Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রবল বর্ষণ আর সাগরের জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চলে নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার ওপরে

সাগর উজানের পানি গ্রহণ না করায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি বিলম্বিত হতে পারে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২২, ৬:৩৮ পিএম | আপডেট : ৬:৪১ পিএম, ১৯ জুন, ২০২২

সম্প্রতিককালের প্রবল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত। রোববার সন্ধা ৬টা পর্যন্ত বরিশালে ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে দুপুর ৩টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত মাত্র ৩ ঘন্টায়ই ৬৫ মিলি বৃষ্টি হয়েছে। বরিশাল মহানগরীর বেশীরভাগ রাস্তাঘাট পানির তলায়। মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চালের বেশীরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে আষাঢ়ের পূর্ণিমার ভরা কাটাল পেরিয়ে মরা কাটালেও সাগর ফুসে ওঠার সাথে উজানের ঢলের পানিতে উপক’লের ভাটি মেঘনা, বিষখালী ও বলেশ^র নদীর পানি বিপদ সীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সাগর বণ্যা কবলিত উজানের পানি গ্রহন করছে না।

সারা দেশের নদ-নদী সমুহের অন্তত ৭০ভাগ পানি দক্ষিণাঞ্চলের মেঘনা, তেতুলিয়া, বুড়িশ^র, বলেশ^র, বিষখালী ও সন্নিহিত নদ-নদী দিয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়ে থাক। দক্ষিণাঞ্চলের অনেক নদ-নদীই দুকুল ছাপিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উপক’লের বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোর প্রায় সবই এখন জোয়ারের পানিতে সয়লাব। সাথে রোববার দুপুরের পরে ব্যপক বজ্র গর্জন আর ভারী বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক’লভাগে জনজীবনে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। রোববার সন্ধা ৬টায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উপকূল যুড়ে বজ্র বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। সাগর কিছুটা উত্তাল রয়েছে।
নদÑনদীগুলোতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে ভোলাÑলক্ষ্মীপুরের ইলিশাঘাট সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ ফেরিঘাটই জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। ফলে দিন-রাতের বেশীরভাগ সময়ই যানবাহন পারাপার প্রায় বন্ধ থাকছে। জোয়ারে সাগর থেকে বাড়তি পানি উপক’লভাগে চলে আসায় দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে বিশাল এলাকা প্লাবিত হবার শংকা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। সাথে বঙ্গোপসাগর উজানের ঢলের পানি গ্রহন না করায় উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের বণ্যা পরিস্থিতির উন্নতিও ব্যাহত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের সর্বশেষ হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের ৯টি পয়েন্টের মধ্যে ৪টিতেই পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য সবগুলো স্থানে বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও তা ছুই ছুই করছে। দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করায় সাগরে উজানের বন্যার পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে পরিস্থিতির আরো অবনতির আশংকা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল মহল। এমনকি এ সময়ে সাগর স্বাভাবিকভাবে উজানের পানি গ্রহন না করলে উত্তরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি যথেষ্ঠ বিলম্বিত হবারও আশংকা করছেন পানি বিশেষজ্ঞগন।
তিনদিন আগে মেঘনা ও বিষখালী সহ উপক’লের ৫টি স্থানে নদীর পানি বিপদ সীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক’লের বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ও চরসমুহে বসবাসরত হাজার হাজার বসতি ও জনপদ প্লবিত হয়ে গেছে। একদিন পরে পরিস্থিতির কিঞ্চিত উন্নতি হলেও রোববার সকাল পর্যন্ত ৫টি স্থানেই বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। সাথে রোবববার দিনভরই প্রবল বর্ষণে পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। ফলে আসন্ন খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান খাদ্য ফসল আমনের বীজতলা নিয়েও কৃষকের দুঃশ্চিন্তা ক্রমশ বাড়ছে। যেসব এলাকার কৃষকরা ইতোমধ্যে বীজতলা তৈরী করেছে, তার বেশীরভাগই প্লাবনের শিকার।
এমনকি উজানে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের পানি সাগরে নিয়ে যাবার সময় সবগুলো নদÑনদী দুকুল ছাপিয়ে প্রবাহিত হবার সাথে জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দনাদার খাদ্য ফসল আমন কিছুটা ঝুকিতে রয়েছে। আসন্ন খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭ লাখ হেক্টর জমিতে ১৫ লাখ টনের মত আমন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারন করেছে কৃষি মন্ত্রনলয়। এলক্ষে কৃষকরা বীজতলা তৈরী করলেও সাগরের জোয়ার আর উজানে ঢলে কৃষকের কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাজ ক্রমশ গভীর হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, বরিশাল মহানগরী সংলগ্ন কির্তনখোলা ও ভোলা শহরের পাশের খেয়াঘাট এলাকায় তেতুলিয়া নদীর পানি বিপদ সীমার কাছে প্রবাহিত হলেও দৌলতখানে মেঘনার পানি দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার, তজুমদ্দিনে দশমিক ৩৭ সেন্টিমিটার, বরগুনার পাথরঘাটায় দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া অন্য সবগুলো পয়েন্টেই নদ-নদীগুলোর পানি বিপদ সীমা প্রায় ছুই ছুই করছে।
এদিকে রোববার সকাল থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত বরিশালে প্রায় ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হলেও চলতি মৌসুমেও গত বছরের মত দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান এখনো কম। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু সময় মতই উপক’লভাগ হয়ে সারা দেশে বিস্তারলাভ করলেও গত কয়েকটি মাসের মত চলতি মাসেও বৃষ্টিপাতের পরিমান এখনো কিছুটা কম। তবে গত দু-তিন দিন সাগর থেকে ধেয়ে আসা সঞ্চালনশীল মেঘমালা বৃষ্টি ঝড়াচ্ছে। অপরদিকে সাগরের জোয়ারের বানের সাথে উজানের ঢলের পানি আর মাঝারী থেকে ভারী বৃষ্টিপাতে দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক’লভাগেও পরস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকেই যচ্ছে।
তবে চলতি জুনে বরিশালে ৪৬০ থেকে ৫১০ মিলি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও মাসের প্রথম ১৯ দিনে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র দেড়শ মিলিমিটারের মত। তবে সোমবার সকালের পরবর্তি ৪৮ ঘন্টা পরে পরিস্থিতির সামান্য পরিবর্তেনের কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।
তবে পূর্ণিমার মরা কোটালের মধ্যেও মাঝারী থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভবনার কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। গত তিনদিনের মত সামনের দিনগুলোতেও মাঝারী থেকে ভারি আষাঢ়ী বর্ষন হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে।
আবাহাওয়া বিভাগ থেকে মৌসুমী বায়ু দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশে সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় থাকার কথা জনিয়ে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চল এবং উপক’লীয় এলাকায় হলকা থেকে মাঝারী বর্ষনের সাথে কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভবনার কথাও বলা হয়েছে। ফলে সাগরের জোয়ারে ভর করে আসা পানির সাথে উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে দক্ষিণাঞ্চলের নদÑনদীগুলো বিপদ সীমা অতিক্রম করে দুকুল ছাপিয়ে প্রবাহিত হবার আশংকা আরো বাড়ছে। বাড়ছে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল অমান-এর ঝুকিও। ১৯-৬-২০২২.



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ