Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সুনামগঞ্জে আবারো বন্যা, পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০২২, ১০:০০ এএম

উজানের ঢলে মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে সুনামগঞ্জের সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সুরমা নদীর তীর উপচে হু-হু করে পানি ঢুকেছে লোকালয়ে। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বুধবার (১৫ জুন) সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে ৩৫ ও ছাতকে ১৭৪ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহিত হয়েছে।
পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ ও ছাতক শহরের নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে গেছে ছাতক গৌবিন্দগঞ্জ সড়ক, দোয়ারাবাজার সুনামগঞ্জ সড়ক তাহিরপুর বিশ্বম্ভরপুর সড়ক ও সাচনা সুনামগঞ্জ সড়ক। জেলার চারটি উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ছাতকের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে দুই শতাধিক পরিবার ও দোয়ারাবাজারের আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে ১০টি পরিবার।
প্রায় এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা বন্যায় তলিয়ে গেছে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। বর্তমানে সুরমাসহ পাহাড়ি চেলা ও পিয়াইন নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার উপর দিয়ে। ছাতক-সিলেট ও ছাতক-সুনামগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন অংশে প্রায় আড়াই ফুট উচ্চতায় বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতকের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন অংশে সড়কের উপর দিয়ে চলাচল করছে নৌকা। শাক-সবজির বাগান, বীজতলাসহ গ্রামীন রাস্তা-ঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বাড়ির আঙ্গিনাসহ নিম্মাঞ্চলে বাস করা মানুষের বসত ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে।
পানিবন্দি মানুষের জন্য ছয়টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলার খবর পাওয়া গেছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৫ শতাধিক বন্যা কবলিত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর, নোয়ারাই ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার অধিকাংশ মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬০ সেন্টিমিটার, চেলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার ও পিয়াইন নদীর পানি ১৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ডাইকি, বটেরখাল ও বোকা নদীর পানিও বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমাসহ এসব নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার শতাধিক ছোট-বড় সবজি বাগান। শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট ছাড়া গোটা শহরের রাস্তা-ঘাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। শহরের রাস্তায় এখন নৌকা চলাচল করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, বন্যার্তদের জন্য শহরের বৌলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তাতিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মণ্ডলীভোগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছাতক সরকারী বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও এসপিপিএম উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছ। ইতোমধ্যেই এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৫ শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলছে।
এদিকে দোয়ারাবাজার উপজেলায় ফের দ্বিতীয় দফায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানি অব্যাহত থাকায় উপজেলার সবকয়টি নদ-নদী ও হাওরের পানি বিপজ্জনকভাবে বাড়তে শুরু করেছে। লোকালয়ে প্রবেশ করেছে বন্যার পানি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ইতোমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অনুকূল চন্দ্র দাস জানান, 'আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে পানি প্রবেশ করেছে। এই অবস্থায় সকল প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ এবং সার্বক্ষণিক বিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উপজেলার বন্যা কবলিত ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।'
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এতোদিন বাড়ির আশপাশে পানি থাকলেও এখন আবার নতুন করে বাড়িঘরের ভেতরে পানি প্রবেশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়ক, দোয়ারাবাজার-বাংলাবাজার সড়ক, দোয়ারাবাজার লক্ষ্মীপুর সড়ক, নরসিংপুর-শ্যামারগাঁও, কাঞ্চনপুর-দোহালিয়া সড়কের বিভিন্ন অংশে পানি বাড়তে থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব রোডের যাত্রীরা। উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন হাটবাজারে উঠতে শুরু করেছে বন্যার পানি।
হঠাৎ করে আসা বন্যায় আবারও হুমকির মুখে পড়েছেন মাছ চাষীরা। বিভিন্ন মাছের খামারে প্রবেশ করতে শুরু করেছে বন্যার পানি। স্রোতে অনেকের পুকুরের পাড় ভেঙে মাছ ভেসে যাওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। পুকুরের সুরক্ষায় বৃষ্টির মধ্যেই রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন মাছচাষীরা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহরুল ইসলাম বলেন, গেলো ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৮১২ মিলিমিটার ও সুনামগঞ্জে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর প্রভাবে মঙ্গলবার ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত সুনামগঞ্জে উজানের ঢলে পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আবার বুধবার সন্ধ্যা থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে আরও কয়েকদিন সুনামগঞ্জে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা পরিস্থিতি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ