Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা মানুষ

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০২২, ৬:০৩ পিএম

ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানে পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তা নদীতে আবারো ভাঙন শুরু হয়েছে। গত দেড় মাসে অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে শত শত বিঘা আবাদি জমি, গাছপালা, পুকুর ও মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদী ভাঙনে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দিশেহারা হয়ে পরেছে তিস্তা পাড়ের মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার শেষ সীমানা থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত ৪৩ কিলোমিটার ব্যাপী তিস্তা নদীর অবস্থান। এই দীর্ঘ নদী পথে মাত্র দুই কিলোমিটার জায়গায় স্থায়ীভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও বাকী ৪১ কিলোমিটার জায়গা উন্মুক্ত রয়েছে। এসব উন্মুক্ত অঞ্চলের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করায় নদীর পাড় রক্ষা করা যাচ্ছে না। প্রতি বছর নতুন নতুন জায়গায় ভাঙন শুরু হওয়ায় বাড়িঘর, গাছপালা, আবাদি জমি ক্রমশ: হারিয়ে যাচ্ছে। চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও মন্দির মসজিদ। বর্তমানে রাজারহাটের ঘরিয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে তিস্তা নদীতে ৬ কিলোমিটার এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে। অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু বগুড়া পাড়া, রামহরি, খিতাবখাঁ ও বুড়িরহাটে তীব্র ভাঙনে গত কয়েক দিনে ১৭ট বাড়ী নদীগর্ভে চলে গেছে। যারা ভাঙনের মুখে রয়েছে তারা ভাঙন প্রতিরোধের আর্জি জানিয়েছে।

খিতাব খাঁ গ্রামের মৃত: বন্দে আলীর পুত্র মন্ডল আলী (৬৮) জানান, ‘নদীর কাচারে পরি আছি, নদীর কোন ব্যবস্থা নাই; বস্তার কোন ব্যবস্থা নাই। আমরা যে কিভাবে থাকবো আমার কোন বুদ্ধি নাই। গতকাল থাকি তিস্তা নদীর ঢলে পাড় বহুদূর ভাঙ্গি বহুদূর আউগাইছে। কিন্তুক আমরা সরকার থাকি কোন ব্যবস্থা পাচ্ছি না। এই কারণে আমরা কিন্তু বর্তমানে বাঁশের থোপে, রাস্তার ধারে পরি পরি আছি। কাইল থাকি ফির যে ভাঙন শুরু হইছে আমরা কি থাকতে পারবো কি পারবের নই তার নিশ্চয়তা নাই।’

রামহরি গ্রামের মৃত: আব্দুল গণির স্ত্রী মেহেরন (৪০) জানান, ‘নদী আমার সউগ কিছু নিয়া গেইছে। আবাদী জমি গেইছে। দুই বিঘা ধানি জমিত গাছ লাগাইছিলাম ভাঙন শুরু হওয়ায় পানির দরে গাছগুলা বেছি দিতে হইছে। ৫ লাখ টাকার গাছ নদী ভাঙনের কারণে ৮০-৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করি দিছি। এখন বাড়িটা ভাঙলে আমরা নি:স্ব হয়া যাবো।’

রামহরি গ্রামের নাসিমা বেগম (২৫) এর স্বামী আমিনুল (৩২) একটি টিনের চালা নদী তীরে এসে রাখতে প্রশ্ন করা হলে জানান, ‘নদী কাছোত আসায় ১৫দিন আগে টিনের ঘর ভাঙ্গি পাশর্^বতী মনসুর মিয়ার জমিত রাখছিলাম। তারা জায়গা না দেয়ায় আগের জায়গাত ঘর নিয়ে আসলাম। এখন আমার থাকপের জাগা নাই।’

এ ব্যাপারে ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল বাতেন জানান, ‘এই এলাকায় গতিয়াসাম থেকে চতুরা পর্যন্ত প্রায় ৬/৭ কিলোমিটার জায়গায় তিস্তা নদীতে ভাঙন চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিলেও তা অপ্রতুল। এদিকে রক্ষা করলে আরেক দিকে ভাঙন শুরু হয়। এভাবে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানো যাবে না। এজন্য দরকার বেশি বেশি জিও টিউব ব্যাগ। থাহলে ভাঙন থেকে এলাকা রক্ষা পাবে।

বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তিস্তা নদীর বেশ কিছু জায়গা আমরা প্রটেক্ট করেছি। এখন নতুন নতুন জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে সাধ্যমতো ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা করছি। তবে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হলে তিস্তা নদী শাসন করা সম্ভব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ