বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মতো উপকূলীয় বাগেরহাট জেলার মানুষের মধ্যে আবেগ, উচ্ছ্বাস, উত্তেজনার কমতি ছিল না। অন্যান্য শ্রেণী-পেশার মতো কৃষক ও কৃষি পণ্যেও ব্যবসায়ীরা উচ্ছ্বাসিত। কৃষি নির্ভর এ জেলার কৃষিতে পদ্মা সেতুর ব্যাপক প্রভাব পড়বে, কৃষি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, কৃষি প্রধান জেলা বাগেরহাট। বাগেরহাট জেলায় কৃষক পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩২৮টি। এ জেলায় চলতি অর্থ বছরে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৪০০ টন সবজি উৎপাদিত হয়। যার সিংহ ভাগই ঢাকার বাজারে যায়। এ জেলার উৎপাদিত শাক-সবজি, মুরগী, দুধ, ডিম এখন সরাসরি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাবে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে। দ্রুত পচনশীল পণ্যও এখন আর পচবে না। চাষিরা এবার ন্যায্য মূল্য পাবেন।
উচ্চমূল্যের ফসল চাষীরা নতুন ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো স্বপ্ন দেখছেন। তাদের উৎপাদিত ফসল এখন আর স্থানীয় বাজারে বিক্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এসব কৃষিপণ্য বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবেন।
বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর এলাকার কৃষক মোল্লা আব্দুল আজিজ টিটু জানান, ‘আমি বিদেশ থেকে ফিরে কৃষি খামার গড়ে তুলেছি। আমার থামারে উৎপাদিত পন্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে থাকি। অফসিজনের ফসল উৎপাদন করেও তেমন সফলতা পাই না। কারণ স্থানীয় বাজারে বেশি দাম দিয়ে কেউ এসব পন্য কিনতে চায় না। ঢাকার পাইকারী ক্রেতারা নানা অজুহাতে পন্য সঠিক দাম দিয়ে কিনতে চায় না। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। এখন থেকে প্রয়োজনে নিজে পিকআপ ভ্যানে করে পন্য ঢাকার বাজারে নিয়ে বিক্রি করবো।’
মোল্লাহাট উপজেলার কৃষি উদ্যোগতা ফয়সাল আহম্মেদ জানান, তিনি একজন ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ১০ বছর দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানীতে কাজ করেছেন। এখন আধুনিক কৃষি উদ্যোগতা হিসেবে রক মেলন, ওয়াটার মেলন, হানী ডিউ মেলন, ক্যাপসিকামসহ বিভিন্ন উচ্চমূলের ফসল উৎপাদন করছেন। এগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে তিনি পাঠিয়ে থাকেন। পদ্মা নদীর করনে এটি পাঠাতে প্রচুর সময় লেগে যেত। সেতু চালু হওয়ার পর দ্রুত এসব পন্য গন্তব্যে পৌছে যাবে। ফলে পন্যের গুনগত মান ভাল থাকবে। পদ্মা সেতু কৃষকের স্বচ্ছলতার প্রতীক হবে বলে মনে করেন এই কৃষি উদ্যেগতা।
ফকিরহাট উপজেলার অর্গানিক বেতাগার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, কোন প্রকার রাসায়নিক সার ও কিটনাশক ব্যবহার না করে সম্পূর্ণ অর্গানিক ভাবে তিনি বেগুন, লাউ, টমেটো, শসা, ঢেড়সসহ অনেক ফসল উৎপাদন করেন। কিন্তু স্থানীয় বাজারে এসবের বাড়তি কোন মূল্য নেই। অনেক দিনের স্বপ পদ্মা সেতু হলে এসব ফসল তিনি ঢাকার বাজারে বিক্রি করবেন।
কচুয়া উপজেলার গজালিয়া গ্রামের চাষী আঃ রহমান পাইক জানান, তার ক্ষেতে প্রতি বছর প্রচুর পরিমান টমেটো উৎপাদিত হয়। শেষ দিকে এসে ক্ষেত থেকে টমেটো তুললে শ্রমিকের মুজুরীই হয় না। তাই তারা তখন টমেটো তোলেন না। ফলে ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যায় অনেক কষ্টের ফসল। ঠিক সেই সময় ঢাকার বাজারে টমেটোর চাহিদা থাকে। পদ্মা সেতুর ফলে এখন আর ক্ষেতে টমেটো নষ্ট হবে না বলে তিনি মনে করেন।
বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাট্রিজের সভাপতি লিয়াকাত হোসেন লিটন বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবনীয় পরিবর্তনের ফলে পাল্টে যাবে কৃষি খাত। দ্রæত পন্য আনা নেয়ার করতে পারায় ব্যবসায়ীদের কাছে কৃষকরা জিম্মি হয়ে থাকবে না। নতুন নতুন উদ্যোগতা সৃষ্টি হবে।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, বাগেরহাটে প্রচুর পরিমান সব্জি উৎপাদিত হয়। এসব সব্জি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এছাড়া বাগেরহাটের টমেটোর সুনাম রয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত সব্জির ন্যায্য দাম পাওয়ার প্রধান অন্তরায় ছিল পদ্মা নদী। পদ্মা সেতু চালুর ফলে জেলার কৃষকদের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হবে।
বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুসপুত্র ও বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন বলেন, পদ্মা সেতু চালুর ফলে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের সবচেয়ে পরিবর্তন হবে। বিশেষ করে কৃষি ক্ষেত্র বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। কৃষকদের উৎপাদিত ফসল আর ফেলে দিতে হবে না বলে উল্লেখ করে এই জনপ্রতিনিধি।
পদ্মা সেতু চালুর ফলে ঢাকার সাথে ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগের ফলে কৃষিখাতসহ বাগেরহাটের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।