Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পানিবন্দী ৫০হাজার মানুষ

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০২২, ৪:০১ পিএম

‘পানিত বেরবের পাই না। বেরালেই খরচ। কাজ কাম নাই। আয় উন্নতি বন্ধ। খুব সমস্যাত আছি।’ কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের খেয়ারচর গ্রামের দিনমজুর নজির হোসেন জানালেন নিজের অক্ষমতার কথা। পানি ভেঙ্গে বাতেন মিয়া ডিম নিয়ে গিয়েছিলেন খেয়ারচর হাটে বিক্রি করতে। বৃষ্টির কারণে লোকজন হাটে নাই। বেলা চারটার মধ্যে হাট বন্ধ হয়ে গেছে। এখন অবিক্রিত ডিম নিয়ে বাড়ি ফিরছেন তিনি।
গত ৭/৮দিন ধরে এই এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরাসরি ভারত থেকে নেমে এসেছে জিঞ্জিরাম, কালো ও ধরণী নদী। এই তিন নদীতে অস্বাভাবিক পানিবৃদ্ধি হওয়ায় কুড়িগ্রামের রৌমারী ও চর রাজীবপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে আগাম বন্যা। রৌমারী টু ঢাকা সড়কের পূর্ব অংশে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করলেও পশ্চিম অংশে ব্রহ্মপূত্র, হলহলিয়া ও সোনাভরি নদী রয়েছে বন্যা সীমার অনেক নীচে। ফলে ব্রহ্মপূত্র নদ থেকে বিচ্ছিন্ন এই দুই উপজেলার একটি অংশের মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছে ভোগান্তি।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আশরাফুল আলম রাসেল জানান, ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে জিঞ্জিরাম, কালো ও ধরণী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আকষ্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে রৌমারী ও চর রাজীবপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৪৫টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরেছে। বন্যায় তলিয়ে গেছে ৩০ কিলোমিটার কাচা-পাকা সড়ক। পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এছাড়াও ২৮৩ হেক্টর ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে উপজেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ পাওয়া ৩লক্ষ টাকা দিয়ে শুকনো খাবার হিসেবে চিড়া, মুড়ি, চিনি, লবন ও মোমবাতী কেনা হচ্ছে। দ্রুতই বন্যা কবলিতদের মাঝে বিতরণ করা হবে বলেও তিনি জানান।
বকবান্ধা ব্যাপারী পাড়া গ্রামের গৃহিনী নাজমা বেগম (৩৮) জানান, বন্যায় বাড়ীঘরে পানি ওঠে নাই। কিন্তু সব সবজি ডুবে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন রান্নার সবজি কেনা লাগবে। আমরা গরীব মানুষ। আমাদের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। কারণ আমার স্বামী কাজেও যেতে পারছে না।
খেয়ারচর রাবার ড্যাম এলাকার কৃষক আব্দুর রহিম জানান, জমিতে খড় পরে আছে। ঘাসও পানিতে ডুবে রইছে। আমরা গরু-ছাগল-ভেড়া নিয়া বিপদে আছি।
খেয়ারচর ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার নজরুল ইসলাম জানান, আমার ওয়ার্ডের ৬শতাধিক বাড়ীঘরে পানি উঠেছে। লোকজন কোথাও বের হতে পারছে না। এখন পর্যন্ত পানিবন্দী লোকজন কোন সরকারি সহযোগিতা পায় নাই।
এ ব্যাপারে রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল্যøাহ জানান, জনপ্রতিনিধিদের বন্যা কবলিত এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে দুর্গতদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। তবে রৌমারী ল্যান্ড পোর্ট পানিবন্দী হওয়ায় এই পোর্টের সাথে জড়িত ৫/৬ হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছে। তাদের বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। যাতে তারা সহযোগিতা পান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা পরিস্থিতি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ