Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছাতকে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে, ধীরগতিতে কমছে পানি বাড়ছে দুর্ভোগ

ছাতক (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০২২, ৯:৫১ পিএম

ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ছাতক-দোয়ারায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষের আর্তনাদ থামছেনা। রোববার থেকে ধীরগতিতে কিছুটা পানি কমছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানুষের খাদ্য ও খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বন্যায় ভেসে গেছে অনেকের ঘর-বাড়ি, আসবাবপত্রসহ ধান-চাল। পানির প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে খামারের মাছ ও গবাদিপশু। বলতে গেলে দুই উপজেলার একটুকরো পানি বিহীন জায়গা ছিলনা। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে বন্যা আর মানুষের কান্না একাকার হয়েছিল। বন্যার পানিতে নৌকা ডুবে শিশুসহ ৫জন লোক মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

জানা যায়, গত ১৫ জুন থেকে ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ছাতক-দোয়ারাবাজার উপজেলা প্লাবিত হয়ে পড়ে। ছাতক-সিলেট, ছাতক-দোয়ারাসহ সবকটি সড়ক তলিয়ে যায়। যে কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নৌকাই ছিল মানুষের যাতায়াতের এক মাত্র ভরসা। কিন্তু এ সুযোগে নৌকার মালিক-শ্রমিকরা ফুলে গেছে। হাওর, নদীপথে ৫ কিলোমিটার যাতায়াতে তারা ১০-১২হাজার টাকা আদায় করেছে। ছাতক-থেকে গোবিন্দগঞ্জে ও মুক্তিরগাঁও যাওয়ার পথে পৃথক নৌকা ডুবিতে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। জাউয়া ডিগ্রি কলেজে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে নৌকা ডুবিতে মারা গেছে এক কন্যা শিশু। দোয়ারাবাজারে নৌকাযোগে স্কুলে যাওয়ার পথে একই পরিবারের ভাই-বোনের মৃত্যু হয়েছে।

১৬ জুন থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন কাটিয়েছিলেন ছাতক-দোয়ারার মানুষ। ছিলনা মোবাইল নেটওয়ার্ক। পানি কমতে শুরু হওয়ায় রোববার রাত থেকে কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে।

দোয়ারাবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি দেবদুলাল ধর তার ফেসবুকে লিখেছেন, বন্যায় দোয়ারা উপজেলায় ৯০ ভাগ মানুষের ঘরে পানি ছিল। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটাছুটি করেন। উপজেলাসহ থানা কার্যালয়ে পানি ছিল। একদম অসহায় হয়ে পড়েছিলেন মানুষ। এদিকে বন্যার পানি ছাতক উপজেলা পরিষদের সকল কার্যালয়, পৌরসভার কার্যালয়, থানা ক্যাম্পাসে পানি প্রবেশ করেছিল। দুই উপজেলার লাখ লাখ মানুষ এখনও পানিবন্দি রয়েছেন। অনেকগুলো দ্বিতল ভবনে ছাদে ছামিয়ানা টানিয়ে বসবাস করছেন মানুষ। বন্যার পানিতে ছাতক-সিলেট রেলপথও তলিয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে রেলের উঁচু জায়গায় গবাদিপশুসহ আশ্রয় নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। হাট-বাজারের কোন দ্বিতল ভবন খালী নেই। সব ভবনেই মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মূল্যে খাদ্যসহ মালামাল বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার থেকে ছাতক-দোয়ারায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবশিষ্ট কিছু মানুষকে উদ্ধার করে পিসবোর্ড যোগে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে পানি থাকায় সেনা সদস্যরা তাদের গাড়ি দিয়ে মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন।

গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ সাধারণ সম্পাদক রইছ আলী জানান, সোমবার দুপুরে সরকারের পক্ষ থেকে গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নে ২শ'জনকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণকৃত প্রতিটি প্যাকেটে চিড়া, মুড়ি, গুড়, মোমবাতি, ম্যাচ ও এক প্যাকেট বিস্কুট ছিল।

ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান জানান, আমরা এখনো পানির উপর ভাসছি। পানি আগে কমতে হবে, সড়ক পথে গাড়ি চলতে হবে। পানি না কমলে, গাড়ি না চললে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ পৌঁছাতে সমস্যা হবে। তিনি বলেন, সোমবার উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বন্যা দুর্গত মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ