Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মলমপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ৪৪ গ্রেফতার

বাসে-লঞ্চে ‘পানীয়’ খাইয়ে সর্বস্ব লুট, গলিতে ছিনতাই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

 রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ মলমপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ সময় অজ্ঞান ও ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত বিষাক্ত মলম ও দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীর লঞ্চঘাট, বাস-স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা ঘোরাফেরা করে। সাধারণ যাত্রীদের টার্গেট করে ডাব, কোমল পানীয় কিংবা পানির সঙ্গে বিষাক্ত চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ায়। আবার কখনও যাত্রীবেশে লঞ্চ, বাস ও ট্রেনে চড়ে যাত্রীদের পাশে বসে তাদের নাকের কাছে চেতনানাশক ওষুধে ভেজানো রুমাল দিয়ে যাত্রীদের অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
গত বুধবার টিকাটুলি র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী ও পথচারী অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এসব ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই কোন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হন না। ফলে সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা দিন দিন বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের প্রায় সবাই মাদকাসক্ত। র‌্যাব অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। গত মঙ্গলবার ৭ জুন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত র‌্যাব-৩ এর কয়েকটি দল একযোগে রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ ও খিলগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের ৪৪জন সদস্যদের গ্রেফতার করে। এ সময় সুইচ গিয়ার চাকু ৫টি, চাকু ৩টি, ক্ষুর ৪টি, অ্যান্টিকাটার ৩টি, তার ১টি, বেøড ২টি, গামছা ৪টি, বিষাক্ত মলম ১৯টি, মোবাইল ফোন ১৫টি, সিম কার্ড ১৪টি, গাঁজা ৭৬০ গ্রাম এবং নগদ ১৪ হাজার ৬০৫ টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাজধানীর লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ভিড়ের মধ্যে যাত্রীদের চোখে-মুখে বিষাক্ত মলম বা মরিচের গুড়া বা বিষাক্ত স্প্রে করে যাত্রীদের যন্ত্রণায় কাতর করে সর্বস্ব কেড়ে নেয় তারা। কোন সহৃদয় ব্যক্তি অজ্ঞান বা অসুস্থ যাত্রীকে হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। চেতনানাশকের পরিমাণ বেশি হলে ভুক্তভোগীর জ্ঞান ফিরতে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে থাকে। অনেকে মৃত্যুবরণ করেন।
অন্যদিকে ভুক্তভোগীর চোখে-মুখে বিষাক্ত মলম লাগানোর ফলে তার দৃষ্টিশক্তি চিরতরে হারানোর সম্ভাবনা থেকে যায়। অজ্ঞানপার্টির শিকার ভুক্তভোগীর চেতনা না থাকায় তিনি পরিবারের সঙ্গে জ্ঞান ফেরার পূর্ব পর্যন্ত যোগাযোগ করতে পারেন না। এ সময়ে ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন। তারা স্বজনদের খোঁজে দিশাহারা হয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। এসব অজ্ঞানপার্টির সদস্যদের ভুক্তভোগীরা খুব কম ক্ষেত্রেই শনাক্ত করতে পারেন। ফলে এসব অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা নির্বিঘেœ তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা রাজধানীর বিভিন্ন অলি গলিতে ওত পেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়।

অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনার ফলে পথচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসবে দাবি করে র‌্যাব-৩ সিও বলেন, রাজধানীবাসী এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে আসা যাত্রীরা যাতে নিরাপদে দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পন্ন করে নির্বিঘেœ স্বস্তির সঙ্গে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন সে জন্য সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ