বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বাইতুল্লাহ! কী সুন্দর নাম! এ নাম শোনার সাথে সাথে মুমিনের মনে স্নিগ্ধ অনুভ‚তি সৃষ্টি হয়। অন্যরকম ভালোলাগা মনকে দোলা দেয়। হৃদয়ের ভেতর ‘বাইতুল্লাহ’ যিয়ারতের আকুতি জেগে ওঠে। তাই একজন মুমিন হৃদয়-গভীরে বাইতুল্লাহ যিয়ারতের স্বপ্ন পুষতে থাকে। আর এ স্বপ্ন তার ঈমানকে নতুনভাবে সজীব করে তোলে।
যুগে যুগে কত মানুষ বাইতুল্লাহ যিয়ারতের স্বপ্ন দেখেছে! এ স্বপ্নের মধুর বেদনা হৃদয়ে বহন করেছে। তবে সবার স্বপ্নই কি পূরণ হয়েছে? কারো স্বপ্ন পূরণ হয়েছে একবার, কারো দুবার, কারো বহু বার। আর কারো স্বপ্ন তাদের সাথে সাথে মাটির নিচেই ঘুমিয়ে গেছে। বাইতুল্লাহ যিয়ারতের স্বপ্ন কারো জীবনে কত বিস্ময়করভাবে পূর্ণ হয়েছে! পার্থিব যুক্তিতে যাকে বিচার করা যায় না।
এখন যিয়ারতে বাইতুল্লাহ আগের চেয়ে সহজ। আরামদায়ক সফর। বিমানে ওঠার পর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চলে যাওয়া যায় পবিত্র হিজায ভ‚মিতে। কিন্তু একটা সময় এটা ছিল জীবনের কঠিনতম সফরের একটি। দিনের পর দিন। মাসের পর মাস পায়ে হেঁটে কিংবা সাওয়ারীতে চড়ে; তবেই পৌঁছা যেত বাইতুল্লাহ্য়-আল্লাহর ঘরে। কেউ বা যেত সাগর পথে। প্রতি মুহূর্তে যেখানে মৃত্যুর ভয় থাকত মনের ভেতর। কারো কারো স্বপ্ন আবার মাঝপথেই সাগরগর্ভে বিলীন হয়ে যেত। তবুও মানুষ স্বপ্ন দেখত যিয়ারতে বাইতুল্লাহর।
বাইতুল্লাহর সফর শারীরিকভাবে যেমন কষ্টের ছিল তেমনি আর্থিকভাবেও এর জন্য অনেক প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল। দীর্ঘ সফরের পথ-খরচ, পরিবারের খরচ, সেখানে থাকার খরচ সব মিলিয়ে প্রয়োজন ছিল অনেক অর্থের। যা জোগাড় করা সবার পক্ষে সহজ ছিল না।
কিন্তু কেউ যদি হিম্মত ও সাহস করে, প্রকৃতপক্ষে যিয়ারতে বাইতুল্লাহর স্বপ্ন দেখে, ইশকের আগুনে তার হৃদয় জ্বলতে থাকে, তাহলে আর্থিক অসচ্ছলতা তার সামনে বাধা হতে পারে না।
এমন অসংখ্য ঘটনা ইতিহাস আলো করে আছে, যেখানে আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষ ত্যাগের নযরানা পেশ করে যিয়ারতে বাইতুল্লাহর স্বপ্ন পূরণ করেছে। অতীত ইতিহাসে এর নযীর যেমন অসংখ্য, নিকট ইতিহাসেও এর দৃষ্টান্ত বিরল নয়।
হজ্বের জন্য দৃঢ় সংকল্প করি এবং প্রস্তুতি নেই। কোনো আমলের জন্য দৃঢ় সংকল্প করার বিশেষ ফযীলত রয়েছে। বান্দা যখন কোনো আমলের নিয়ত করে কিন্তু ওযরের কারণে আমলটি করতে পারে না, আল্লাহ তাআলা তাকে সে আমলের সাওয়াব দান করেন। এক হাদীসে আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি মন থেকে আল্লাহর কাছে শাহাদাতের তামান্না করে আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দান করেন; যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যুবরণ করে। (সহীহ মুসলিম : ১৯০৯)।
আল্লাহ তাআলা রাহীম ও কারীম। অসীম তাঁর দয়া। সীমাহীন তাঁর দান। বান্দাকে দেয়ার জন্য তিনি শুধু বাহানা খোঁজেন। তাই এখন থেকে আমরা যদি হজ্বের দৃঢ় সংকল্প করি এবং কিছু কিছু করে এর জন্য অর্থ সঞ্চয় করি তাহলে আশা করা যায় এই ওসীলায় আল্লাহ আমাদেরকে হজ্ব করার তাওফীক দান করবেন। হজ্ব না করতে পারলেও নিয়তের কারণে হজ্বের সাওয়াব দান করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।