রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
স্বপ্নের পদ্মা সেতু রক্ষায় নদী শাসনের ফলে সর্বনাসা পদ্মা নদীর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে লৌহজং ও টংগীবাড়ী উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী অর্ধশতাধিক গ্রামের আতঙ্কগ্রস্ত গ্রামবাসী। মাওয়া থেকে টংগীবাড়ীর হাসাইল বানরী এলাকায় বিভিন্ন স্থানে নদীর মাঝে চর পরেছে। নদী শাসনে লৌহজং ও মাওয়া প্রান্তে পদ্মা হারিয়েছে তার সর্বগ্রাসী চরিত্র। আগামীতে যাতে নদী ভাঙন দেখা দিতে না পারে সেজন্য গাওদিয়া ও শামুরবাড়ী এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ফেলছে। পদ্মা সেতুর পূর্ব প্রান্তে জেগে উঠা চরে আগামীতে কখনো ভাঙন দেখা দিলে তা ভয়াবহ আকারে গাওদিয়া, কনকসার, হলদিয়া, বেজগাওঁ এলাকায় ভাঙন দেখা দেবার আশংকা রয়েছে।
গত ১০ বছরে পদ্মা নদীর অব্যাহত ভাঙনে লৌহজং এবং টংগীবাড়ী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ব্যাপক ভাঙনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ মাদরাসাসহ শত শত একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভিটি বাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পরেছে হাজার হাজার পরিবার। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, লৌহজং উপজেলায় গত ২০ বছরে পদ্মা নদীর অব্যাহত ভাঙনে লৌহজেংর মানচিত্র থেকে তেওটিয়া ইউনিয়ন সম্পুন্নভাবে হারিয়ে যায়। পদ্মার করালগ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী দিঘলী বাজার, পালের বাজার, লৌহজং পোস্টঅফিস, খাদ্যগুদামসহ শতাধিক বসতবাড়ী। কনকসার ইউনিয়নের পদ্মা নদীর ভাঙনের মুখে পরে ঐতিহ্যবাহী ব্রাক্ষ্মনগাওঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের একাংশ নদী ভাঙনে বিলীন হয়। গত বছর হঠাৎ করে নদী গর্ভে বিলীন হয় সাম্প্রতিক জেগে উঠা চরে নির্মিত পদ্মা রিসোর্টসহ বিস্তীর্ন এলাকা। অব্যাহত নদী ভাঙনে রানাদিয়া, গহর, ধাইদা গ্রামের শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পরে। এদের মধ্যে কারো ঠাই হয় অন্যের জায়গায় কেহবা এলাকা ছেড়ে চলে যায় অন্যত্র। প্রমত্তা পদ্মানদীর ভাঙনে টংগীবাড়ী উপজেলার হাসাইল, বানরী ও দিঘীরপাড় ইউনিয়নে বিস্তীর্ন এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদীভাঙন এলাকার লোকজন অপেয়া হিসেবে চিহ্নিত হয়। নদীগর্ভে বিলীন হয় বানরী উচ্চ বিদ্যালয়, দিঘীরপাড় ও হাসাইল বাজারসহ কয়েক শত একর আবাদী জমি ও শতাধিক বসত বাড়ি। টংগীবাড়ী উপজেলার হাসাইল গ্রামের রমিজ শেখ বলেন পদ্মা নদীর ভাঙনে বাপ দাদার ভিটে বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়। নদীর দুই দফা অব্যাহত ভাঙনে রাস্তার পাশে ঠাই নিয়েছি। লৌহজং উপজেলার গাওদিয় গ্রামের আবুল কাশেম বলেন, নদী ভাঙনের মুখে ভিটেবাড়ী হারিয়ে তার পাঁচ ভাই অন্যত্র চলে গেছে।
ভৌগোলিক হিসেবে দেখা যায় আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর পূর্বে পদ্মা নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে ব্যাপক ভাঙনে তা চলে আসে নদীর পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এলাকায় দেখা দেয় ব্যাপক ভাঙন। নদীর অব্যাহত ভাঙনে নদীগর্ভে হারিয়ে যেতে থাকে জনপদ। পদ্মাসেতুর জন্য নদী শাসনের কাজ শুরু হলে ভাঙন কিছুটা বন্ধ হয়। মাঝে মধ্যে পদ্মা রুদ্রমুর্তি ধারণ করে গ্রাস করে পদ্মাসেতুর ডর্ক ইয়ার্ড, শিমুলিয়া ফেরীঘাটসহ পুরাতন ফেরিঘাট এলাকা। চর পরতে থাকে নদীর বুকে আর নদী হারায় তার খরস্রোতা। নদীর মাঝে চর পরে রাক্ষুশি পদ্মা নদী এখন রুপ নিয়েছে খালে। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ৪শ’ ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গাওদিয়া থেকে শুরু করে হাসাইল বানরী পর্যন্ত নদী ভাঙন রোধে বিভিন্ন স্থানে জিওব্যাগ ফেলছে। এতে এ এলাকার জনগন পদ্মা নদীর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। পদ্মার বুকে জেগে উঠা চর কখনো নদী ভাঙনের মুখে পরে বিলীন হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হবে। সেক্ষেত্রে মাওয়া, কনকসার, গাওদিয়া, কলমা ও হাসাইল-বানরী এলাকা আবারো ভাঙনের মুখে পরতে পারে। গাওদিয়া গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী আকবর শেখ বলেন, এক সময় চিরা-গুর সাথে নিয়ে নৌকা চরে এলাকায় আসতাম। দিঘলী থেকে কলিকাতার গোয়ালন্দ পর্যন্ত জাহাজ চলাচল করতো। নদী পথই ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। লৌহজেংর ঘোড়দৌড় গ্রামের রতন সাহা বলেন, এ এলাকায় পদ্মা মরে যাওয়ায় এখন আর আগের মতো পদ্মার ইলিশ রুই কাতলা ও পাংগাস মাছ পাওয়া যায়না। মাছ ব্যবসায়ী জহিরুল বলেন, ভরা মৌসুমেও এখন ইলিশ তেমন ধরা পরে না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান লৌহজং পয়েন্টে পদ্মা নদীর নাব্যতা এবং খরস্র্রোতা না থাকায় এ এলাকায় ইলিশ মাছের প্রজনন কিছুটা কমে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নরেন্দ্র সরকার চক্রবর্তী জানান, লেীহজং উপজেলার তেউটিয়া, বড় নওপাড়া, বেজগাঁও, গাওদিয়া, এলাকা বেড়িবাঁধে না থাকায় এই সকল এলাকা নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।