Inqilab Logo

শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মেঘনার ভাঙনে বদলে যাচ্ছে মানচিত্র

এ. কে. এম. ফজলুল হক, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) পেকে | প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০২২, ১২:০২ এএম

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরআবাবিল, উত্তর চরবংশী ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের পাশর্^বর্তী মেঘনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদী তীরবর্তী স্থাপনা ও ফসলী জমি। ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে স্থলভূমি বিলীন হয়ে যাওয়ায় প্রতি বছরই বদলে যাচ্ছে রায়পুরের মানচিত্র। ভাঙন প্রতিরোধে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানালেও প্রতিশ্রুতি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রয়েছে তা। গত ১০ বছরে সহস্রাধিক ঘরবাড়িসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদসহ নানারকম সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন স্থাপনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন প্রমত্তা মেঘনার পাশর্^বর্তী হওয়ায় বর্ষাকালে তীব্র স্রোতের কারণে প্রতিবছরই ভাঙনের কবলে পড়ে। নদী তীরবর্তী জেলে ও কৃষক পরিবারগুলো স্থায়ী ও অস্থায়ী বাসস্থান নির্মাণ করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বর্ষা মৌসুমে ঝড়-জলোচ্ছাস ও নদীভাঙন আতঙ্কে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় তাদের। ভূক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নদীর তীব্র স্রোতের কারণে চোখের সামনেই প্রতিবছর অনেকের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তাদের আর কিছুই করার থাকে না। অথচ উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় আলতাফ মাস্টার ঘাট, সরদার এন্ড মোল্যা পর্যটন কেন্দ্র ও রাহুলঘাট নামে তিনটি পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগম ঘটে। এছাড়া বেশ কয়েকটি মৎস্য আড়তের মাধ্যমে পাশর্^বর্তী বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা নদীর বিপুল পরিমাণ মৎস্য সম্পদ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। অন্যদিকে বরিশাল, ভোলাসহ মেঘনার বিভিন্ন চরে উৎপাদিত কৃষি পণ্য নদী তীরবর্তী ঘাটগুলো হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। অর্থনৈতিক ও ভৌগলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্বেও রায়পুর পশ্চিমাঞ্চলের এই নদী ভাঙন কবলিত এলাকাটি রয়েছে চরম অবহেলিত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন সময় সরকারের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু অদ্যবধি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত না হওয়ায় ভুক্তভোগীদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও হতাশা। পাশর্^বর্তী হাইমচর ও কমলনগর উপজেলায় নদী তীর রক্ষায় ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও অজ্ঞাত কারণে মধ্যবর্তী রায়পুরের নদী ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
জালিয়ার চরের ভূক্তভোগী আবুল হোসেন বলেন, ‘তিন যুগ ধরে মেঘনার ভাঙনে চোখের সামনেই অনেককে ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বহারা হতে দেখেছি। কিন্তু ভাঙন রোধে অদ্যবধি কোন পদক্ষেপ দেখিনি।’
উত্তর চরবংশী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ব্যাপকভাবে নদী ভাঙন হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। আমি এ বিষয়ে বহুবার স্থানীয় এমপি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেছি।’
রায়পুর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ বলেন, ‘নদী ভাঙন রোধে সমীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে ভাঙন রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে।’
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুখ আহম্মেদ জানান, ‘মেঘনার কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বিশেষ নজর রেখে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যেখানে সমস্যার সৃষ্টি হবে, গুরুত্ব বিবেচনায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।’
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এড. নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, ‘রায়পুরের হাজীমারা থেকে চাঁদপুরের হাইমচর সীমানা পর্যন্ত নদী তীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙনরোধে প্রকল্প গ্রহণে পানি সম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সম্প্রতি স্থায়ী বাঁধ চেয়ে ডিও লেটার দেয়া হয়েছে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ