Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কৃষি অফিসের সহযোগিতা না পাওয়ায় কৃষকের মাঝে বাড়ছে ক্ষোভ

অলিপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় লাউ-কুমড়া চাষ মুখ থুবড়ে পড়েছে

কামরুজ্জামান টুটুল, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের অলিপুরসহ তৎসংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকার লাউ-কুমড়া চাষ এবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। অন্য বছরগুলো ঠিক এ সময় ফসল উঠতে শুরু করলেও এ বছর এখনো ফসল উঠানো সম্ভব হচ্ছে না। আবার ২/১টি জমির ফলনের প্রথম চালান উঠানো সম্ভব হলেও ফলন একেবারে কম। শীতের সবজি চাষে এই অঞ্চলের প্রায় ৬/৭টি গ্রামের কৃষককুলের কমপক্ষে গত ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকার পরে এবারই প্রথম তাদের ফসল বেশি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ফসল রক্ষার্থে ঠিক কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে এমন সহযোগিতা গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কৃষি অফিস পাওয়া যায়নি। আর এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করতে দেখা গেছে। তবে উপজেলা কৃষি অফিসের শীর্ষকর্তা কৃষকদের অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অর্ধশত বছর আগে বিশেষ করে হাজীগঞ্জের ৫নং সদর ইউনিয়নের অলিপুর এলাকার কৃষকরা শীতের সবজি লাউ-কুমড়া,শষা উৎপাদন শুরু করে। তবে প্রায় ৩০ বছর ধরে এই কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে কুমড়া লাউ চাষ শুরু করে। যা ধীরে ধীরে ঐ ইউনিয়নের অলিপুর, ওটতলি এলাকা, উচ্চগাঁ, কৈয়ারপুল এলাকা, খোদ্দ এলাকা, বলাখাল এলাকার কিছু অংশ, বাকিলা ইউনিয়নের বাকিলা রেল লাইনের দক্ষিণ পাশ পার্শ^বর্তী চাঁদপুর সদর উপজেলার মনিহার, কামরাঙ্গা এলাকায় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে লাউ-কুমড়ার চাষ হচ্ছে। এই লাউ ও কুমড়া ট্রাকভর্তি করে চট্টগ্রামের বাজারে পাঠানো হয় যা চাঁদপুরের কুমড়া হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। সরজমিনে গত বৃহস্পতিবার অলিপুর এলাকা গিয়ে দেখা যায়, এবারে কাঙ্খিত উৎপাদন না হওয়ার কারণে কুমড়া চাষিরা চিন্তিত। কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ জমির কুমড়ার পাতা হলদে ভাব হয়ে শুকিয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় ‘নাডা’র প্রভাবে জমিতে পানি জমে যাওয়ার পর থেকে এ অবস্থা হয় বলে কৃষকরা জানান। আর এখন পানি বা সার দিয়ে কাজ হচ্ছে না। ঠিক এ অবস্থায় কি ঔষধ প্রয়োগ করলে বা কি পদ্ধতি প্রয়োগ করলে পাতার রোগ সারবে বা উৎপাদন আসবে এমন কোনো পরামর্শ কারো কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। উচ্চগাঁ এলাকার আ. লতিফের ছেলে শহীদ এই তার নিজের প্রায় ১২০ শতাংশ জমিতে কুমড়া চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে, কিন্তু এখনো প্রথম ফসল কাটতে পারেনি। ইতোমধ্যে প্রতিটি কুমড়া গাছের পাতা হলদেভাব ধারণ করে শুকিয়ে যাচ্ছে। বাজার থেকে বীজ ও সার কিনে আনতে হয়েছে। গাছ নষ্ট হওয়ার সময় বীজ ও সার বিক্রেতাদের পরামর্শে গাছে ভিটামিনসহ ঔষধ প্রয়োগ করা হয়েছে, কিন্তু কাজে আসছে না। কৃষি অফিসের কে এখানে চাকরি করছেন তা আমরা জনি না। কোনো সময় আমাদের এখানে আসেননি। অলিপুর এলাকার মৃত আবুল বাসারের ছেলে খোকন ৩০ বছর ধরে এই জমিতে শীতে লাউ-কুমড়া চাষ করে আসছেন। এবারে খোকন ১২০ শতাংশ জমিতে কুমড়া-লাউ চাষ করেছেন। এবারে কুমড়া চাষে প্রায় ৮০ হাজার টাকা উৎপাদন ব্যয় হওয়ার পরে বিক্রির টার্গেট ছিল দেড় লাখ টাকার কাছাকাছি। কিন্তু গাছে রোগ আক্রমণ করার পরে উৎপাদন অনেক কমে যাবে বলে জানান। খোকন আরো বলেন, শুনেছি নুরুজ্জামান নামের একজন আমাদের এই এলাকায় কৃষি অফিসার হিসেবে কাজ করছেন কিন্তু কখনো আমরা তার কাছ থেকে পরামর্শ পাইনি বা আমাদের উপকারে আসেনি। অলিপুর এলাকার আরেক কৃষক মৃত সুলতান বেপারীর ছেলে আনোয়ার হোসেন (৫৫) জানান, এবারে আমি ২৪০ শতাংশ জমিতে কুমড়া চাষ করেন। এবারে ২ লাখ টাকার কুমড়া বিক্রির আশা থাকলেও সম্প্রতি সময়ে কুমড়া গাছের পাতা হলুদ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে কিছুদিন আগের বৃষ্টিতে বেশি সর্বনাশ হয়ে গেছে। কিন্তু এ অবস্থায় ঠিক কার কাছে গিয়ে পরামর্শ চাইব কিছুই বুঝিনি। কৃষি অফিসের সরকারি কোনো লোকের সহযোগিতা আমাদের ভাগ্যে মেলেনি। সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্লক সুপারভাইজার স্বপন চক্রবর্তী জানান, আমি তো ২/১ দিন পর পর ঐ এলাকায় গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা হচ্ছে, পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মনি সূত্রধরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি বেশ কয়েকদিন ঐ এলাকায় গিয়েছি। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ