জাতীয় বাজেট পেশের ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি চতুর্থ বাজেট। তিনি বাংলাদেশের ১৩তম অর্থমন্ত্রী হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেছেন। জাতীয় সংসদ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ (বাজেট) অধিবেশনে জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি তার ব্যক্তিগতভাবে চতুর্থ এবং দেশের ৫২তম বাজেট। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং তারও আগে বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে সাইফুর রহমান সর্বোচ্চ ১২টি করে মোট ২৪টি বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় স‚ত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রথম ২০১৯ সালের ১৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত দ্বিতীয় বাজেট ২০২০ সালের ১১ জুন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত তৃতীয় বাজেট ২০২১ সালের ৩ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে করোনা মহামারির ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এ দুটি বাজেট খুবই সংক্ষিপ্ত করে উপস্থাপন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। এমনকি এ দুই বছর তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন করেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রথম বার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি, দ্বিতীয় বার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি এবং তৃতীয় বার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এবছর জাতীয় সংসদে তাঁর চতুর্থ বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয় স‚ত্রে জানা গেছে, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছর পর্যন্ত ৫২ বছরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরাই এই বাজেট পেশ করেছেন। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছাড়াও কখনও দেশের প্রধানমন্ত্রী, কখনও উপদেষ্টা, কখনও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, আবার কখনও প্রেসিডেন্ট নিজেই এই বাজেট ঘোষণা করেছেন।

এ পর্যন্ত ১৩ জন মোট ৫১টি বাজেট পেশ করেছেন। তারা হলেন- তাজউদ্দীন আহমদ, ড. আজিজুর রহমান, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, ড. এম এন হুদা, এম. সাইফুর রহমান, আবুল মাল আবদুল মুহিত, এম সায়েদুজ্জামান, মেজর জেনারেল এম এ মুনিম, ড. ওয়াহিদুল হক, শাহ্ এএমএস কিবরিয়া ও ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ও আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জানা গেছে, এদের মধ্যে তাজউদ্দীন আহমদ অর্থবছর ১৯৭২-৭৩, ১৯৭৩-১৯৭৪ ও ১৯৭৪-১৯৭৫ মোট তিন বার, ড. আজিজুর রহমান অর্থবছর ১৯৭৫-৭৬ মোট একবার, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান অর্থবছর ১৯৭৬-১৯৭৭, ১৯৭৭-১৯৭৮ ও ১৯৭৮-১৯৭৯ মোট তিন বার, ড. এম এন হুদা অর্থবছর ১৯৭৯-১৯৮০ মোট এক বার, এম. সাইফুর রহমান ১৯৮০-১৯৮১ ও ১৯৮১-১৯৮২ অর্থবছর দুই বার ও ১৯৯১-১৯৯২, ১৯৯২-১৯৯৩, ১৯৯৩-১৯৯৪, ১৯৯৪-১৯৯৫, ১৯৯৫-১৯৯৬ পর্যন্ত পাঁচ বার ও অর্থবছর ২০০২-২০০৩ থেকে ২০০৩-২০০৪, ২০০৪-২০০৫, ২০০৫-২০০৬, ২০০৬-২০০৭ পর্যন্ত মোট পাঁচ বারসহ মোট ১২ বার, আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থবছর ১৯৮২-১৯৮৩ ও ১৯৮৩-১৯৮৪ মোট ২ বার ও অর্থবছর ২০০৯-২০১০, ২০১০-২০১১, ২০১১-২০১২, ২০১২-২০১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫-সহ মোট ৬ বার এবং ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটসহ তিনি মোট ১২ বার বাজেট পেশ করেন।

এম সায়েদুজ্জামান অর্থবছর ১৯৮৪-১৯৮৫, ১৯৮৫-১৯৮৬, ১৯৮৬-১৯৮৭ ও ১৯৮৭-১৯৮৮ মোট চার বার, মেজর জেনারেল এম এ মুনিম অর্থবছর ১৯৮৮-১৯৮৯ ও ১৯৯০-১৯৯১ পর্যন্ত মোট ২ বার, ড. ওয়াহিদুল হক অর্থবছর ১৯৮৯-১৯৯০ মোট একবার, শাহ্ এএমএস কিবরিয়া অর্থবছর ১৯৯৬-১৯৯৭, ১৯৯৭-১৯৯৮, ১৯৯৮-১৯৯৯, ১৯৯৯-২০০০, ২০০০-২০০১ ও ২০০১-২০০২ পর্যন্ত মোট ৬ বার ও ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম অর্থবছর ২০০৭-২০০৮ ও ২০০৮-২০০৯ এই দুই বার বাজেট পেশ করেন। এছাড়া ২০১৯-২০,২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরসহ মোট তিন বার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘লোটাস কামাল’ হিসেবে পরিচিত। কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা ইউনিয়নের দত্তপুর গ্রামের অভাবী পরিবারের আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য গতকাল জাতীয় সংসদে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন। দেশের ৫১ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই বাজেটকে সুচিন্তিত এবং স্মাট বাজেট হিসেবে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিস্টরা।