Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাচারের টাকা বৈধতার সুযোগ অগ্রহণযোগ্য

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সিপিডি মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ রাখা সম্ভব নয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০২২, ১২:০৫ এএম

বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক-তিনভাবে অগ্রহণযোগ্য বলছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলেছে, পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার বৈধতা দিলে যারা নিয়মিত কর দেন, তারা হতাশ হবেন। যারা সৎভাবে ব্যবসা করছেন, তারা কর দিতে নিরুৎসাহিত হবেন। পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগকে সিপিডি সমর্থন করে না। প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ওপর পর্যালোচনা তুলে ধরে সিপিডি আরও বলেছে, আগামী অর্থবছর সরকার মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। কিন্তু কোন জাদুবলে এ লক্ষ্য অর্জিত হবে অর্থমন্ত্রী তা বলেননি। বাজেট ঘোষণার পরের দিন গতকাল শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ পর্যালোচনা করেন সিপিডির গবেষকরা।

এ প্রসঙ্গে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এর আগেও দেখা গেছে বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু খুব কমসংখ্যকই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছে। এবার পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক-তিনভাবেই অগ্রহণযোগ্য।

পি কে হালদারের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, এই ঘোষণার পর বিদেশে পালিয়ে থাকা কেউ একজন যদি কর দিয়ে টাকা নিয়ে আসতেন তাহলে কি করা যেত? তবে এ সুযোগ খুব একটা কাজে আসবে না বলে মনে করেন তিনি। বরং ভবিষ্যতে টাকা আরও পাচার হওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ সময়ে কেউ টাকা দেশে ফেরত আনবে না।
মূল প্রবন্ধে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমান চড়া মূল্যের বাজরে অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার যে প্রাক্কলন করেছেন তা বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিল নেই। সরকারি হিসাবেই এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের দাম বাড়ছে। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করার পর থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বাড়ছে।

আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কীভাবে কমে যাবে সে বিষয় নিয়ে বাজেটে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজেটে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির হিসাব কীভাবে এলো, এটা কীভাবে কমবে তা বলা হয়নি।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অর্থমন্ত্রী অসুখের লক্ষণ ধরতে পেরেছেন কিন্তু ওষুধ প্রয়োগের যে ওষুধ দরকার হয় তার কাছে পর্যাপ্ত নেই, বা ওষুধ জানা নেই অথবা যে মাত্রায় ওষুধের ডোজ দেওয়ার করা দরাকার সে মাত্রায় প্রয়োগ হয়নি। যে চ্যালেঞ্জগুলোর কথা বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন সেটির সাপেক্ষে যে ধরণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার, আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটা অপ্রতুল বা অপর্যাপ্ত দেখতে পেয়েছি।

তার মতে, এখন এমন একটি সময় যাচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেয়ে, মূল্যস্ফীতি জনিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কেননা আমরা জানি এটি বাহির থেকে আগত। মূল্যস্ফীতি জনিত অভিঘাত গুলো আসছে বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষের উপর তার উপরে দৃষ্টি দেওয়া উচিত ছিল।

তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাবগুলো তার মধ্যে ছিল কর মুক্ত আয় সীমা বাড়ানো। দরিদ্র নয় কিন্তু সীমিত আয়ের মানুষ তাদের কে কিছুটা আয়ের সাশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। দ্বিতীয় একটা দিক ছিল সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়ানো। দুর্ভাগ্যবসত বাড়ানো তো হয়নি, অনেকক্ষেত্রে বাজেটে বরাদ্দ কমানোর ঘোষণা রয়েছে। এটা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে ওষুধের ডোজের ক্ষেত্রে এখানে বড় সমস্যা রয়েছে।

এই গবেষক আরও বলেন, সাবসিডির ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা করা হবে অর্থমন্ত্রী সেখানে ঠিক ডোজই নিয়েছেন, সেখানে সাবসিডি বাড়িয়েছেন। সাথে এটাও বলছেন পুরোটুকু সাবসিডি তিনি বিদ্যুৎ বা জ্বালানীখাতের মূল্য সম্বনয় না করে তিনি থাকতে পারবেন না। তার মানে হচ্ছে ভোক্তা পযায়ে জ্বালানী ও তেলে মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা আসতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা জোরালোভাবে বলতে চাই, এখন যে পরিস্থিতি তাতে জ্বালানীর মূল্য বাড়লে ভোক্তার প্রকৃত আয়কে আরও কমিয়ে দেওয়ার প্রকৃত সময় নয়। যদি জ্বালানী সাশ্রয় গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট দেখা, জ্বালানী তেলের উঠানামার বাজেট টি দেখা, অন্তত ৬ মাসকাল পরে এই ধরে এইধরণের মূল্য সংক্রান্ত বিষয়টি যেনো অর্থমন্ত্রী বিবেচনা করেন। তার আগে যেনো বিষয়টি না হয়।

কোভিডের কারণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে ক্ষতি হলেও বাজেটে এর বরাদ্দ কমেছে। বলা হয়েছে ডলারের মার্কেটে ভারসাম্য আনা হবে কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যে ওষুধ সাজেস্ট করা হয়েছে এটা একটি ভুল ওষুধ। বাইরে পাচার হওয়া টাকা করের মাধ্যমে দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হলে তা ইতিবাচক হবে না। এটা যারা সৎ করদাতা ও কর ব্যবস্থায় যারা বিশ্বাস করেন তাদের প্রতি স্রেফ চপেটাঘাত বলেও মন্তব্য করেছেন গোলাম মোয়াজ্জেম।
বাজেটে বিত্তশালীদের জয় হয়েছে জানিয়ে সিপিডি সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, আসলে সম্পদশালী, বড় উদ্যোক্তা, টাকা পয়সা বাইরে পাচার করেছেন তাদের জয়টাই বেশি দেখা যাচ্ছে। সেই অর্থে গরীব মানুষের জন্য বর্ধিত হারে সুযোগ সুবিধা আসেনি। সবচেয়ে বড় উপেক্ষিত জনগোষ্ঠি হলো মধ্যবিত্ত। কর ছাড়ের বিষয়টা সেখানে আসে নাই। তিনি কোভিডের সুরক্ষা সামগ্রী ও প্রযুক্তি পণ্যের উপর বাড়তি কর প্রয়োগের সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, সরকার ধরে নিয়েছে কোভিড চলে গেছে। কোভিড চিকিৎসা সামগ্রীর উপর তাড়াহুড়া করে কর আরোপের দরকার ছিলনা। আরেকটা ওয়েভ আসলে সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ