বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ঘর থেকে বের হলেই বড় বড় অজগর। কোনোটি ১৫ ফুট, আবার কোনোটি ২০ ফুট। কয়েক দিন পর পর বিরাটাকার অজগরের দেখা মিলছে। ঘরের উঠোনে, হাঁস-মুরগির খোপে, মাছের ঘেরে, আবার কখনো রাস্তার পাশে। গত এক মাসে সুন্দরবনের পাশের লোকালয়ে কমপক্ষে ৫টি অজগর প্রবেশ করেছে। স্বাভাবিক অবস্থায় অজগর সাপ লোকালয়ের কাছে থাকে না। গভীর জঙ্গলে পানির কাছাকাছি গাছে তাদের বাস। সেখানেই শিকার করে তারা। আতেঙ্কর পাশাপািশ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বিশাল সুন্দরবনের পরিবেশে এমন কী পরিবর্তন ঘটেছে যে অজগরেরা স্থান ত্যাগ করে জনবসতিপূর্ণ লোকালয়ে প্রবেশ করছে?
সূত্র জানায়, গত ২০ জুন বাগেরহাটের মংলা উপজেলার মাদুরপাল্টা গ্রামে সরকারি দীঘির পারে ৭ ফুট লম্বা একটি অজগর ধরা পড়ে। আগের দিন ১৯ জুন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালি গ্রামে ১৫ ফুট লম্বা একটি অজগর ধরা পড়ে। ৭ জুন একই উপজেলার পশ্চিম রাজাপুর গ্রামে ১৫ ফুট লম্বা অজগর ধরা পড়ে। এ ছাড়া গত ১ জুন শরণখোলার সোনাতলা গ্রামে ১২ ফুট, ৩১ মে মোংলা উপজেলার চিলা গ্রামে ৯ ফুট, ১৮ মে শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে ১০ ফুট, ২ মে শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামে সবজি ক্ষেত থেকে ১০ ফুট লম্বা অজগর ধরা পড়ে। বন বিভাগের সহায়তায় অজগরগুলো সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়। সবচেয়ে বড় অজগরটি ধরা পড়েছিল গত বছর ২১ অক্টোবর শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালি গ্রামে। আকার ছিল ২০ ফুট।
শরণখোলা উপজেলার ধারসাগর ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক হাফিজুর রহমান জানান, অজগরগুলো আমাদের হাঁস-মুরগি ধরে খেয়ে ফেলে। আমরা সবসময় সাপ আতঙ্কে থাকি। পরিবারের শিশুদের নিয়েও খুব শঙ্কায় থাকি। কারণ অজগরগুলো ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকে। আমাদের বাচ্চারা সব সময় উঠোনে, পুকুরপাড়ে খেলা করে। খুড়িয়াখালি গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি আশরাফ আলী জানান, আগে কখনো আজগর লোকালয়ে দেখিনি। বন্যার সময় হয়তো দু’একটা সাপ দেখা যেতো, তবে তা অজগর ছিল না। কিছুদিন আগে অনেক বড় একটি অজগর আমাদের গ্রামে ঢুকে পড়েছিল। সুন্দরবনে তো খাবারের সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। কেনো অজগর ঢুকছে, আমরা বুঝতে পারছি না।
মংলার চিলা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হামিদুর রহমান জানান, ভোরে ঘর থেকে বের হতে আমরা ভয় পাই। না জানি উঠোনে অজগর লুকিয়ে রয়েছে।
প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবন এলাকার লোকালয়ে ধরা পড়া অধিকাংশ অজগর পাওয়া গেছে হাঁস-মুরগির খামারে, না হয় মাছের ঘের বা পুকুরে। অজগরের পছন্দের খাবারের তালিকায় রয়েছে ইঁদুর, খরগোশ, ছাগল, ভেড়া, শিয়াল এবং হরিণের মতো প্রাণী। বাংলাদেশে সাধারণত দুই ধরনের অজগর বেশি দেখা যায়। একটি বার্মিজ পাইথন, এটি স্থানীয়ভাবে ময়াল নামে পরিচিত। আরেকটি রেটিকুলেটেড পাইথন, একে গোলবাহার বা জালি অজগরও বলা হয়। ময়াল জাতটির সাপ লোকালয়ে ঢুকছে।
তারা আরো মনে করেন, কয়েক বছরে বাংলাদেশে অজগরের প্রাকৃতিক প্রজনন বেড়েছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে তাই আগে সাপ দেখতে পেলেই মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলত কিন্তু এখন তা করে না। অজগর সাধারণত উপদ্রবহীন পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে, যে কারণে তারা লোকালয় থেকে দূরে জঙ্গলের গভীরে থাকে। অধিকাংশ অজগর কিছুটা বৃক্ষবাসী। তবে নদী, হাওর কিংবা ঝিলের কাছেও এদের দেখা যায়। যেকোনো বন্যপ্রাণীর আবাস ঝুঁকির মুখে থাকলে এবং খাবারের সংকট হলে তারা লোকালয়ে বেরিয়ে আসে। অজগরের ক্ষেত্রেও আবাস সংকোচনের ফলে তাদের খাবার সংকট হচ্ছে। ফলে তারা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে খাবারের খোঁজে আসছে। তবে, আক্রান্ত না হলে অজগর মানুষকে আঘাত করে না। নিজের শিকারকে অজগর শরীর দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মারে। শিকারের আকার অনুযায়ী অজগরের হজমের সময় নির্ধারিত হয়, কোন কোন শিকার হজম করতে কয়েক মাস সময়ও লাগতে পারে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সুন্দরবনের অজগর লোকালয়ে প্রবেশের বেশ কয়েকটি কারণ আমরা প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করেছি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে। ফলে জেয়ারে উপকূলীয় নদ-নদীর পানিতে সুন্দরবনের ভূমির বড় একটি অংশ তলিয়ে যায়। অজগর যদিও ভূমি ও গাছে থাকে, তারপরও তারা সমস্যায় পড়ছে। অন্যদিকে, প্রাকৃতিকভাবে তাদের প্রজনন বেড়েছে। তবে সুন্দরবনে খাবারের সঙ্কট নেই। আজগর বা সাপের বিষয়ে ইতোপূর্বে কোন জরিপ করা হয়নি বলে তিনি জানান।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, খাবারের লোভে মূলত অজগরগুলো লোকালয়ে প্রবেশ করছে। অনেক সময় জেলেদের জালে অজগর ধরা পড়ে। এরপর জেলেরা ফিরে এসে তা গ্রামে ছেড়ে দেয়। সেই অজগর আবার ওই গ্রামে হানা দিয়েছে- এমন ঘটনাও এর আগে তদন্তে পাওয়া গেছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, লোকালয়ে একবার অজগর এলে তা বনবিভাগ বনে অবমুক্ত করে ঠিকই কিন্তু ওই সাপ খাবারের লোভে আবার সেই গ্রামেই বারবার ফিরে আসে। বণ্যপ্রাণীর আসা যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার কোন উপায় নেই। কারণ বন ও লোকালয় একই জায়গায়। মাঝখানে কোন বেড়া নেই। তিনি আরো জানান, সাপের সংখ্যা নিরুপণসহ এ বিষয়ে আগামীতে গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহ করা হবে। একই সাথে তিনি সাপের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বানও জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।