পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার নামে চলছে ভিক্ষুকদের উৎপাত। নিরাপত্তার স্বার্থে কর্তৃপক্ষ প্রায় এক বছর ধরে বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। বিমানবন্দরের প্রবেশপথে যানবাহন থামিয়ে চলছে দফায় দফায় তল্লাশি। তবে এতসব কথিত কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেও ভিক্ষুকদের উৎপাত থেমে নেই। প্রতিদিনই অবাধে ভিড় করছে ভিক্ষুকরা। বিমানবন্দরের প্রবেশ পথের নিরাপত্তা চেক পোস্টের সামনেই যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে ভিক্ষুকদের কবলে। একদিকে এপিবিএন চেকপোস্টে যাত্রীদের তল্লাশি করছেন, অন্যদিকে তাদের সামনেই বিদেশ ফেরত যাত্রীদের গাড়িতে হানা দিচ্ছে ভিক্ষুকরা। তাদের হাতে টাকা না দেয়া পর্যন্ত পিছু ছাড়ছে না। এ কারণে ভুক্তভোগী যাত্রীরা নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাঁরা বলছেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর একটি এলাকায় কী করে ভিক্ষুকেরা ভিড় করছে। এতে শুধু নিরাপত্তাই হুমকির মুখে নয়, দেশি-বিদেশি যাত্রীরাও ভিক্ষুকদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। বিদেশিদের মধ্যেও নিরাপত্তা নিয়ে খারাপ বার্তা যাচ্ছে বিমানবন্দরের আসার পরপরই।
গত দুই দিন সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পথে বিমানবন্দরের প্রধান প্রবেশ পথে কয়েকজন ভিক্ষুক ভিড় করছে। গত সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিন-চার জন ভিক্ষুক যাত্রীদের কাছে ভিক্ষা চাচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় যাত্রীদের গাড়ি যখন আটকা পড়ে তখনই তাদের তৎপরতা বেড়ে যায়। এ দৃশ্য দেখেও না দেখার ভান করে পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন এপিবিএন-এর ৩/৪ জন সদস্য। এ সময় গাড়িতে বসা এক ব্যক্তি একজন ভিক্ষুকের হাতে ১০ টাকা দেয়ার পর সে ওই টাকা ফেরৎ দিয়ে ডলার দাবি করে। এক পর্যায় গাড়ির জানালায় রীতিমত ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। এসময় ওই ব্যক্তিকে অসহায় অবস্থায় বসে থাকতে দেখা গেছে। এ ধরনের ঘটনা প্রতিদিনই বিমানবন্দরের প্রবেশ পথে ঘটছে।
গতকাল দুপুর ১টার সময় একই স্থানে কয়েকজন ভিক্ষুককে ভিক্ষা করতে দেখা গেছে। তাদের ছবি তুলতে গেলে দৌড়ে পালাতে শুরু করে। এসময় ছবি তুলতে নিষেধ করেন এপিবিএন-এর সদস্যরা। দেখা গেছে, ১৫/২০ মিনিট পর আবারো সেখানে ৩ জন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা শুরু করে।
এসময় কথা হয় বিদেশ থেকে আসা একজন যাত্রীর সাথে। তিনি বলেন, ১৫ দিন আগে তিনি ব্যবসায়িক কাজে চীন যান। যাবার সময় তার সাথে আসা স্বজনদের বিমানবন্দরের বাইরে প্রবেশ পথেই গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। বিমানবন্দরের ক্যানোপী এলাকায় পর্যন্ত তাদের যেতে দেয়া হয়নি। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে যাত্রীর সাথে আসা আত্মীয়-স্বজনদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। অথচ অবাধে ভিক্ষুকদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। তিনি জানতে চান এতে নিরাপত্তা বিঘœ ঘটছে কিনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মূলত দুই ধরনের। কোর সিকিউরিটি বা ফিজিক্যাল সিকিউরিটি এবং এভিয়েশন সিকিউরিটি বা নন-কোর সিকিউরিটি। ফিজিক্যাল সিকিউরিটির আওতায় বিমানবন্দরের বহিরাঙ্গন, রানওয়ে, অপারেশন টাওয়ার, রাডার স্টেশন, মার্কার, ভিওআর, লোকালাইজারহ সব ধরনের স্থাপনার সার্বিক নিরাপত্তা ও অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানো। অন্যদিকে এভিয়েশন সিকিউরিটির আওতায় বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশের সময় যাত্রীর দেহ তল্লাশি ও লাগেজ চেক, কার্গো চেক, স্ক্রিনিং, ফ্লাইট সেফটি এবং আনুষঙ্গিক কাজ।
এদিকে সিভিল এভিয়েশন এবং বিমানবন্দরসংলগ্ন অন্যান্য অফিসে যাতায়াত করতে প্রতিদিনই এপিবিএনের তল্লাশির মুখে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সিভিল এভিয়েশনের পাস ছাড়া কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। কাস্টমস ও কার্গো ভিলেজে যাতায়াত করতেও সাধারণ মানুষসহ সংশ্লিষ্ট ব্যসায়ীদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তবে ভিক্ষুক ও ফেরিওয়ালা ঠিকেই ওই এলাকায় প্রবেশ করছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, বিমানবন্দরে কর্মরত এপিবিএনএর একজন মহিলা এএসপি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনি পরে ফোন করেন, বিস্তারিত বলা যাবে। এরপর গত রাত ৮টা পর্যন্ত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফিজিক্যাল সিকিউরিটির দায়িত্বে রয়েছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এএপিবিএন)। অন্যদিকে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির অধীনে এভিয়েশন সিকিউরিটির দায়িত্বে আছে এভিয়েশন সিকিউরিটি গার্ড, অ্যাভসেক এবং আনসার বাহিনী। দেশে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিমান বাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত হয় এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্স- অ্যাভসেক। এছাড়া, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন শাহজালালে। তবে এতসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কিছুদিন আগে এক যুবক ছুরি হাতে নিয়ে নির্বিঘেœ বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকে এবং হামলা করে। ওই যুবকের ছুরির হামলায় একজন আনসার সদস্য নিহত হন এবং আহত হন আরো তিনজন। একাধিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকার পরও ৬ নভেম্বর শাহজালালের বহির্গমন লাউঞ্জে এক যুবকের ছুরিকাঘাতে আনসার সদস্য মারা যাওয়ার পর নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে।
সূত্র জানায়, এ বছর ১৮ আগস্ট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন রাশেদা সুলতানা। এর আগে তিনি সিভিল এভিয়েশন অথরিটির সহকারী পরিচালকের (নিরাপত্তার) দায়িত্বে ছিলেন। তার দায়িত্ব গ্রহণের পর সমন্বয়হীনতা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এএপিবিএন) জানিয়েছে, প্রায় ১১শ’ এএপিবিএন সদস্য শাহজালালে দায়িত্ব পালন করছেন। ৫০ জন অস্ত্রধারীসহ ৭০৩ জন সদস্য বিমানবন্দরে কাজ করছে বলে জানিয়েছে আনসার। তবে সিভিল এভিয়েশনের অধীনে এভিয়েশন সিকিউরিটি গার্ড ও অ্যাভসেক-এ কত জন কর্মী দায়িত্ব পালন করছেন এ তথ্য জানায়নি কর্তৃপক্ষ। সিভিল এভিয়েশনের সদস্য (অপারেশন) মুস্তাফিজুর রহমানের বরাত দিয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, নিরাপত্তার বিষয়টি গোপনীয়, এটি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, অ্যাভসেকে প্রায় ২৩৭ জন এবং এভিয়েশন সিকিউরিটি গার্ডে ৫৭০ জন সদস্য রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।