বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দেশের উত্তরের খাদ্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। ধান ও চাল উৎপাদনের পাশাপাশি আম উৎপাদনেও এগিয়ে চলেছে নওগাঁ। এ জেলার ধান, চাল ও নানা জাতের সবজি চাষে সমৃদ্ধশীল। প্রতিবছর রেকর্ড পরিমাণ জমিতে কৃষিজাত নানা পণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। গত ৬বছর থেকে জেলায় প্রচুর পরিমাণে আমের আবাদ হচ্ছে। বর্তমানে আমের নতুন রাজধানী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে নওগাঁ জেলা। এ জেলার আম সুস্বাদু হওয়ায় দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। তবে আমের ভরা মৌসুমে আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় আম চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন বছরের পর বছর। সরকারি ভাবে জেলায় আম সংরক্ষণাগার বা হিমাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন জেলার আম চাষিরা।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর বেশি। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন। গোপাল ভোগ, হিমসাগর, আ¤্রপালী, বারি-৪, গৌড়মতি, ব্যানানা ম্যাংগো, কাটিমন, ল্যাংড়া, হিমসাগর, ফজলি, মিয়াজিকিসহ দেশী বিদেশী বিভিন্ন জাতের আম চাষ হচ্ছে। এবার প্রতি কেজি আমের গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা। সেই অনুযায়ী ১ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার আম বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পতœীতলা উপজেলার কিছু অংশ ঠা ঠা বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত। পানি স্বল্পতার কারণে অন্যান্য ফসল চাষ করে লোকশান গুনতে হতো। যার কারনে এসব জমিতে ধান চাষ কমিয়ে বর্তমানে ওই অঞ্চলগুলোর প্রান্তিক চাষিরা আম চাষে ঝুঁকছেন। আম চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় জেলায় দিন দিন বাড়ছে এর আবাদ। জেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয় সাপাহার ও পোরশা উপজেলায়।
এসব এলাকার আম চাষিদের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমের ভালো দাম থাকে মৌসুমের প্রথম ও শেষের দিকে। কিন্তু মৌসুমের মধ্যবর্তী সময়ে আমের বাজার পড়ে যায়। তখন দাম অনেক কম থাকে। এছাড়া দেশের দ্বিতীয় ও জেলায় সর্ববৃহৎ আমের বাজার বসে সাপাহার উপজেলায়। যার ফলে পার্শ্ববর্তী ধামইরহাট, পতœীতলা, পোরশা এমনকি রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে অনেক ব্যবসায়ী আম বিক্রয় করতে আসেন এই বাজারে। যার ফলে অতি পরিমাণ আম হবার ফলে বাজার দর কমে যায়। এছাড়াও উৎপাদিত আমের সংরক্ষণাগার ও বিপণন ব্যবস্থা না থাকায় মধ্যস্বত্ত¡ ভোগীরা লাভের বড় অংশ লোফে নেন। তাই জেলায় আম সংরক্ষণাগার করা হলে আম সংরক্ষণ করে পরবর্তী সময়ে বিক্রি করলে অধিক পরিমাণ লাভ হবেন তারা। জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময় অনুযায়ী গত ২৫মে থেকে গুটি জাতের আম নামানো মধ্যে দিয়ে জেলায় আম পাড়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জাতের জাতের আম নামানো হবে।
জেলার পতœীতলা উপজেলার আম চাষী রানা হোসেন বলেন, আম নামানো শুরু হয়েছে ২৫মে থেকে। প্রতি বছর প্রচুর পরিমানে আম উৎপাদন হয়ে থাকে। শুরু ও শেষের দিকে আমের দাম ভালো পাওয়া যায়। সরকারি বা বেসরকারি ভাবে জেলায় কোন হিমাগার নেই। আম সংরক্ষণের জন্য যদি একটি হিমাগার থাকতো, তবে সেখানে আম সংরক্ষণ করে সুবিধামত সময়ে বিক্রি করা গেলে লাভবান হওয়া যেত।
সাপাহার উপজেলার আইহাই গ্রামের আমচাষী আপেল মাহামুদ বলেন, যদি হিমাগার থাকতো তাহলে সেখানে ২০-৩০দিন রেখে আমগুলো বিক্রি করা যেত। এক্ষেত্রে দ্বিগুন লাভবান হওয়া যেত। কারন অনেক সময় আমের দাম কমে যায়। সরকারের কাছে জোড় দাবি একটি হিমাগার যেন স্থাপন করা হয়।
রাণীনগর উপজেলার আমচাষী মোস্তাক আহমেদ বলেন দিন দিন আমাদের অঞ্চলগুলোতেও আম চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন নতুন আম বাগান সৃজন হচ্ছে। তাই কৃষকদের উৎপাদিত আমগুলো সংরক্ষণের জন্য জেলায় যদি একটি আম সংরক্ষনাগার তৈরি করা হতো তাহলে জেলার আমচাষীরা আরো বেশি লাভবান ও উপকৃত হতেন।
পোরশা উপজেলা সদরের আম চাষী রেজাউল করিম বলেন, আম কিন্তু দ্রুত পচে যায়। আবার ঝড়-বৃষ্টি হলে বা ব্যবসায়ী কিনতে না চাইলে আম নষ্ট হয়ে যায়। সেই পরিস্থিতিতে আম যদি কিছু দিনের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা যেত তাহলে পরবর্তী সময়ে বিক্রি করলে কিছুটা লাভবান বেশি হওয়া সম্বব। সরকারের উচিত হিমাগার দ্রুত স্থাপন করা।
সাপাহারের গুডাউন পাড়ার বরেন্দ্র এগ্রো পার্কের উদ্দ্যোক্তা ও আম চাষী মো. সোহেল রানা বলেন, আমি নিজেও প্রতি বছর দেশের ও দেশের বাহিরে আম পাঠিয়ে থাকি। বেশ কয়েক বছর থেকে নওগাঁয় প্রচুর পরিমানে আমের আবাদ হচ্ছে। আম সংরক্ষণাগার বা হিমাগার নেই। হিমাগার থাকলে আমাদের মত আম চাষীরা কিছুদিন আমগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে পারতাম। অন্যান্য ফসল কিন্তু সংরক্ষণ করে রাখা যায়। যদি আম সংরক্ষণ করে রাখার জন্য হিমাগার থাকতো তাহলে খুব সুবিধা হতো আম চাষিদের জন্য।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, নওগাঁয় প্রচুর পরিমানে আমের আবাদ হচ্ছে এবং প্রতি বছর আমের বাগান সম্প্রসারিতও হচ্ছে। চলতি মৌসুমেও আমের ব্যাপক চাষ হয়েছে। যদি হিমাগার স্থাপন করা যায়, তাহলে জেলার আম সংরক্ষন করে চাষিরা আম সংরক্ষন করতে পারবেন। তার পর কিছুদিন আম হিমাগারে রেখে বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন। একটি হিমাগার খুবই প্রয়োজন জেলায়। আমরা বিষয়টি নিয়ে কৃষি অধিদপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জেলায় আম সংরক্ষণাগার বা হিমাগার স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা করবো।
জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, নওগাঁর আম দেশ ও বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। আম চাষীদের সব ধরনের সহায়তা ও পরামর্শ আমরা দিয়ে যাচ্ছি। চাষীদের উৎপাদিত আম সংরক্ষনের জন্য একটি আম সংরক্ষনাগারের প্রয়োজন। জেলার কৃষি বিভাগের সাথে আলোচনা করে আগামীতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
নওগাঁ-১ (পোরশা-সাপাহার-নিয়ামতপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, নওগাঁর সাপাহারকে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই উপজেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। গড়ে উঠবে জুস কারখানা। যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। এতে করে আম চাষিরা আরও ভালো দাম ও লাভবান হবেন। অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এর আশেপাশে জেলার পোরশা, নিয়ামতপুর, পতœীতলা, ধামইরহাট, মহাদেবপুর উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কয়েকটি উপজেলার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। যেখানে সাপাহারসহ আশেপাশের উপজেলার হাজারো বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এতে উপজেলার আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি জীবনযাত্রায় উন্নয়নের জোয়ার বইবে। আমরা আশা করছি অচিরেই আম চাষিদের আম সংরক্ষণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে হিমাগার গড়ে তোলা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।