Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

খুলনার কয়রায় মেঘ করলেই বিদ্যুৎ উধাও

বাঁধা ঘের ও বিলের মধ্যে ৪৫ কি.মি লাইন

মোস্তফা শফিক, কয়রা (খুলনা) উপজেলা থেকে : | প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০২২, ১২:০২ এএম

খুলনার কয়রা উপজেলায় আকাশে কালো মেঘ ও বাতাসের বেগ একটু বাড়লেই চলে যায় বিদ্যুৎ। তিন থেকে চার ঘণ্টা লেগে যায় আবার ফিরে আসতে। কখনো কখনো সেটি এক থেকে দুই দিনেও স্বাভাবিক হতে পারে না।

এখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রধান বাঁধা সাতক্ষীরা গ্রীড থেকে ঘের ও বিলের মধ্য দিয়ে আসা ৪৫ কিলোমিটার লাইন। এই লাইনই এখন বিদ্যুৎকর্মীদের কাছে আতঙ্কের বিষয়। কখন, কোথায় ট্রান্সফর্মার ব্রাস্ট ও আগুন ধরে লাইন বিচ্ছিন্ন হয়-এ নিয়েই তাদের দিনভর ব্যস্ত থাকতে হয়। এ ছাড়া নারিকেল, কড়ইসহ অন্যান্য গাছের ডালা ও পাতা পড়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কয়রা জোনাল অফিসে সাতক্ষীরা গ্রীডের মাধ্যমে উপজেলাটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সাতটি ইউনিয়নে মোট গ্রাহক ৬৫ হাজার ২৬০ জন। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা ৫০ হাজার ৯৬৪ ও বাণিজ্যিক গ্রাহক ৩ হাজার ৯৬৮ জন। সি আই গ্রাহক ৮১৭ জন, শিল্প গ্রাহক ৪৪৯ জন, সেচ ৬২ জন। কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৬৩ জন। আমাদী ইউনিয়নের হাতিয়ারডাঙ্গা ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নে ফুলতলা বাজারে স্থাপিত ২টি অভিযোগ কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রাহকসেবা চলছে। ৬টি ফিডের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে সঞ্চালন লাইনগুলো। ১৮ জন লাইনম্যান প্রতিদিন গ্রাহকদের বিভিন্ন অভিযোগের সুরাহা করতে মাঠে কাজ করেন।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের জোড়শিং গ্রামের গ্রাহক শরীফুল ইসলাম বলেন, কোন নোটিশ ছাড়াই হঠাৎ হঠাৎ দিনভর বিদ্যুৎ থাকে না। অফিসে খোঁজ নিলে বলা হয়, সাতক্ষীরা লাইনে ঝামেলা হয়েছে। অপেক্ষা করেন, আমরা কাজ করছি। এছাড়াও আকাশে কালো মেঘ ও ঝড়-বাতাস দেখা দিলে বিদ্যুৎ থাকে না। কয়েক দিন আগে কয়েকটি স্থানে গাছ পড়লে আমাদের গ্রামে দুই দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ লাইন সচল হয়নি।
মহারাজপুর গ্রামের গ্রাহক আছাফুর রহমান বলেন, আগে বাতাস বাড়লে ঘর-দরজা ভেঙে পড়া নিয়ে আতঙ্কে থাকতাম। কিন্তু এখন সঙ্গে যোগ হয়েছে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া। লাইনের ওপর একবার গাছ পড়লে ৮-১০ ঘণ্টায়ও বিদ্যুৎ ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে না। কখনো কখনো এটা এক-দুই দিনেও গড়ায়। কয়রা সদরস্থ কয়রা কম্পিউটার ইন্সটিটিউট এর পরিচালক এম. রকিব হাসান বলেন, বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে শিক্ষার্থীদের আইটি কোর্স সম্পন্ন করতে পারছি না। এছাড়া বার বার বিদ্যুৎ চলে যাওয়া ও ভোল্টেজ ওটা নামার কারনে ল্যাবের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্লী বিদ্যুতের একজন লাইনম্যান বলেন, আকাশে কালো মেঘ ও বাতাস বাড়তে দেখলেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। বেশী আতঙ্কে থাকি সাতক্ষীরা গ্রীড থেকে আমাদের হাতিয়ারডাঙ্গা উপকেন্দ্রে আসা ৪৫ কিলোমিটার লাইন নিয়ে।এই লাইনে সমস্যা হলে মাছের ঘেরের মধ্য দিয়ে সমস্যা খুঁজতে হয়।
এখন গড়ে প্রতিদিন ১০-১২টি অভিযোগ সমাধান করলেও আকাশে কালো মেঘ ও ঝড়-বাতাস দেখা দিলে তা বেড়ে ৮০-৯০টির মতো দাঁড়ায়। কখনো কখনো দিন-রাত কাজ করে লাইন চালু করতে হয়। জোনাল অফিসে আরও ১০-১৫ জন লাইনম্যান পদায়ন করলে এ দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমে যেতো।
মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-আল মাহমুদ বলেন, আমরা খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় আর আমাদের বিদ্যুৎ আসে সাতক্ষীরা গ্রীড থেকে। আমাদের এখানে কোন সমস্যা না কিন্তু সাতক্ষীরার লাইনে সমস্য। যে কারণে আমাদেরকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পড়তে হয়।
খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কয়রা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. ছিদ্দিকুর রহমান তালুকদার বলেন, ১টি উপকেন্দ্রের মাধ্যমে এ উপজেলায় আমাদের এক হাজার ৫৯০ কিলোমিটার লাইন পরিচালনা করতে হয়। প্রতিদিন এখানে সাড়ে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রধান বাধা সাতক্ষীরা গ্রীড থেকে ঘের ও বিলের মধ্য দিয়ে আসা ৪৫ কিলোমিটার লাইন। জাতীয় চাহিদা সমন্বয় করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই আমাদের ২-৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম দেওয়ায় লোডশেডিং করতে হয়। তারপরও আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ