসুমে ভালো দাম পাওয়ায় কুষ্টিয়ায় বেড়েছে পাট চাষ। অনুকূল আবহাওয়া, সেই সঙ্গে কৃষি প্রণোদনা পাওয়ায় জেলার কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তবে কুষ্টিয়ার খোকসায় অবস্থিত সরকার অনুমোদিত একমাত্র পাট বিক্রয় কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাষিরা কিছুটা চিন্তিত।
কুষ্টিয়ার মুখ্য পাট পরিদর্শক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় এক লাখ ২৫ হাজার ২৮০ একর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে চাষ হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ২৮০ একর জমিতে।
এ বছর কুষ্টিয়া সদরে পাঁচ হাজার ৪২৬ একর, কুমারখালীতে ১২ হাজার ৫৮৭ একর, খোকসায় ১০ হাজার ৭৪৪ একর, মিরপুরে ১২ হাজার ৬৯৫ একর, ভেড়ামারায় ২২ হাজার ৯৪৬ একর এবং দৌলতপুরে ৫০ হাজার ৮৮২ একর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় পাট চাষ হয়েছিল এক লাখ এক হাজার একর জমিতে।
কৃষকরা জানান, চৈত্রের শেষ ভাগে পাটের মৌসুম শুরু হয়। বৈশাখে পুরোদমে এর আবাদ হয়। পাট কাটা হয় আষাঢ় ও শ্রাবণে। এ সময় বৃষ্টি বেশি হলে সহজে জাগ দিতে পারেন চাষিরা। এতে ভালো পাট পাওয়া যায়। তবে কোনও কারণে পানির অভাব দেখা দিলে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পাট অধিদফতর বলছে, গতবার পাটের ফলন যেমন বেশি হয়েছে, তেমনই দামও ভালো পেয়েছেন কৃষকেরা। ফলে চাষিরা বেশ লাভবান হয়েছেন। এবারও তারা লাভের আশা করছেন। কারণ সরকার ধান, চাল, গম, ভুট্টা, চিনি ও সার ছয়টি পণ্য মোড়কিকরণে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। এখন পাটজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
মিরপুর উপজেলার পাট চাষি আব্দুল কুদ্দুস শেখ বলেন, ‘চলতি বছর একবিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। তবে দাম নিয়ে কিছুটা চিন্তিত রয়েছি। আশা করি, সরকার এবারও চাষিদের কাছ থেকে ন্যায্য দামে পাট কিনবেন।’
কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের পাট চাষি বজলুর রহমান বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাট গাছের বয়স দেড় মাস পূর্ণ হয়েছে। গাছ ও পাতা অনেক ভালো আছে। এবারও ভালো ফলন পাবো।’
একই উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের বড় ভালুকা গ্রামের আবু দাউদ বলেন, ‘গত বছর পাটের চাষ ছিল না। কিন্তু বাজারে ভালো দাম ছিল। তাই এবার আড়াই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি।’
যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের কৃষক ফজুল শেখ বলেন, গত বছর কৃষকেরা প্রতি মণ পাটে তিন থেকে প্রায় চার হাজার টাকা দাম পেয়েছেন। প্রতি বিঘায় বীজ বপন থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় প্রায় ১০ মণ পাটের ফলন পাওয়া যায়।
কুমারখালী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস বলেন, ‘বাজারে ভালো দাম, অনুকূল আবহাওয়া এবং সময়মতো কৃষি প্রণোদনা পাওয়ায় কৃষকেরা পাট চাষে আগ্রহ বাড়িয়েছেন। উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে পাট চাষ হয়েছে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, বীজ বিতরণ ও সার বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়ার মুখ্য পাট পরিদর্শক মো. সোহরাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘কৃষক যেন ভালো দাম পান এ জন্য সরকার বিদেশে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং পাটের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য নতুন আইন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কুষ্টিয়া জেলায় প্রায় দুই লাখ পাট চাষি রয়েছে। পাট ও পাট বীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় জেলার ছয়টি উপজেলার ১৮ হাজার চাষিকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে চাষি প্রতি ১২ কেজি সার ও কিটনাশক দেওয়া হয়েছে।’
এই পাট কর্মকর্তা বলেন, ‘গত বছর কৃষক দাম ভালো পাওয়ায় এবার পাট চাষ বেশি করছেন। সেই সঙ্গে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার নিশ্চিতে ২০১০ সালের আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে কুষ্টিয়ায় এর চাহিদা বেড়েছে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ