Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশ চীন ও জাপানী দু হাজার কোটি টাকায় নির্মিত দক্ষিণাঞ্চলে আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু চালু হচ্ছে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২২, ১২:১৯ পিএম | আপডেট : ১২:৪৫ পিএম, ১৯ জুন, ২০২২

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর সাথে প্রায় দু হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে দক্ষিনাঞ্চলের আরো দুটি জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুর নির্মান কাজ শেষে চালু হতে যাচ্ছে। আগামী মাসে এসব সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক পরিবহন খাতে আরো একধাপ উন্নয়নের মাইল ফলক রচিত হবে বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞগন। এরমধ্যে চলতি মাসেই বরিশালÑখুলনাÑমোংলা মহাসড়কের বেকুঠিয়াতে কঁচা নদীর ওপর ‘৮ম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেত’ু এবং আগামী মাসেই বরিশাল Ñ গোপালগঞ্জ Ñ নড়াইল Ñ যশোর Ñ বেনাপোল মহাসড়কের মধুমতি নদীর ওপর ‘কালনা সেতু’র নির্মান কাজ শেষ হচ্ছে। চীনা অনুদান ও জাপানী ঋনে নির্মিত এসব সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে সারা দেশের সড়ক পরিবহনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।
এমনকি চীনÑবাংলাদেশ মৈত্রী সেতু দেশের ৩টি উপক’লীয় বিভাগ বরিশাল, খুলনা চট্টগ্রাম বিভাগকে সড়ক পথে সংযুক্ত করা ছাড়াও দেশের ৩টি সমুদ্র বন্দরের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে। কালনা সেতুটি সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের সাথে বেনাপোল ও যশোরকে সংক্ষিপ্ত সড়কপথে যুক্ত করার পাশাপাশি প্রধান স্থল বন্দরটিকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানীর সাথে ফেরিবিহীন সংক্ষিপ্ত সড়ক পথে সংযুক্ত করবে।
সেতু দুটির মধ্যে প্রায় দেড় কিলেমিার দীর্ঘ ‘৮ম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেত’ু নির্মানে চীন সরকার ৬৫৫ কোটি টাকার সম্পূর্ণ অনুদান প্রদান করেছে। অপরদিকে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যায়সাপেক্ষ ৫৯০ মিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম ৬লেনের ‘কালনা সেত’ু নির্মানে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা ‘জাইকা’ ৭৫৩ টাকা সহজ শর্তে ঋন দিয়েছে ।
চীনা প্রেসিডেন্ট-এর বাংলাদেশ সফরকালে ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর ৮ম চীনÑবাংলাদেশ মৈত্রী সেতু নির্মানে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর দু বছর পরে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর ‘প্রী-স্ট্রেসড কংক্রীট বক্স গার্ডার’ ধরনের এ সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুটি নির্মানে প্রায় ২শ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যায় হচ্ছে। যে অর্থে সেতুটির উভয়প্রান্তে প্রায় দেড় কিলোমিটার সংযোগ সড়কের জন্য ১৩.৩২ হেক্টর ভ’মি অধিগ্রহন সহ প্রশাসনিক ব্যায় এবং সিডি-ভ্যাট পরিশোধ সহ টোল প্লাজা নির্মিত হচ্ছে। এ সেতুটি নির্মিত হলে চট্টগ্রাম থেকে লক্ষ্মীপুরÑভোলাÑবরিশাল হয়ে খুলনা/মোংলা ছাড়াও যশোর এবং ভোমড়া ও বেনাপোল স্থল বন্দরের সাথে সরাসরি সংক্ষিপ্ত সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।
কঁচা নদীর ওপর প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ মূল সেতুটির উভয় প্রান্তে ৪৯৫ মিটার ভায়াডাক্ট সহ সর্বমোট দৈর্ঘ প্রায় দেড় কিলোমিটার। ১৩.৪০ মিটার প্রস্থ সেতুটির পিরোজপুর ও বরিশাল প্রান্তে ১ হাজার ৪৬৭ মিটার সংযোগ সড়ক সহ পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা নির্বিঘœ রাখতে আরো ২টি ছোট সেতু ও বক্স কালভার্ট নির্মিত হয়েছে। ‘চায়না রেলওয়ে ১৭ ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানী লিমিটেড’ ৯টি স্প্যান ও ৮টি পিয়ার বিশিষ্ট এসেতুটির নির্মান কাজ সম্পন্ন করে চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যেসড়ক অধিপ্তরের কাছে বুঝিয়ে দেবে।
কঁচা নদীর সর্বোচ্চ জোয়ার থেকে ৬০ ফুট উচ্চতায় নির্মিত সেতুটির তলদেশ দিয়ে চট্টগ্রাম, বরিশাল এবং মোংলা বন্দর সহ খুলনা নদী বন্দরের সাথে পণ্য ও জ¦ালানিবাহী বড় ধরনের নৌযানের চলাচলও নির্বিঘœ থাকবে। পাশাপাশি নৌ বাহিনীর ফ্রিগেট সহ যেকোন ধরনের যুদ্ধ জাহাজের চলাচলেও কোন প্রতিবন্ধকতা থাকছে না। এমনকি কঁচা নদীর মধ্যভাগে সেতুটির সবচেয়ে প্রসস্ত স্প্যানটিতে ১২২ মিটার এলাকা নৌযান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। আগামী মাসের যেকোন সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন বলে আশা প্রকাশ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল।
অপরদিকে মধুমতি নদীর ওপর ৯৫৯ কোটি টাকা ব্যায়ে দেশের প্রথম ৬লেন ‘কালনা সেতু’র নির্র্মান কাজও আগামী মাসের মধ্যেই শেষ হচ্ছে। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলেও এ সংক্রান্ত প্রকল্প-প্রস্তাবনা ‘ডিপিপি’ একনেক-এর অনুমোদন লাভ করে ২০১৬ সালে।
সাড়ে ৪ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক সহ কালনা সেতু নির্মানে বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল ২০৬ কোটি টাকা। জাপান উন্নয়ন তহবিল-জাইকা’র ৭৫৩ টাকার প্রকল্প সাহায্যে ৫৯০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির মধ্যবর্তি ১৫০ মিটার ‘নিয়েলসান লোস আর্থ টাইপ স্টিল ব্রীজ’ অংশটি নির্মিত হয়েছে ভিয়েতনামে। হ্যানয় থেকে বিযুক্ত অবস্থায় সমুদ্র পথে মোংলা বন্দর হয়ে নৌপথেই প্রকল্প এলাকায় নিয়ে এসে মধ্যবর্তি স্টিল ব্রীজটি সংযুক্ত করা হয়েছে। জাপানের ‘টেককেন’ কোম্পনীর সাথে বাংলাদেশের ‘আবদুল মোনেম লিমিটেড’ যৌথভাবে সেতুটি নির্মান করছে। ১২টি পিয়ার-এর ওপর ১৩টি স্প্যানে নির্মিত এ সেতুটির এবাটমেন্ট ছাড়াও সংযোগ সড়কে একাধীক কালভার্ট ও আন্ডারপাস রয়েছে। ইতোমধ্যে সেতুটির ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়ে প্রকল্প ব্যাবস্থাপক প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান ‘আগামী মাসের মধ্যে কালনা সেতু যানবাহন চলাচলের সম্পূর্ণ উপযোগী করে তোলা হচ্ছে’ বলে জানিয়েছেন।
ফলে জুলাই মাসের শেষভাগেই আনুষ্ঠানিকভাবে বরিশাল Ñ গোপালগঞ্জ Ñ নড়াইল Ñ যশোর Ñ বেনাপোল মহাসড়কের ‘কালনা সেতু’ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ইতোমধ্যে সেতুটির অবশিষ্ট একটি স্প্যানের গার্ডারসমুহ প্লেসমেন্ট সম্পন্ন করে ডেক-এর ঢালাই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া সংযোগ সড়ক সহ অবশিষ্ট সব কাজই প্রায় শেষ। কালনা সেতুটি বেনাপোল থেকে যশোর-নড়াইল হয়ে ভাটিয়াপাড়ায় জাতীয় মহাসড়কে সংযুক্ত হবে। এখান থেকেই একটি মহাসড়ক বরিশালে সংযুক্ত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ