পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বাজারে আসতে শুরু করেছে রংপুরের বিখ্যাত আম ‘হাঁড়িভাঙ্গা’। উৎপাদন কম হলেও এবার দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলক্ষ্যে ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে।
আম পাকতে আরও সপ্তাহ খানেক সময় লাগলেও ইতিমধ্যে কিছু কিছু গাছে আম পাকতে শুরু করেছে। বাগানের মালিকরা ইতিমধ্যেই আম পাড়া শুরু করেছেন। এসব আম রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে সাইকেল ও ভ্যানে করে বিক্রি হচ্ছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিক্রয় ও বিপনন শুরু হবে আগামী ১৭ জুন থেকে। চাহিদার কথা বিবেচনা করে ক্রেতাদের কাছে আম পৌঁছে দিতে ইতিমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিপনন অধিদফতর।
অত্যন্ত নজর কাড়া, সুমিষ্ট এবং আঁশবিহীন এই ‘হাঁড়িভাঙ্গা’ আম সাধারণত রংপুরের মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী কয়েকটি এলাকায় হয়ে থাকে। তারমধ্যে পদাগঞ্জ এলাকা এই আমের জন্য বিখ্যাত। এই এলাকার ‘হাড়িভাঙ্গা’ আমের স্বাদ অন্যান্য এলাকার আমের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। তবে ‘হাড়িভাঙ্গা’ আম তার স্বাদ ও বৈশিষ্টের জন্য সকলের কাছেই জনপ্রিয়। দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইতিমধ্যে এই আমের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বাইরে। ফলে চাহিদাও বেড়েছে বহুগুণ। কয়েক বছর ধরে ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে হাঁড়িভাঙা আম চাষ ও উৎপাদনের পরিধি। যার ফলে এই আম এখন রংপুরের প্রায় প্রতিটি জেলায় চাষ হচ্ছে। শুধু রংপুর জেলাতেই নয়, পার্শ্ববতর্তী জেলাগুলোতেও হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান করা হচ্ছে।
রংপুর সদরের ভুরারঘাট, রানীপুকুর, ধাপেরহাট এলাকা থেকে শুরু করে মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জে যেতে দেখা মিলবে সারি সারি গাছ। রাস্তার দুই ধারে হাঁড়িভাঙা আম গাছের সারি সারি বাগান। বাড়ির চারপাশ ছাড়াও বিভিন্ন ফসলি জমিতে লাগানো হয়েছে হাঁড়িভাঙা আমের গাছ। যতদূর দৃষ্টি যায় সারি সারি আমের বাগান। বাগানের প্রতিটি গাছে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে আম। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে পাকা আমের গন্ধ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর তথ্যমতে, রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙ্গাসহ অন্যান্য আম বাগান রয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র রংপুর জেলায় হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান রয়েছে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে। এবারে শুধুমাত্র হাঁড়িভাঙ্গা আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন। মৌসুমের শুরুতে এই আমের দাম কিছুটা কম থাকে। গত বছর মওসুমের শুরুতে এই আম ২৫ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। গতকাল নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙ্গা আম ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার দাম অনেক বেশি হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি ঠিক থাকলে এবং আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবার প্রায় ২শ কোটি টাকার আম বিক্রি হবে।
এদিকে আম উৎপাদিত এলাকাগুলোতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সুযোগ সুবিধার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর লক্ষ্যে পদাগঞ্জ আম বাজারের সাথেই অস্থায়ী ভাবে কুরিয়ায় সার্ভিসগুলো তাদের শাখা অফিস খুলেছে।
পদাগঞ্জ এলাকায় সরেজমিনে লক্ষ্য করা যায়, শেষ মুহুর্তের পরিচর্যা আর বাগান পাহারায় ব্যস্ত বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে কেউ কেউ আম পেড়ে ক্যারেট সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
পদাগঞ্জ বাজারে আম বিক্রি করতে আসা আম চাষি মজিবর রহমান জানান, প্রাকৃতিক কারণে এমনিতেই এবার হাঁড়িভাঙ্গা আমের ফলন কম হয়েছে। মুকুলের সময় বৃষ্টির অভাবে অনেক গাছের মুকুল ঝরে পড়েছে। এ কারণে আমের গুটি কম হয়েছে। তার ওপর পর পর দু’বার শিলাবৃষ্টিতে আমের অনেক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলে এবারে হাঁড়িভাঙ্গা আমের ফলন অনেক কম হয়েছে।
রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, হাঁড়িভাঙ্গা আম ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে ইতিমধ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, এবছর হাঁড়িভাঙ্গা আমের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২৯ হাজার ৪’শ ৩৬ মেট্রিক টন। এছাড়া, অন্যসব আম মিলিয়ে লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫০ হাজার টন। মৌসুমের শুরুতে দাম কিছুটা কম থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙ্গা আম ৮০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এ আম বিক্রি করে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে আশা করছেন আম চাষিরা।
জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, হাঁড়িভাঙা আম দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে পরিবহন সুবিধাসহ নিরাপত্তার বিষয়টিও জোরদার করা হয়েছে। নতুন নতুন উদ্যোক্তারা এবার আম চাষ করেছে। তাদের উৎপাদিত আম আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রয়ের জন্য সার্বিক সহযোগিতা করছে স্থানীয় প্রশাসন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।