Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সুবাদে দক্ষিণাঞ্চলে অপার সম্ভবনার পর্যটন শিল্প বিকাশে কোন উদ্যোগ নেই

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০২২, ১২:৫২ পিএম

স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলে অপার সম্ভবনার পর্যটন শিল্পে নতুন দ্বার উন্মোচনের সুযোগ সৃষ্টি হলেও তা নিয়ে তেমন কোন বাস্তব উদ্যোগ লক্ষ্যনীয় নয়। অথচ পদ্মা সেতু হয়ে সাগর সৈকত কুয়াকাটার দুরত্ব মাত্র ২৬৫ কিলোমিটার। যা ঢাকা থেকে কক্সবাজারের চেয়ে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার কম। সম্পূর্ণ ফেরি বিহীন ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটায় সড়ক পথে ৬ ঘন্টার মধ্যে পৌছান সম্ভব হবে। এছাড়া শের এ বাংলা একে ফজলুল হক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের স্মৃতি বিজরিত বরিশালেও পৌছান সম্ভব হবে সাড়ে ৪ ঘন্টায়। তবে এজন্য ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেস ওয়েতে ভাংগা পৌছানোর পরে ১শ কিলোমিটার দক্ষিনে বরিশাল হয়ে ২১০ কিলোমিটার দুরে সাগর সৈকত কুয়াকাটা পর্যন্ত জাতীয় মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করার কোন বিকল্প নেই।
২০১৫ সালে ফরিদপুরÑভাংগাÑবরিশালÑকুয়াকাটা মহাসড়কের সম্ভাব্যতা সমিক্ষার পরে সে প্রকল্পটিও ঝুলে আছে। এ প্রকল্পের ভবিষ্যত এখন দীর্ঘসূত্রিতায় বাধা বলেই মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল।
এদিকে সাগর সৈকত কুয়াকাটায় রাষ্ট্রীয় পর্যটন করপোরেশন ১৯৯৫ সালে একটি হলিডে হোম এবং ২০১০ সালে একটি মোটেল নির্মানের পরে সেখানের পর্যটন শিল্পকে আরো গনমুখি ও পর্যটক বান্ধব করার আর কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। এমনকি কুয়াকাটা উন্নয়ন কতৃপক্ষ গঠন করা হলেও গত ৫ বছরে সেখানে সরকারী পর্যায়ে তেমন কোন প্রকল্প গ্রহন করা হয়নি। আজ পর্যন্ত কুয়াকাটার পরিকল্পিত উন্নয়নে কোন মাষ্টার প্লান পর্যন্ত চুড়ান্ত করা হয়নি। এমনকি বরিশাল বিভাগীয় সদরে আজ পর্যন্ত কোন পর্যটন মোটেলও নির্মিত হয়নি। এলক্ষে ২০১৮ সালে পর্যটন করপোরেশন জমি ইজারা নিয়ে বছর বছর ভাড়া পরিশোধ করলেও সে প্রকল্পটিও সম্পূর্ণ অন্ধকারে।
অথচ বরিশাল মহানগরী সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের একটি ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত। দেশ-বিদেশের পর্যটক সহ কর্ম উপলক্ষে দক্ষিণাঞ্চলে আগতরা এ মহানগরী ছুয়েই সর্বত্র যাতায়াত করেন। কিন্তু বরিশালই একমাত্র বিভাগীয় সদর যেখানে আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় পর্যটন সংস্থার কোন স্থাপনা গড়ে ওঠেনি।
অথচ এ মহানগরীতে একটি মোটেল এবং টুরিজম ট্রেনিং সেন্টার করার লক্ষে ২০১৮ সালে কির্তনখোলা নদীর তীরে বিআইডব্লিউটিএ’র অধুনালুপ্ত মেরিন ওয়ার্কসপের অভ্যন্তরে ৩০ বছরের জন্য ১ একর জমি লীজ গ্রহন করে পর্যটন করপোরেশন। ১৫৩ কোটি টাকা ব্যায় সাপেক্ষ ‘বরিশাল পর্যটন মোটেল ও ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন প্রকল্প’ নামের একটি ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন শেষে পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করা হয়েছিল বছর দেড়েক আগে। সেখান থেকে প্রকল্পটি অনুমোদন না দিয়ে অর্থ মন্ত্রনালয়ের সম্মতি গ্রহনের কথা বলা হয়। যা দেশের সরকারী সংস্থার প্রকল্পের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিরল ঘটনা বলে জানা গেছে।
কিন্তু অর্থ মন্ত্রনালয় আশ্চর্যজনকভাবে এ প্রকল্পটির জন্য সরকারী অর্থ বরাদ্বে সম্মতির পরিবর্তে প্রকল্প ব্যায়ের ৬৬.৬৬ ভাগ সরকারী অনুদান এবং অবশিষ্ট ৩৩.৩৪% শতকরা পাঁচ ভাগ সুদে ১৫ বছরে পরিষোধ করার শর্তে ঋন গ্রহনের কথা বলেছে। এরপর থেকেই বিষয়টি অনিশ্চয়তার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। ইতোপূর্বে সংস্থাটির কোন প্রকল্পে এধরনের শর্ত যুড়ে দেয়নি মন্ত্রনালয়।
ফলে পুরো প্রকল্পটি এখনো ঝুলে আছে। অথচ পর্যটন করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে জমির ইজারা বাবদ প্রতিবছর বিআইডব্লিউটিএ’কে প্রায় আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। প্রতিবছরই ইজারার অর্থ ২% করে বাড়ছে। বরিশালে প্রস্তাবিত ৮তলা মোটেল ভবনটিতে ৮০টি কক্ষ থাকবে । একাধীক লিফট সম্বলিত এ ভবনে দুটি এক্সিকিউটিভ স্যুট, ৩৮টি দৈত শয্যার কক্ষ ও ৪০টি তিন শয্যার কক্ষ নির্মানের প্রস্তাবনা ছিল। এছাড়াও অত্যাধুনিক মানসম্মত রেষ্ট্রুরেন্ট, পুল ক্যাফে, সুইমিং পুল, জিম ও স্পা সুবিধারও প্রস্তাব করা হয়েছে। মোটেলটির পাশের কির্তনখোলা নদীতে ভবিষ্যতে রিভার ক্রুজ-এর ব্যবস্থা সম্বলিত আরো একটি প্রকল্প বাস্তবায়নেরও কথা ছিল। ফলে পর্যটকগন মোটেলটির পার্শ্ববর্তি কীর্তনখোলা নদীতে নৌ-বিহারও করতে পারতেন।
এছাড়া এ পর্যটন মোটেলে সংযূক্ত ট্রেনিং সেন্টারটিতে প্রতি ব্যাচে ৪০ জন বেকার যুবক ও যুব মহিলাকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও টুরিজম-এর ওপর প্রশিক্ষন প্রদানের প্রস্তাব ছিল। সাড়ে ৩ মাসের এ প্রশিক্ষন শেষে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত সার্টিফিকেট প্রদানের কথা। ঢাকার বাইরে বরিশালে একটি ‘হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও টুরিজম ট্রেনিং সেন্টার’ স্থাপিত হলে বিদেশে বিপুল চাহিদার এ ধরনের দক্ষ কর্মী গড়ে তোলাও সম্ভব হত।
কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ মন্ত্রনালয়ের নানামুখি শর্তে পুরো প্রকল্পটি সম্পূর্ন অনিশ্চয়তার কবলে। অথচ ৩০ বছরের জন্য জমি ইজারা নিয়ে ইতোমধ্যে ৪ বছর অতিক্রান্ত হলেও প্রকল্প অনুমোদনেরই কোন খবর নেই।
তবে সরকারী প্রায় ১৬.১৮ কোটি টাকা ব্যায়ে বরিশাল মহানগরী থেকে ১৫ কিলোমিটার দুরে ঐতিহ্যবাহী দূর্গাসাগর দীঘির পাড়ে পর্যটন করপোরেশন একটি বিশ্রামাগার সহ পিকনিক স্পট গড়ে তুলছে। যা আগামী জুনের মধ্যেই চালু করা সম্ভব হবে বলে পর্যটন করপোরেশন সূত্র জানা গেছে। 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ