পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গণপূর্ত বিভাগের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম এবং তার স্ত্রী সাবিহা আলমের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পুনরায় অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্বতঃপ্রণোদিত রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের ডিভিশন বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। আদালত তার নির্দেশে বলেন, পূর্বতন যে কর্মকর্তা অভিযোগটি অনুসন্ধান করেছেন তাকে বাদ দিয়ে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে দেয়া স্বপ্রণোদিত রুল নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেয়া হয়। গতবছর ২ মার্চ ‘২০ কোটিতে প্রকৌশলী আশরাফুলের দায়মুক্তি! দুর্নীতি দমনে ‘দুদক স্টাইল’ শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ডিভিশন বেঞ্চ প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করেন। রুলে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছ থেকে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে হাইকোর্টকে সহায়তা করতে দৈনিক ইনকিলাবের বিশেষ সংবাদদাতা সাঈদ আহমেদকেও নির্দেশনা দেয়া হয়। পরবর্তীতে প্রকৌশলী আশরাফুল আলম দম্পত্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়। রেকর্ডপত্র দাখিল করা হলে গতকাল এর ওপর শুনানি হয়।
ইনকিলাব প্রতিবেদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। সরকারপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিনউদ্দিন মানিক শুনানিতে অংশ নেন।
শুনানির শুরুতেই অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, সংবাদ মাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সংবিধান সংবাদকর্মীকে তার পেশাগত দায়িত্ব পালনে স্বাধীনতা দিয়েছে। একাধিক মামলার রেফারেন্স দিয়ে তিনি বলেন, আদালত আমাদেরকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করতে বলেছেন। আমরা সেটি করেছি। দুদক কর্মকর্তা আশরাফুল আলম দম্পতিকে দায়মুক্তি প্রদানের সুপারিশ সংবলিত যে প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিয়েছেন-ইনকিলাব প্রতিবেদনে সেই তথ্যগুলোই উল্লেখ করা হয়েছে। দুদক প্রতিবেদন এবং ইনকিলাব প্রতিবেদনের তথ্য অভিন্ন। সাঈদ আহমেদ একজন সুপরিচিত, সিনিয়র পেশাদার সাংবাদিক। তিনি কোন উৎস থেকে এসব তথ্য পেলেন-আদালত সেটি জানতে চাইতে পারেন না। গণমাধ্যমকে সোর্স বলতে বাধ্যও করতে পারেন না।
এ সময় আদালত বলেন, আমরা তথ্যের সোর্স জানতে চাইনি। তিনি যেকোনো উৎস থেকেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। আদালত বলেন, এটি স্পষ্ট যে প্রতিবেদনে দুদকের ‘হিডেন করাপশন’কে অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করা হয়েছে।
এসময় দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আশরাফুল আলম এবং দুদকের অনুসন্ধান নিয়ে দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনকে ‘মাফিয়া জার্নালিজম’ আখ্যা দেন। তিনি অনুসন্ধানীয় প্রতিবেদনটির মধ্য থেকে কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করে বলেন, গুঞ্জনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের অথরিটি এবং ইন্টিগ্রিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানকে ম্যালাইন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি ‘রিয়াজউদ্দিন খান বনাম মাহমুদুর রহমান’ মামলার উদ্ধৃত করে ইনকিলাব প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ারও আবেদন জানান তিনি।
তবে দুদক আইনজীবীর সব যুক্তি নাকচ করে দিয়ে আদালত আশরাফুল আলম দম্পতির বিরুদ্ধে নতুন করে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। এক্ষেত্রে আদালত পূর্বতন কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে নতুন কর্মকর্তাকে পুনঃঅনুসন্ধান করতে বলেন। আদালত বলেন, এটি কোনো আদালত অবমাননা মামলা নয়। তাই প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো বিষয় এখানে নেই। দুদক যদি সংবাদ মাধ্যমের কোনো প্রতিবেদন দ্বারা ‘অফেন্ডেড’ হয়েছে বলে মনে করে তাহলে প্রেসকাউন্সিলে প্রতিকার চাইতে পারে।
শুনানির এ পর্যায়ে এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিনউদ্দিন মানিক বলেন, প্রতিবেদনটি মিথ্যা হয়ে থাকলে দুদক প্রতিবাদ দিতে পারতো। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের ৫ দিনের মাথায়ও দুদক কোনো প্রতিবাদ করেনি।
তখন দুদক আইনজীবী বলেন, প্রতিবেদন প্রকাশের ৬ দিনের মাথায় স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করা হয়। বিষয়টি সাব-জুডিস হয়ে যাওয়ায় প্রতিবাদ জানানো যায়নি। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত উপরোক্ত আদেশ দেন। এ সময় পক্ষভুক্ত প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের কৌঁসুলিও উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত: গত বছর ২ মার্চ দৈনিক ইনকিলাবে ২০ কোটিতে প্রকৌশলী আশরাফুলের দায়মুক্তি! দুর্নীতি দমনে ‘দুদক স্টাইল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে প্রকৌশলী আশরাফুল আলম এবং তার স্ত্রী সাবিহা আলমের দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ২০১৯ সালে আশরাফুল আলম দম্পতির বিরুদ্ধে দুদক সম্পদ অনুসন্ধান (নথি নং-০০.০১.০০০০.৫০১.০১.০৬১.১৯) শুরু করে। দাখিলকৃত বিবরণীতে আশরাফুল আলম ৪২ লাখ ৫৫ হাজার ৩১৩ টাকা ব্যাংকে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। বিবরণী যাচাইকালে ৪৭ লাখ ৩৫ হাজার ২৮ টাকার তথ্য বেরিয়ে আসে। অর্থাৎ ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৫.১২ টাকার সম্পদের তথ্য তিনি গোপন করেন। সম্পদ বিবরণীতে আশরাফ পৈত্রিক, ক্রয়কৃত এবং হেবা দলিলে প্রাপ্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি মিলিয়ে ৫৫ লাখ ৮ হাজার ৬৭২ টাকার সম্পত্তি রয়েছে- মর্মে উল্লেখ করেন। যাচাইয়ে বেরিয়ে আসে ৮১ লাখ ৮৯ হাজার ১০৭.৪৬ টাকার সম্পদ। অর্থাৎ ২৬ লাখ ৮০ হাজার ৪৩৫.১২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেন। এরকম কয়েকটি খাতে বিপুল অর্থ-সম্পদের তথ্য গোপন করার বিষয়টি প্রমাণিত হয় দুদক কর্মকর্তার অনুসন্ধানে।
এ প্রেক্ষিতে সংস্থাটির তৎকালীন সহকারী পরিচালক (অনু: ও তদন্ত-১) মো. সাইদুজ্জামান ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর আশরাফুল আলম ও সাবিহা আলমের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর সুপারিশ করে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবিহা আলমের নিজের কোনো উপার্জন না থাকা সত্ত্বেও স্বামী আশরাফুল আলমের অবৈধ উপায়ে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ দ্বারা নিজ নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৮২ হাজার ৬৩৫ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) এর ৪(২), (৩) এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন।
আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে ২৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭২৩.৪৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক আইনের ২৬(২) ও ২৭ (১) ধারায় পৃথক মামলা রুজুর সুপারিশ করেন। কিন্তু জমা দেয়ার কিছু দিনের মধ্যেই রহস্যজনকভাবে প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করা হয়। সহকারি পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান প্রত্যাহার করে নতুনভাবে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা পান। নতুন এই ‘নির্দেশনা’ আসে ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের শীর্ষ পর্যায় থেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।