Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মঠবাড়িয়ায় যৌতুকের জন্য স্বামীর নির্যাতনে ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর গর্ভপাত

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০২২, ২:৪৭ পিএম

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় যৌতুকের জন্য স্বামীর নির্যাতনে ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর গর্ভপাত হয়েছে। বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে বৃহষ্পতিবার বিকালে চিকিৎসাধীন রাবেয়া বেগমের (৩৩) গর্ভপাত হয়। রাবেয়া বেগম উপজেলার বড়হারজী গ্রামের কাঞ্চন মিয়ার ছেলে শামসু মিয়ার স্ত্রী। রাবেয়া বেগম মুঠোফোনে তার গর্ভপাতের কথা স্বীকার করেন।

আহত সূত্রে জানাযায়, চট্টগ্রামের বাইজিদ এলাকার বাসিন্দা লালু মিয়ার মেয়ে গার্মেন্টস কর্মী রাবেয়া বেগমমের সাথে ১২ বছর আগে শ্রমিকের কাজ করার সময় শামসুর বিয়ে হয়। তাদের ১০ বছরের এক মেয়ে ও সাত বছরের এক ছেলে রয়েছে। সম্প্রতি শামসু স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে মঠবাড়িয়া নিজ বাড়িতে চলে আসে। আসার পর বাপের বাড়ি থেকে যৌতুক আনার জন্য শুরু হয় রাবেয়ার ওপর অমানবিক নির্যাতন। এর মধ্যে তৃতীয় বার গর্ব ধারনের কথা শুনে আরও নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায় স্বামীর। গত সোমবার রাবেয়াকে বেধরক মার ধর করলে রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং এ অবস্থা দেখে শামসু গা ডাকা দেয়। অসুস্থ রাবেয়াকে তার ননদের মেয়ে আকলিমা হাসপাতালে ভর্তি করলে মামা শাসমু তাকেও হুমকি দেয়। ৩দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাবেয়ার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অবস্থতার অবনতি হওয়ায় তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসক। কিন্তু স্বামী বা শ^শুড় বাড়ির লোকজন এগিয়ে না আসায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানাই ১০ বছরের শিশু কন্যা সাথীকে নিয়ে রাবেয়া কাতরাতে থাকে।

রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ সারোয়ার হোসেন খান সংবাদ কর্মীদের খবর দেন। খবর পেয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা হাসপাতালে ছুটে আসে। রাবেয়ার স্বামী শামসু মিয়ার মুঠো ফোনে একধিকবার যোগাযোগ করেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। সংবাদ কর্মীরা ১০ বছরের সাথীকে মায়ের পাশে কাঁদতে দেখতে পান। তাদের প্রচেষ্টায় ২ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে সাথে সাথে গৃহবধূর শরীরে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
থানা পুলিশ গৃহবধূর বাড়িতে গেলে স্বামী শামসু পালিয়ে যায়। কাউকে না পেয়ে পুলিশ শামসুর বড় ভাইর ছেলে রহিমকে নিয়ে আসেন। সংবাদ কর্মীরা তাৎক্ষনিক হাসপাতাল এলাকার সাধারণ মানুষ, হাসপাতালের ডাক্তার, পুলিশ ও নিজেরা ৯ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উর্মী ভৌমিক ব্যক্তিগত, দপ্তর ও অন্য দপ্তর থেকে ১৮ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। সর্ব মোট ২৭ হাজার দুইশ টাকা সংগ্রহ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্সে বুধবার রাতে গৃহবধূকে তার ভাশুরের ছেলে রহিমকে সাথে করে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাজ্জাদ হোসেন জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষণে অন্তঃসত্তা রাবেয়ার অবস্থা সংকটজনক। তিন দিন আগে ভর্তির পর তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল। কিন্তু স্বামী বা তার পরিবারের কেউ এগিয়ে আসেনি।
মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাঃ নুরুল ইসলাম বাদল বলেন, খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বুধবার বিকেলে শামসুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ