বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নড়াইল সদর উপজেলার বাশগ্রাম ইউনিয়নের এক প্রত্যন্ত এলাকা আগ্রাহাটি গ্রাম। এই গ্রামে ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আগ্রাহাটি প্রাইমারি স্কুল। গ্রামের এই স্কুল থেকে এ বছর কোনো শিক্ষার্থী প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না। শুধু তাই নয়, ২০০৮ সালের পর থেকে এই স্কুলে তুতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে কোনো ছাত্র-ছাত্রী পড়ছে না। সর্বশেষ ২০০৮ সালে দুইজন শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণিতে, একজন চতুর্থ, দুইজন তৃতীয়, দুইজন দ্বিতীয় এবং প্রথম শেণিতে পড়তো ১০ জন। বর্তমানে স্কুলে চারজন শিক্ষক থাকলে ও শিশুশ্রেণিসহ কাগজ-কলমে মোট ছাত্র-ছাত্রী আছে ২৩ জন। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী নন্দকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
সরেজমিন আগ্রাহাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল ১১টায় তিনজন শিশু শ্রেণির ছাত্র বাড়ির দিকে হাঁটছেন। একটি ক্লাসরুমের ভেতর বসে আছে প্রথম শ্রেণির চারজন আর দ্বিতীয় শেণির দুইজন শিক্ষার্থী, স্কুলে সর্বসাকূল্যে উপস্থিত ৯ জন। চারজন শিক্ষক তার দুইজন উপস্থিত আছেন, প্রধান শিক্ষক ছুটিতে, আর বাকি একজন শিক্ষক নাশকতার মামলায় সাসপেনশনে আছেন বছরখানেক ধরে।
স্কুলের প্রথম শ্রেনির ছাত্রী আদুরী জানায়, আমাদের ক্লাসে কয়জন ছাত্রছাত্রী তা আমি জানিনা, আমি সুলতানা, মাজেদা ও মারুফা আমরা এই চারজন প্রতিদিন স্কুলে আসি।
স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী লামিয়া জানায়, আমাদের শ্রেণিতে মোট চারজন ছাত্র আছে, এর মধ্যে আমি ও তানজিলা প্রতিদিন স্কুলে আসি, লিমু ও সাব্বির আসে না।
আগ্রাহাটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও একজন অভিভাবক মিজানুর রহমানের দেখা পাওয়া গেল, কিছুক্ষণ পরে তিনি জানান, বর্ষকালে এখানকার রাস্তা ভালো থাকে না তাই ছাত্র পাওয়া যায় না, চানপুরের কিছু অভিভাবকের সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে, আগামী বছর থেকে ১০ জন ছাত্র পাওয়া যাবে আশা করি।
পাশ্ববর্তী কুমড়ী গ্রামের পশ্চিমপাড়া থেকে ২৬ বছর আগে আগ্রাহাটি গ্রামে আসেন মিন্টু খা (৬০) তিনি জানান, আমরা যখন এখানে চলে আসি তখন এই গ্রামে প্রায় সাড়ে ৩’শ ঘর নমশুভ্র (জেলেসহ নি¤œবর্নের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক) ছিল। সে সময়ে এই স্কুলে দুই’শ থেকে আড়াই’শ ছাত্র-ছাত্রী ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে তারা ভারতে চলে যাওয়ার পরে এই গ্রাম এক সময় মানুষশূন্য হয়ে পড়ে।
স্কুলের সহকারী শিক্ষক শরীফ মোজাফফর হোসেন জানান, স্কুলের এই অবস্থা চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। গ্রামের ভোটার সংখ্যা ৫০-এর কম, আমরা এলাকায় ঘুরে ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এই স্কুলে উপবৃত্তি ও খাবারের ব্যবস্থা করলে ছাত্র-ছাত্রী বাড়বে। আমি দুই বছর হলো এই অবস্থা দেখছি, তাছাড়া ২০০৯ সাল থেকে এই স্কুলে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির কোনো ছাত্র ভর্তি হয়নি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার মিনা টেলিফোনে জানান, আমি ২০১০ সালে এ স্কুলে যোগদান করার সময় ছাত্র ছিল ১১ জন, পরে আরো কয়েকজন ছাত্র ভর্তি হয়।তবে এখানে ভর্তি হওয়ার পরে উপবৃত্তির আশায় ছাত্র-ছাত্রীরা অন্য স্কুলে চলে যায়। আশাকরি আগামীতে ছাত্র-ছাত্রী বাড়বে।
নড়াইল সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, দীর্ঘ দিন ধরে আগ্রাহাটি এবং নন্দকোল গ্রামের প্রাইমারি স্কুল দুটির একই অবস্থা চলছে। এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে জনপ্রতিনিধিদর সাথে কথা বলেছি। এলাকার রাস্তা উন্নয়ন হলে এবং শিশুদের টিফিনের ব্যবস্থা হলে এবং উপবৃত্তির ব্যবস্থা হলে আগামী বছরে আমরা তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি হলে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করাতে পারব।
জেলা প্রাথমিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জেলায় মোট ৫১৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৪ হাজার ৪২৬ জন এবং এবতেদায়ী মাদরাসা ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলে এক হাজার ৩১২জনসহ মোট ১৫হাজার ৭৩৮ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। তবে ব্যতিক্রম কেবল নড়াইল সদরের আগ্রাহাটি ও নন্দকোল-আগামী ২০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় এই দুই স্কুলের কোনো ছাত্র-ছাত্রী অংশ নিচ্ছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।