Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আমতলীতে গৃহবধূকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে তালাবদ্ধ ঘরে আটকে রাখার অভিযোগ ‘৯৯৯’ ফোন পেয়ে পুলিশের উদ্ধার, হাসপাতালে ভর্তি

বরগুনা জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০২২, ৭:২১ পিএম

বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামে ৩ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য লিজা বেগম (২০) নামে এক গৃহবধূকে দু’দফা নির্যাতনের করে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ‘৯৯৯’ থেকে ফোন পেয়ে আমতলী থানার পুলিশ গুরুতর আহত অবস্থায় ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে আমতলী হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

নির্যাতিত ওই গৃহবধূ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আঠারগাছিয়া গ্রামের মিলন তালুকদারের মেয়ে লিজা বেগমের সাথে গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী গ্রামের মানিক গাজীর ছেলে নান্নু গাজীর ২০১৭ সালে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় লিজার বাবা মিলন তালুকদার মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ১ ভরি স্বর্নের কানের দুল, গলার চেইন ও জামাই নান্নু গাজীকে গলার চেইনসহ সংসার সাজানোর জন্য প্রায় ২ লক্ষ টাকার মালামাল কিনে দেন। যৌতুক লোভী স্বামী নান্নু গাজী লিজার বাবার বাড়ী থেকে ব্যবসার জন্য প্রায়ই টাকা এনে দিতে বলত। লিজাও সাধ্যমত বাবার নিকট থেকে টাকা এনে দিত। স্বামীর চাহিদা মত টাকা এনে না দিলেই স্ত্রী লিজার উপর চলত নির্যাতন।

শনিবার সকালে স্বামী নান্নু গাজী স্ত্রী লিজা বেগমকে তার বাবার বাড়ী থেকে ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন। লিজা বাবার বাড়ি থেকে এত টাকা এনে দিতে অস্বীকার করলে স্বামী নান্নু গাজী লাঠি দিয়ে বেদম পিটিয়ে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন। মারধরে সহায়তা করেন নান্নুর বাবা মানিক গাজী, ভাসুর শাহীন গাজী ও মোখলেছ গাজী। যৌতুকের টাকা এনে না দেওয়া মঙ্গলবার সকালে স্বামী নান্নু গাজী শ্বশুর মানিক গাজী, ভাসুর শাহীন গাজী ও মোখলেছ গাজী মেহগিনি লাঠি দিয়ে দ্বিতীয় দফা পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন।

লিজার বাবা মিলন তালুকদার মেয়েকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে ঘরে তালবদ্ধ করে রাখার খবর পেয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে ৯৯৯ ফোন করেন। সেখান থেকে আমতলী থানাকে জানালে আমতলী থানার এসআই ইমাম হোসেন গুলিশাখালী গ্রামের নান্নু গাজীর ঘর থেকে গৃহবধূ লিজাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বিকেল সাড়ে ৪ টার সময় উদ্ধার করে আমতলী হাসপাতালে এনে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন।

আমতলী থানার এসআই ইমাম হোসেন জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় গৃহবধূ লিজা বেগমকে উদ্ধার করে আমতলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অভিযুক্ত স্বামী নান্নু গাজী বলেন, যৌতুকের জন্য নয় পারিবারিক কলহের জন্য মারধর করেছি। চিকিৎসা না করিয়ে বাড়ীতে আটকে রাখার বিষয়ে জানতে চাইতে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

অভিযুক্ত নান্নু গাজীর বাবা মানিক গাজী বলেন, ছেলের বউ কথা শোনে না তাই মারধর করেছি। ছেলের বউকে মারতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।

গৃহবধূ লিজার বাবা মিলন তালুকদার জানান, যৌতুকের জন্য নান্নু গাজী শ্বশুর মানিক গাজী, ভাসুর শাহীন গাজী ও মোখলেছ গাজী প্রায়ই আমার মেয়েকে মারধর করত। তারা দুধর্ষ প্রকৃতির লোক। তারা আমার মেয়ের নিকট ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে। টাকা না দেওয়ায় গত শনিবার এবং মঙ্গলবার গাছের ডাল দিয়ে দু’দফা পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে। ভয়ে আমি ওই বাড়িতে মেয়েকে উদ্ধারের জন্য যাইনি। তাই ‘৯৯৯’ ফোন দিয়েছি। আমি এঘটনার বিচার চাই।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মিজানুর রহমান মুঠোফোনে জানান, ‘৯৯৯’ থেকে ফোন পেয়ে গুলিশাখালী গ্রামে পুলিশ পাঠিয়ে নির্যাতিত গৃহবধূ লিজা বেগমকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্ততি চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ