Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যিলকদ একটি মহিমান্বিত মাস

মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হুসাইন | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

আল্লাহ তাআলা বলেন : প্রকৃতপক্ষে যেদিন আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন সেই দিন থেকেই আল্লাহর কাছে আল্লাহর কিতাবে (অর্থাৎ লাওহে মাহ্ফুজে) মাসের সংখ্যা বারটি। এটাই সহজ-সরল দ্বীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহের মধ্যে নিজেদের প্রতি জুলুম করো না এবং তোমরা সকলে মিলে মুশরিকদের সাথে লড়াই করো, যেমন তারা সকলে মিলে তোমাদের সাথে লড়াই করে। একীন রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের সঙ্গে আছেন। -সূরা তাওবা : ৩৬)।

আয়াতে বলা হয়েছে, পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকেই বছরের মাস হলো বারটি। এর মধ্য থেকে চারটি মাস সম্মানিত। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, এই সম্মানিত চার মাসের প্রথমটি হলো যিলকদ। বাকি তিনটি হলো- যিলহজ, মুহাররম ও রজব। হযরত আবু বাকর রা. বলেন, নবী (সা.) বলেছেন : যমানা ফিরে এসেছে তার আপন অবস্থায়, যেমন ছিল ঐ দিন, যেদিন আল্লাহ তাআলা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। বার মাসে বছর। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক- যিলকদ, যিলহজ ও মুহাররম। আর চতুর্থটি হলো রজব, যা জুমাদা ও শাবানের মাঝখানে। (সহীহ বুখারী : ৩১৯৭)।

এ মাসেই মূসা (আ.) তূর পাহাড়ে অবস্থান করেছেন। বনী ইসরাইলকে তাদের নাফরমানির কারণে তীহ উপত্যকায় চল্লিশ বছর পর্যন্ত আটকে রাখা হয়েছিল। এ সময় তারা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের কাছে দাবি করেছিল, আপনি নিজ ওয়াদা অনুযায়ী আমাদের কোনো আসমানি কিতাব এনে দিন, যে কিতাবে আমাদের জীবনযাপনের নীতিমালা লিপিবদ্ধ থাকবে। এ প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা (আ.)-কে তূর পাহাড়ে এসে ত্রিশ দিন অবস্থান করতে বললেন। পরে বিশেষ কোনো কারণে এ মেয়াদ বৃদ্ধি করে চল্লিশ দিন করে দেয়া হলো।

আল্লাহ তাআলা বলেন : আমি মূসার জন্য ত্রিশ রাতের মেয়াদ স্থির করেছিলাম (যে, এ রাতসমূহে তূর পাহাড়ে এসে অবস্থান করবে)। তারপর আরো দশ দ্বারা তা পূর্ণ করি। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত মেয়াদ চল্লিশ রাত হয়ে গেল। (সূরা আরাফ : ১৪২)।
প্রথম ত্রিশ দিন ও পরের দশ দিনের মধ্যে, অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে ত্রিশ দিন যিলকদ মাস। আর দশ দিন হলো এর পরের মাস যিলহজের প্রথম দশ দিন। আবু বকর ইবনুল আরাবী রাহ. (৫৪৩ হি.) বলেন : অনেক মুফাসসির একমত হয়েছেন, এই চল্লিশ দিন দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যিলকদের ত্রিশ দিন ও যিলহজের দশ দিন। (আহকামুল কুরআন ২/২৭৪)।

ইবনে কাসীর রাহ. বলেন : অধিকাংশ তাফসিরকারের মত হলো, ত্রিশ দিন হলো যিলকদ মাস আর দশ দিন হলো যিলহজের দশ দিন। এটি মুজাহিদ রাহ., মাসরূক রাহ. ও ইবনে জুরাইজ রাহ.-এর মত। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও অন্যদের থেকেও অনুরূপ তাফসির বর্ণিত হয়েছে। -তাফসিরে ইবনে কাসীর ৩/৪২১।
যে মাসে নবী (সা.) উমরা আদায় করেছেন : যিলকদ মাসের বিশেষ একটি ফজিলত হলো, রাসূলুল্লাহ (সা.) যত উমরা আদায় করেছেন, সবগুলোই ছিল যিলকদ মাসে, একটা উমরা ব্যতীত, যা তিনি হজের সাথে আদায় করেছিলেন। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) যিলকদ ব্যতীত অন্য মাসে কোনো উমরা করেননি। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৯৯৭)।

আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) চারটি উমরা করেছেন। সবগুলো হয়েছে যিলকদ মাসে, একটি ব্যতীত, যা হজের সাথে করেছেন। ১. হুদায়বিয়ায় সন্ধির বছর যিলকদ মাসে উমরা করেছেন। ২. এর পরের বছর যিলকদ মাসে উমরা করেছেন। ৩. জিইরানা, যেখানে হুনায়ন যুদ্ধের গণিমত বণ্টন করেছিলেন, সেখান থেকে একটি উমরা করেছিলেন যিলকদ মাসে। ৪. আরেকটি উমরা করেছিলেন হজব্রত পালন করার সময় (যিলহজ মাসে)। (সহীহ মুসলিম : ১২৫৩)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যিলকদ
আরও পড়ুন