Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অনলাইন লুডুতে সর্বনাশ খুলনার শ্রমজীবি মানুষের

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০২২, ৭:৩৩ পিএম

শিল্প ও বন্দর নগরী খুলনার অধিবাসীদের বড় একটি অংশ শ্রমজীবি। তারা বিভিন্ন শিল্প কল কারখানা, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, সিমেন্ট ও রাইস মিলে কাজ করেন। আরেকটি অংশ ইজিবাইক, থ্রি হুইলার চালিয়ে এবং এর বাইরে নানা ধরণের কায়িক শ্রমের মাধ্যমে উপার্জন করে থাকেন। সময়ের সাথে সাথে একের পর এক সিনেমা হল বন্ধসহ বিভিন্ন কারণে খুলনাঞ্চলে শ্রমজীবি মানুষদের চিত্ত বিনোদনের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় এখন বিনোদন তাদের কাছে মুঠোফোন নির্ভর হয়ে পড়েছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষে তারা এখন ঝুঁকে পড়েছেন অনলাইন লুডু নামক সর্বনাশা এক জুয়া খেলায়। সারা দিনের উপার্জনের বড় অংশ চলে যাচ্ছে এই লুডু জুয়ায়। কিশোর থেকে বৃদ্ধ-সবাই আসক্ত। ঘন্টার পর ঘন্টা কয়েকজন মিলে চলছে লুডু খেলা। চায়ের দোকান, খোলা মাঠ, নির্জন গাছতলা-যেখানে সামান্য জটলা দেখা যায়, এগিয়ে গেলে দেখতে পাওয়া যায় একটি মোবাইল ফোনের উপর ঝুঁকে রয়েছেন চার পাঁচ জন খেলোয়াড়। চলছে লুডু খেলা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, এনড্রয়েড ফোনে গুগল প্লে ষ্টোর থেকে অনলাইন কিং মাস্টার, লুডু কিং, লুডু গেম প্রভৃতি ডাউনলোড করা হয়। এরপর নিজ নামে একাউন্ট খোলা হয়। সেই সাথে অর্থ প্রদানের জন্য দেশে প্রচলিত বিভিন্ন অনলাইন অর্থলেনদের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট লিংক সংযুক্ত করা হয়। বিজয়ী হলে একাউন্টে টাকা আসে, হেরে গেলে একাউন্ট থেকে টাকা চলে যায়। পার্শ্ববর্তী একটি দেশ থেকে এই অনলাইন গেম এ্যাপসগুলো নিয়ন্ত্রন করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের দেশে যারা খেলেন, তারা হেরে যান কারণ অপর প্রান্তের প্রতিপক্ষ থাকে পূর্ব থেকে প্রোগ্রাম করা। অর্থাৎ প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় কোনো মানুষ নয়, সফটওয়ার নিয়ন্ত্রিত প্রোগ্রাম। তবে অনলাইনে সব সময় যে সফটওয়ার নিয়ন্ত্রিত খেলা হয়- এমনটিও নয়।

অনুসন্ধানে খুলনার বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, সারাদিন কাজ শেষে মজুরি হাতে পেয়ে শ্রমজীবি মানুষেরা দেদারসে এই অনলাইন লুডু খেলছেন। সারাদিনের আয়ের সিংহভাগ হেরে ঘরে ফিরছেন। হাজার হাজার টাকা হার হয়েছে এমন শোনা গেলেও হাজার টাকা জিতে ঘরে ফিরেছে, তা শোনা যায় না। এদিকে, এসব কারণে পারিবারিক কলহ বিবাদও বেড়ে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরীর আলমনগর বস্তি এলাকায় কয়েকজন গৃহবধূর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের স্বামীরা অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। এ কারণে সংসারে অভাব অনটন লেগেই রয়েছে। বর্তমান বাজরমূল্যে এমনিতেই সংসার চালানো দায়, তার উপর মাদকের মত এ নেশা পরিবারগুলোতে অশান্তি ডেকে আনছে।

খুলনার নারীনেত্রী ইশরাত হিরা জানান, ইদানিং খুলনাসহ সারাদেশে অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে মানুষ। পরিবার ভেঙে যাচ্ছে। সামাজিক শৃংখলা বিঘ্নিত হচ্ছে।

খুলনা বিএল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সমাজ কর্মি অধ্যাপক সাজেদুর রহমান জানান, প্রযুক্তির ভাল ও মন্দ দুটো দিকই রয়েছে। স্বভাবতই আমরা খারাপ দিকটির প্রতি বেশি আকৃষ্ট হই। অনলাইন জুয়ায় হয়ত একজন মানুষ একদিনে ১০০ টাকা হারছেন। এভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ হারছেন। প্রশ্ন হচ্ছে টাকাগুলো কোথায়, কার কাছে যাচ্ছে? এখনই সরকারের উচিত, এগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। না হলে, এর দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব পড়বে সমাজে। উঠতি বয়সীরা অতিমাত্রায় এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়লে আগামীতে তা সামাল দেয়া দূরহ হবে।

তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে খুলনায় কাজ করছেন এমন একজন সুব্রত সাহা। এ্যাপ টেক নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সত্বাথিকারী সুব্রত সাহা জানান, সরকার চাইলে বিটিআরসি’র মাধ্যমে সমাজের জন্য ক্ষতিকারক এ্যাপস গুলো বন্ধ করতে পারে। তিনি অনলাইন লুডু, বিগো লাইভ, টিকটক, লাইকি, ইমো এ্যাপস সহ আরও কয়েকটি এ্যাপস বাংলাদেশে বন্ধ করার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ