Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪, ০৭ ভাদ্র ১৪৩১, ১৬ সফর ১৪৪৬ হিজরী

পানি ধারণের ক্ষমতা নেই

হাওরে তিন দশকে পানিধার কমেছে প্রায় ৯০ শতাংশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

দেশের হাওর এলাকায় গত তিন দশকে ৮৭ শতাংশ পানিভূমি কমে চারশ বর্গ কিলোমিটারে নেমেছে। সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো নির্মাণের কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনেক কমেছে আয়তন। এর মধ্যে দুই ধরনের ভূ-প্রকৃতির (পানিধার ও অবকাঠামো) পরিবর্তনের এ কারণে বন্যার ব্যাপকতা বাড়ছে। ভয়াবহও হচ্ছে বলে হাওরের ভূমি ব্যবহার বিষয়ক এক গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)-এর ‘হাওর এলাকার ভূমি ব্যবহারের কয়েক দশকের পরিবর্তন ও এবারের বন্যার ব্যাপকতা’ শীর্ষক এ গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়। পানি সম্পদ বিভাগের ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, সাত জেলায় ৩৭৩টি হাওর রয়েছে। যার মোট পরিমাণ আট লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের ৯৫ হাওরে পানিভূমির পরিমাণ ২ লাখ ৬৮ হাজার হেক্টর।

চলতি বন্যাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে তারা মনে করছেন, ক্রমাগত অবকাঠামো বানানোর কারণে হাওরের পানি ধারণ ক্ষমতা কমতে থাকায় হঠাৎ বন্যা ভাসিয়ে দিচ্ছে সবকিছু। তারা হাওরে অপরিকল্পিত নির্মাণ কাজ থেকে সরে আসতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন কালে আইপিডির নির্বাহী পরিচালক নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, গত ২০০৬ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে হাওরে পানিধার সবচেয়ে বেশি কমেছে। ২০১৩ থেকে ২০২০ সালে ভূমির ব্যবহারে বেশি পরিবর্তনের কারণ হাওর উন্নয়ন বোর্ডের মাস্টারপ্ল্যান। তিনি বলেন, হাওরে এবারের বন্যার জন্য অনেকে অল ওয়েদার সড়কসহ নানা কারণের কথা বলছেন। তবে হাওর এলাকায় বন্যার মূল কারণ পানি ধারণের জায়গা কমে যাওয়া।

এতে বলা হয়, ১৯৮৮ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে জলাধারের পরিবর্তন প্রবণতা রীতিমতো আশঙ্কাজনক। এ সময় হাওর এলাকা তার মূল জলাধারের প্রায় ৪০ শতাংশ হারিয়ে ফেলে। আর ২০২০ সালের মধ্যে হারিয়ে যায় ৮৭ শতাংশ। অন্যদিকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত নাগরিক স্থাপনা নির্মাণ এলাকা বেড়েছে প্রায় ২২০ শতাংশ। এটি প্রাথমিক অবস্থার তুলনায় ৩৮৫ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুই শিক্ষার্থীর গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী ইনজামাম-উল-হক রিফাত ও মারিয়া মেহরিন গবেষণাকর্মটি ২০২১ সালের মার্চ মাসে শুরু করে ২০২২ সালের জুনে শেষ করেন। গবেষণাটি করতে স্যাটেলাইটের ছবি ও গুগল আর্থের সহযোগিতা নিয়েছেন এই দুই শিক্ষার্থী। গবেষণার সুপারভাইজার ছিলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাকিল আকতার।

গবেষক ইনজামাম-উল-হক রিফাত বলেন, হাওরের প্রায় ৯০ শতাংশ পানিভূমির অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেখানে আর জলাভূমি নেই। ৩২ বছরে হাওরের আয়তন কমে দশ ভাগের এক ভাগ হয়ে গেছে। পানিভূমির জায়গা ভরাট করে সেখানে রাস্তা, বসতঘর, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৮ সালে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার হাওরে পানিধার ছিল ৩ হাজার ২৬ বর্গকিলোমিটার, যা ২০২০ সালে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৯৯ বর্গকিলোমিটার। অন্যদিকে পানিধারে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন অবকাঠামো। ১৯৮৮ সালে হাওর অবকাঠামো আচ্ছাদিত এলাকা ছিল ৯৮৮ বর্গকিলোমিটার এবং ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৪০ বর্গকিলোমিটার। এসব হাওর এলাকায় ১৯৮৮ সালে বনাঞ্চল ছিল চার বর্গকিলোমিটার এবং ২০২০ সালে তা কমে হয়েছে দশমিক ২ বর্গকিলোমিটার।

আইপিডির পরিচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, ভারতে উজানের পাহাড়ি ঢল ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে হাওর এলাকায় প্রায়ই বন্যা হয়। হাওর অঞ্চলগুলোর পানিভূমিতে পানি ধারণক্ষমতা অনেক হ্রাস পেয়েছে। এতে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। পরবর্তী সময়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে পরিবেশবান্ধব টেকসই পরিকল্পনা করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানি

২১ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ