Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যাস বদলাচ্ছে, মিনি প্যাকের চাহিদা বাড়ছে

রাজশাহী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০২২, ২:০৪ পিএম

অভ্যাস বদলাচ্ছে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের। বড় বোতল কিংবা প্যাকেটের স্থলে জায়গা করে নিচ্ছে মিনি প্যাক। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধিতে চিরচেনা টান পোড়নে সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে জীবন ধারণ করা মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তের মানুষেরা বড্ড বিপাকে পড়েছে।

ধান,আম,পান, পুকুর, খালবিল ভরা মাছ আর শাকস্বব্জীর কৃষি প্রধান বরেন্দ্র অঞ্চল। এখানকার মানুষের আগের সুখের দিন নির্বাসনে চলে গেছে। জীবন ধারনের নূন্যতম ব্যবস্থা করতে গিয়ে চিড়ে চ্যাপ্টা অবস্থা। নিজেদের শ্রম ঘামে ফসল ফলিয়ে ফড়িয়াদের হাতে কমদামে বিক্রি করা ফসল আবার বেশী দামে তাদের কিনতে হচ্ছে। সবক্ষেত্রে যেন ভর করেছে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বেনিয়াদের প্রেতাত্মা।

ফসল ওঠার আগেই তাদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে কোশলী তৎপরতার কাছে অসহায় কৃষক। কৃষি মৎস্য, পোল্ট্রি সবখানে তাদের থাবা। পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রন করছে বাজার ব্যবস্থাপনা। ফলে সবকিছুই বাড়তির দিকে। শুধু মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্ত মানুষেরা আয় আর কর্মস্থান নি¤œমুখি যা আয় তা দিয়ে সংসার চলেনা। চারিদিকে হা পিত্যোস। কি গ্রাম কি শহর একই অবস্থা।
আমের রাজ্য রাজশাহী অঞ্চলে এখন আমের ভর মওসুম। বাজার ভরা আম সাথে এবার দামও গতবারের চেয়ে দ্বিগুন তিনগুন। আম বিক্রেতাদের সাফ জবাব সব জিনিষের দাম বেড়েছে আমের দামও বেড়েছ্ ফলে বনেদি জাতের আমের স্বাদ পরখ করে দেখতে পারেনি আম জনতা। এবার গুটি আমের দামও চড়া। বাজার ভরা আম দেখে রসনা মেটাতে হচ্ছে সাধ্যহীন মানুষদের। আড়তে খানিকটা নরম হওয়া আমের চাহিদা এবার কম নয়। কাটা আম হিসাবে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে জিনিষ পত্রের দাম নিয়ে কথা বলতেই সোনাদিঘী মোড়ের একজন বই বিক্রেতা নির্মলা মিশ্রের ‘‘এমন একটা ঝিনুক খুঁজে পেলাম না যাতে মুক্তা আছে’’। সেই সুরে সুরে বলেন এমন একটা জিনিষ দেখান যার দাম না বেড়েছে।
রাজশাহীর বড় বাজার সাহেব বাজার। সেখানে বেশ ক’জন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানাযায় দামের ঘোড়া লাফাচ্ছেই। তারা বলেন আমরা দাম বাড়ায়না। এখন সব নিয়ন্ত্রন করে কয়েকটি বড় বড় কোম্পানী। তাদের পরিবেশকরা মাল সরবরাহ করে। তারাই দাম নির্ধারন করে দেয়। যেদিন থেকে বিভিন্ন কোম্পানীর লোকজন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে ঢুকেছে সেদিন থেকে সব এলোমেলো হয়ে গেছে।

সাগর ষ্টোরের মালিক আলাপচারিতায় জানালেন তাদের ব্যবসার মন্দার কথা। মানুষ আর আগের মত জিনিষপত্র কিনছেনা। এক সময় যারা দু’এক লিটার সোয়াবিন তেল নিত তারা এখন আড়াইশো গ্রামে নেমেছে। চাল, ডাল, দুধ, চিনি সব কিছুই কম কম কিনছে। আগে বড় সাবান শ্যাম্পু যারা কিনতো এখন তারা ছোট আকারের সাবান আর শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক কিনছে। চাহিদা বেড়েছে ছোট ছোট প্যাকেটের মালের। আগে যারা সপ্তাহে সপ্তাহে বাজার করতেন তারা এখন মাসে দু’একবার আসছেন। সবুর নামের এক চা দোকানী জানালেন এখন দুধ চিনি চায়ের চাহিদা কমছে। লেবু চা পানকারীর সংখ্যা বাড়ছে। কারন দাম। সিঙ্গারা, সমুচা, পুরি, ফুচকা, চটপটির দামও বেড়েছে। আবার আকারও কমেছে। পদ্মাতীরের বিনোদন কেন্দ্রের ফুচকা চটপটি ওয়ালারা জানালেন ক্রেতার মন্দার কথা। অনেকে একবাটি চটপটি কিংবা একপ্লেট ফুচকা কজন মিলে ভাগাভাগি করছে। আটার দাম বেড়ে যাবার প্রভাব পড়েছে সকালের নাস্তার টেবিলে। বিকেলের নাস্তায় টান পড়েছে। ঘরে বাইরে একই অবস্থা।

শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে বাইরে থেকে লেখাপড়া করতে আসে লাখ দেড়েক শিক্ষার্থী। এদের খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থীর আবাসন হয় বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ হোস্টেলে। অন্যদের আশ্রয় নিতে হয় বিভিন্ন মানের ব্যাক্তি মালিকানার ছাত্রাবাস, ছাত্রীনিবাসে। সীট ভাড় বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে খাবার খরচ। বেশীর ভাগ মেসে মালিক খাবার সরবরাহ করে। এখন রুটি পরোটার স্থলে ভর করেছে চালে ডালে খিচুড়ী। গোটা ডিম ভাজা এখন অর্ধেক হয়েছে। আলুভর্তার পরিমানও কমেছে। দুপুর, রাতের খাবারে আর তৃপ্তি নেই। রুই, কাতল মাছের স্থলে পাঙ্গাস, সিলভারকাপ, লাইলোনটিকা ভর করেছে। বড় ছাত্রাবাসে নিজেরা রান্না বান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। আবার হোটেলে খাওয়া ব্যায় বহুল। একটু কম দামের ছাত্রাবাসে বুয়া দিয়ে রান্না করার সুযোগ রয়েছে। এখন আমিষের বদলে নিরামিস ভর করেছে। বিকেলে অনেক মেয়ে শিক্ষার্থীকে বাজার করতে দেখা যায়। তাদের জীবন ডিম ভাজা আর ভর্তাতে ঘুরপাক খাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ